বিজিএস এর বাগানীদের উৎসব ও বীজ মেলা অনুষ্ঠিত
ব্যারিস্টার এমকিউ হাসান
সত্যবাণী
লন্ডন: “আমরা বাগানী বাগান করি প্রবাসে,
আমরা বাগানী বাগান করি মনের লাঙলে।”
গত ৪ ফেরুয়ারি রোববার মে ফেয়ার ভেনুতে বিজিএস এর আয়োজনে সারাদিনব্যাপি অনুষ্ঠিত হলো “বাগানীদের উৎসব এবং বীজ মেলা ২০২৪”।
মেলায় আগত দর্শণার্থী নারী, পুরুষ, শিশু প্রায় সবাই একই নকশা করা সবুজ শাড়ী এবং পাঞ্জাবী পরিধান করে মেলাকে করেছিল প্রাণবন্ত, উৎসবমূখর।
ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের জন্য বাগান করা হল তাদের শিকড় এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়ের সাথে সংযুক্ত থাকার একটি উপায় এবং বীজ, চারা ও সবজি ভাগাভাগি হলো ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য। অনেক পরিবারের জন্য সবজি চাষ করে তাজা পণ্য পাওয়া একটি সস্তা এবং সুবিধাজনক উপায় হয়ে উঠেছে। সবুজ প্রেমী বাগানীদেরকে বাগান করার জন্য উৎসাহিত করা এবং তাদেরকে বাগান করার জ্ঞান ভাগাভাগি করার জন্য এই আয়োজন। এছাড়াও বাচ্চাদেরকে বাগানের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য বাচ্চাদেরকে বাগানী রাষ্ট্রদূত হিসাবে পুরস্কৃত করা হয়।
সবুজপ্রেমী, স্বাপ্নিক মনের ভালবাসার পরশে বিলেতের মাটিতে নিজ আঙ্গিনায় অথবা এলটমেন্টের প্লটে দেশীয় শাক-সব্জি, ফল-ফুলের বাগান করতে সবাইকে উৎসাহ ও বুদ্ধি-পরামর্শ দেবার নিমিত্তে একদল ‘বাগানী’ অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তুলেছেন ‘বাংলাদেশী গার্ডেনার্স সোসাইটি (বিজিএস)।
মেলায় আগতরা ফ্রী বীজ এর সাথে বাড়তি পেয়েছেন ‘রাঁধুনী’র বিভিন্ন উপহার সামগ্রী। মেলায় ফ্রী বীজ বিতরণ ছাড়াও ছিল শিশুদের চিত্রাঙ্গণ, নাচ, গান, আবৃত্তি, গীত নাট্য, বিজিএস হিডেন ট্যালেন্টদের গান, রাফেল ড্র, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পিঠা, খাবার, সবজী ও পোষাকের স্টল।
বীজ মেলার উদ্দেশ্য হলো বাগানপ্রেমীদের পারস্পারিক যোগাযোগের মাধ্যমে সব্জী ফলনে সহায়তা এবং বীজের চাহিদা পূরণ। এক বাগানীর কাছে হয়তো দু-তিন রকমের সব্জী বীজ রয়েছে, আবার অন্য অনেকের কাছে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন শাক, ফল ও ফুলের বীজ। যাঁদের কাছে বীজ বা সীডস আছে তাঁরা পোস্টের মাধ্যমে বা স্বশরীরে এসে বীজ, চারা প্রকৃতিপ্রেমী বিজিএস এর সিড ব্যাংক এর সদস্যদের সহযোগিতায় পরস্পরের মধ্যে বিনিময় করে থাকেন। এতে শখের বাগানীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও যোগাযোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির সুযোগে বিজিএস এর কার্যক্রম যুক্তরাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী।
বাংলাদেশ গার্ডেনার্স সোসাইটির বেশীরভাগ সদস্য লন্ডনের হলেও যুক্তরাজ্যের অন্যান্য শহর এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে ১২ হাজারেরও বেশি সদস্য।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে করোনাকালে ২০২০ এ প্রতিষ্ঠিত সংগঠন বিজিএস ইতোমধ্যে তাদের নানামুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
