বিগত ১৪ বছরে টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি খাতে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ ২০১০ সাল থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বিগত ১৪ বছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি।আজ সোমবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সভাকক্ষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপি পর্যালোচনা সভায় এই তথ্য জানানো হয়।ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ডা. মো. মুশফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে পর্যালোচনা সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ২০১০ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, কিন্তু এর ফল পায়নি দেশের মানুষ। তিনি বলেন, প্রায় সব জায়গায় দেখা গেছে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ হয়নি, এক দু বার সময় বাড়ানোর পরে আবারও সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হয়। তাই এখন যেসব প্রকল্পের সময় বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে তা যেন বুঝে শুনে বাড়ানো হয়।টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি খাতে ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ নিয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এর পরও জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন এর আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স এর জুন, ২০২৪ অনুযায়ী বাংলাদেশ ১০০ মধ্যে ৬২ স্কোর করেছে। এক্ষেত্রে মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম ও ভুটানের পরে বাংলাদেশের অবস্থান। ওকলা স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স মে, ২০২৪ এর ইন্টারনেট গতির তালিকায় ১৪৭ দেশের মধ্যে ইন্টারনেট সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। এক্ষেত্রে কেনিয়াও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে, পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সূচকেও বাংলাদেশের অবস্থান ১০৮তম, তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, রুয়ান্ডা, ঘানাও বাংলাদেশের উপরে।

আইএমএফ এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রস্তুতি সূচকে জুন, ২০২৪ পর্যন্ত ১৭৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৩তম, তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, রুয়ান্ডা, ঘানাও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সার্ফশার্ক ডিজিটাল কোয়ালিটি অব লাইফ ইনডেক্স ২০২৩ এর ডিজিটাল জীবনমান সূচকে বিশ্বের ১২১টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮২তম। এক্ষেত্রে আগের বছরের চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়েছে পাঁচ ধাপ। সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে ৫% কম। কি গভর্মেন্ট সূচকে বাংলাদেশ তালিকার ৭৩ এ যা বৈশ্বিক গড়মানের নিচে, ই সিকিউরিটি র‌্যাংকিংয়ে ৮৫তম স্থানে এবং ইন্টারনেট ক্রয় ক্ষমতার হিসেবে ৭৭তম অবস্থানে।মার্কিন সাময়িকী সিইও ওয়ার্ল্ডের এপ্রিল ২০২৪ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সিংয়েও পিছিয়ে বাংলাদেশ সেখানে সেরা গন্তব্যের ৩০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৯ নম্বরে। তালিকায় ভারত, পাকিস্তানের পর বাংলাদেশের অবস্থান।এই সকল সূচক দেখলে ঠিকভাবে প্রতীয়মান হয় ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রকৃত সুযোগ সুবিধা দেশের জনগণ পায়নি বরং এক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো ঠিক মতো শেষ করতে পারলে বাংলাদেশে ইন্টারনেট এবং টেলিযোগাযোগ খাতে অনেক অগ্রগতি হবে যার সুফল দেশবাসী ভোগ করবে।

প্রকল্পের ব্যয় কমানো, দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার, সফটওয়্যারে সবসময় প্রকল্পের আপডেট দেওয়ার এবং সময়মতো প্রকল্প শেষ করার বিষয়েও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।সভায় জানানো হয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের চারটি দপ্তরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট নয়টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বিটিসিএল পাঁচটি, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড একটি, ডাক অধিদপ্তর দুটি এবং বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল পিএলসি একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সার্বিকভাবে প্রকল্প পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত জাতীয় অগ্রগতি ১.০২ শতাংশ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অগ্রগতি ৩.৮৪ শতাংশ।সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দপ্তর ও সংস্থার প্রধান এবং প্রকল্প পরিচালকরা নিজ নিজ প্রকল্পের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ও সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরেন।

You might also like