বিদায় বন্ধু আজিজ আহমদ সেলিম
সৈয়দ নাহাস পাশা
বন্ধু তুমি এভাবে কাঁদিয়ে এতো তাড়াতাড়ি না ফেরার দেশে চলে যাবে কখনো ভাবিনি। যদিও সচরাচর কোন কাজ ছাড়া তোমার সাথে কথা হয়না কিন্তু সব খবরই কোন না কোনভাবে পেয়ে যাই। সাংবাদিক হওয়ার সুবিধাই এটা। ফেইসবুকে টুকটাক বাটন টিপাটিপি ছাড়া খুব একটা যোগাযোগ নেই। এরমানে নয় যে আমাদের মধ্যে বন্ধুভালবাসার কোন ঘাটতি। সিলেটে গেলে তোমার সাথে আলাপ করতে ভুলিনি কখনো। তাও ইদানিং কালে ঢাকা গেছি কয়েকবার সিলেটে যাওয়া হয়নি দুই বছর যাবত।সর্বশেষ তোমার সাথে ভিডিওতে কথা বলেছি ২০ জুন প্রায় আধাঘন্টা। লকডাউনে আকার্ইভ ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে প্রায় ২০ বছর আগের কয়েকটি ছবি পেলাম। তুমি এসেছিলে লন্ডনে তখন অনেক ঘুরেছি সে স্মৃতিটুকু তোমার মনেই দীর্র্ঘস্থায়ী ছিল সেটি জানতাম। আমি ফোন করেছিলাম খোশগল্প করার জন্য এবং এই করোনাকালে কেমন আছ তা জানার জন্য। তুমি বলেছিলে ভাল আছ এবং সার্বিক করোনা পরিস্থিতির একটা মোটামুটি ধারাবিবরণী দিয়েছিলে। তখনও ভাবতে পারিনি এই করোনা দানব তোমার উপর হানা দিবে। তুমি খুটিয়ে খুটিয়ে আমাদের পরিবারের সবার কথা জিজ্ঞেস করেছো। “বেলাল কেমন আছে, তোমার ছেলে মেয়েরা কে কি করছে, জগলুল ভাইয়ের (আমার বড় ভাই) সাথে প্রায়ই দেখা হয়” ইত্যাদি ইত্যাদি। পুরানো দিনের কথা প্রসঙ্গে তুমি বলেছো মিলুর কথা। মিলু মাঝে মাঝে পুরানো ছবি ফেইসবুকে ছাড়ে বলে প্রশংসা করেছো তার। ছবিতে আমার উপস্থিতি আছে তাও বলেছো।Milu Kashem। মিলু ১৯৮০ সালে আমাদের শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে যাওয়ার একটি ছবি ফেইসবুকে ট্যাগ করেছে। আমি তখন লন্ডন থেকে কয়েকদিনের জন্য দেশে গেছি। হুট করে চার বন্ধু মিলে শ্রীমঙ্গল শহরে সিলেট থেকে বেড়াতে যাওয়া, রাত্রি যাপন, চা বাগান ঘুরে বেড়ানো, ষ্টেশনের পাশে একটি রেস্তারায় খাবার দাবারের পর হৈহুল্লোড়, আহা কি আনন্দ! নুরুজ্জামান মনি এখন মানচেষ্টারে, মিলু সিলেটে, আর আমি লন্ডনে। চার খুটির একটি খুটি ভেঙ্গে পড়েছে আর পুরো টেবিলটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে ! Nuruzzaman Moni। বন্ধু আমার চোখের জল টপ টপ করে পড়ছে। ভাল থাক পর পারে। শান্তিতে থাক।
আজিজ আহমদ সেলিম আমার বন্ধু কবে থেকে দিন তারিখ সাল কিচ্ছু মনে নেই। ৭০ দশকের মাঝামাঝি সেই সপ্তাহিক যুগভেরী কেন্দি্রক আড্ডা থেকেই শুরু। কত স্মৃতি আমাদের তার কোন ইয়ত্তা নেই। সে সময়কার আড্ডার বন্ধুদের মধ্যে ফজলুল করিম চৌধুরী অপু (লন্ডনে) হামিদ মোহাম্মদ (লন্ডনে), মাহবুব ভাই নিউইয়র্কে। শুনেছি সাহিত্যাঙ্গনের আরেক বন্ধু তুষারদা (ছড়াকার তুষার কর) অসুস্থ। তিনি ভাল হয়ে উঠুন এই প্রার্থনা করি।
১৯৯৭ বা ১৯৯৮ সালে আজিজ আহমদ সেলিম লন্ডনে বেড়াতে এসেছিলেন। কিছুদিন লন্ডনে থেকেছেন। সে সময়েরও অনেক স্মৃতি।
মহান আল্লাহতালার কাছে আজিজ আহমদ সেলিমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। তার শোক সন্তপ্ত পরিবারকে শোক সওয়ার শক্তি যেন আল্লাহ দেন এই দোয়া করি।
সৈয়দ নাহাস পাশা: সাংবাদিক, সম্পাদক, সাপ্তাহিক জনমত