বীজ মেলা উপলক্ষে বিজিএস এর পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয় গার্ডেনার্স ডাইজেস্ট। এতে স্থান পেয়েছে সফলভাবে সব্জি ফলানো, ফসলের রোগ-বালাই দূরীকরণের পরামর্শ, কবিতা, মজার মজার গল্প এবং বাগানীদের বিভিন্ন কার্যক্রমের সুন্দর সুন্দর ছবি। মেলায় আগত সকল বাগানীরা বীজের গুডি ব্যাগের সাথে উপহার হিসেবে পেয়েছেন কোন মাসে কি ফসল ফলাতে হবে তার দিক নির্দেশনাসহ চমৎকার ক্যালেন্ডার। এই ক্যালেন্ডার স্পনসর করেছেন বেনেকো ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস, মাহবুব এন্ড কোম্পানী একাউনটেন্ট এবং এমকিউ হাসান সলিসিটরস।
বিজিএস এর মেম্বারদের বাগান করার ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য বিজিএস এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে এওয়ার্ড প্রদান করা হয় তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য।
ক্যাটাগরী ১ঃ
সর্বাধিক সক্রিয় এবং শীর্ষ অবদানকারী বাগানকারী ২০২৩:
১.ব্যারিষ্টার মোহাম্মদ কামরুল হাসান
২.হামিদা শুমি
৩.জয়শ্রী দত্ত
৪.জোহোরা চৌধুরী
৫.পলাশ লুফতুর রহমান
ক্যাটাগরী ২ঃ
সবচেয়ে উন্নত মালী ২০২৩:
১.আরিফ ইসলাম
২.সাহিদা আক্তার ফুলন
ক্যাটাগরি ৩ঃ
সেরা মালী ২০২৩:
১.শহীদ রহমান
২.রাশেদা বকুল
বাগান করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াসে বাংলাদেশী গার্ডেনার্স সোসাইটির সঙ্গে যারা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন তাঁরা হলেন সরকার মুকুল, সাঈদ সুমন, মাহবুব মোর্শেদ, আনোয়ার এইচ খান, ইকবাল হোসেন , ডেইজী সাঈদ , মৌসুমী শাহানাজ, মাহমুদ টিংকু , আরিফ, তুষি, জয়তী পাল, জয়শ্রী দও, জেসমিন চৌধুরী, জয়া রহমান, লুনা রাহনুমা, মাসুদা, রেজেকা, নূরজাহান, পারভেজ, জাভেদ, উর্মি রহমান, ফারজু হোসেন, জোহরা চৌধুরী, খায়রুল আনাম , ফারজানা রিমু এবং ব্যারিষ্টার মোঃ কামরুল হাসান সহ শতাধিক সক্রিয় সদস্য।
বিজিএস এর বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘বাগানীর স্বাস্থ্য’, ‘সবুজ বনাম অবুঝ’, ‘প্রকৃতি পরিবেশ ও প্রজন্ম’। এছাড়াও বিজিএস সামারে একটি চারা মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছে যা গত বছরও হয়েছিল ফেয়ার লুপ পার্কে।
গ্রীন শেলটার নামে একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগী হিসেবেও বিজিএস বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
গত বছর বিজিএস এর পক্ষ থেকে সদস্যদেরকে ডাকযোগে চাহিদা মত বীজ পাঠিয়েছে। এবারো মেলায় উপস্থিত হয়ে যাঁরা সব্জি ফলানোর ফ্রি বীজ সংগ্রহ করতে পারেননি তাঁদেরকে ডাকযোগে বীজ প্রেরণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আগত বাগানী ও দর্শকরা আনন্দ উপভোগ করার পাশাপাশি পেয়েছে রাঁধুনী’র উপহার সামগ্রী।
ব্যতিক্রমধর্মী বীজ মেলার আয়োজন ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সাফল্যমন্ডিত করতে বিজিএস এর সক্রিয় সদস্যবৃনদের সারা বছরব্যাপী অক্লান্ত পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে দর্শনার্থীরা প্রশংসা করেছেন।