‘বিদেশী চাপে নির্বাচনে শেখ হাসিনার পরাজয় হলে বাংলাদেশে সংগঠিত হবে গৃহযুদ্ধ দেশ পিছিয়ে যাবে এক‘শ বছর’
মতিয়ার চৌধুরী
সত্যবাণী
লন্ডনঃ আসছে দ্বাদশ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পরাজয় হলে বাংলাদেশ দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার সম্মুখীন হবে বলে এমন আশংকার কথা তুলে ধরেছেন সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও বিদেশী উন্নয়ন বিষয়ক পন্ডিত প্রণয় শর্মা । এ আশংকা শুধু প্রণয় শর্মারই নয়, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও এমনটি মনে করছেন। গবেষাণা ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও লবিংয়ের কারণে বিদেশী চাপ দেখে নির্ধিধায় বলা যায় দেশ ও জাতির ভাগ্যে নেমে আসবে অন্ধকার, শুধু তাই নয় বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে এক‘শ বছর। দেশে শুরু হবে দাঙ্গা অরাজকতা।
ইতমধ্যেই জামাত-বিএনপি‘র একটি গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে। এই তথ্যমতে জানা যায় তারা সাংবাদিক-সুশিল, রাজনীতিক, সরকারী আমলা- পুলিশ আর্মি সহ দেশের গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর সদস্যদের একটি তালিকা করেছেন এই তালিকায় রয়েছেন প্রায় দেড়লক্ষাধীক। তারা ক্ষমাসীন হলে প্রথমে এদের প্রকাশ্যে হত্যা করবে শিবিরকর্মি ও উগ্রবাদিরা। এখানেই শেষ নয় বাংলা ভাইয়ের সময়েরমত দেশে প্রকাশ্যেই ঘটবে জঙ্গিবাদের উত্থান। আবারও দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গিগোষ্টী বিভিন্ন নামে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশসহ সমগ্র দক্ষিন এশিয়ায় এর প্রভাব পড়বে।অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত এত উদ্ভিগ্ন কেন? অবশ্যই ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমরা যদি অথিতের দিকে ফিরে থাকাই দেখা যায় চারদলীয় জোট সরকারের সময় যখন শিল্পমন্ত্রি নিজামী ও স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রি লুৎফুজজামান বাবর তখন বাংলাদেশর চট্রগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে আসামের বিচ্ছিহ্নতাবদি সংগঠন উলফার অস্ত্র চালান আটক করে বিপদে পড়তে হয়েছিল কাষ্টম ও পুলিশকে। চারদলীয় জোট সরকারের সময় দেশে ঘটে জঙ্গিবাদের উত্থান। চারদলীয় জোট সরকার বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে উলফা প্রধানসহ ভারতীয় বিচ্চিহ্নতাবদের আশ্রয় দিয়েছে।
পাকিস্থানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের পৃষ্টপোষকতায় গড়ে উটা লস্করী তৈয়বা-জয়সীমোহাম্মদ-বাংলাদেশের জেএমবি, ভারতের ইন্ডিয়ান মোজাহিদিন এবং বার্মার আর্শা মত জঙ্গিসংগঠন গুলোর লক্ষ্য সাউথ এশিয়ায় আফগান ষ্টাইলের রাজত্ব প্রতিষ্টা করা। এসব ভারত-এবং বাংলাদেশসহ সমগ্র সাউথ এশিয়ার জন্য হুমকী। বর্তমানে আফগানিস্থানে ক্ষমতায় রয়েছে তালেবান-পাকিস্তানে ইমরান খানকে সরিয়ে সেখানে যে ভয়াবহ পরিস্তির সৃষ্টিকরা হয়েছে। বাংলাদশে ক্ষতার পটপরিবর্ন হলে বাংলাদেশ এবং ভারতে এর প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের সময় ভারতীয় বিচ্ছিহ্নতাবাদীদের ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। জঙ্গি দমনে নিয়েছে জিরো টলারেন্স। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা রয়েছে।বিরোধীদের ওপর দমন পীড়নের অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।এ নিয়ে ভারতের ওপরেও যথেষ্ট চাপ রয়েছে কারণ শেখ হাসিনা সরকারকে ভারতের সবচেয়ে কাছের এবং একমাত্র নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।ভারত ঐতিহ্যগতভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ‘বড় শক্তি’ হিসেবে স্বীকৃত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই অবস্থান আরও শক্ত করেছে দেশটি। এবং এই অঞ্চলে ভারতকে চ্যালেঞ্জ করার মতো শুধু চীনই রয়েছে।
সম্প্রতি জো বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারায় বাধা সৃষ্টিকারীদের রুখতে এবং সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠ নিশ্চিত করতে একাধিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের বিষয়ে মার্কিন ভিসা নীতি অন্যতম। যারা সুষ্ঠ নির্বাচনে বল প্রয়োগ করবে তাদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকা এবং বাংলাদেশের সরকার বিরোধীদের অভিযোগ ২০০৯ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছিলো আধাসামরিক বাহিনী র্যাব।২০০৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারসাজি এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। যা তাকে একের পর এক বিজয়ের মাধ্যমে দেশটির দীর্ঘমেয়াদী নেতা বানিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিগত বছরগুলোয় তার দ্বারা আয়োজিত গণতন্ত্রের শীর্ষ সম্মেলনগুলো থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিয়েছেন। যদিও তিনি অন্যান্য দেশের সাথে পাকিস্তান ও ভারতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা যখন মে মাসে বিশ্বব্যাংকের বৈঠকে ওয়াশিংটনে যান তখন বাইডেন প্রশাসন তাকে উপেক্ষা করেছিলো। শেখ হাসিন বলছেন, বাইডেন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চাইছেন। সংসদে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমেরিকা তাদের স্বার্থের জন্য বিশ্বের যে কোন সরকারকে ছুঁড়ে ফেলতে পারে ।
মর্কিন নিষেধাজ্ঞায় কঠিন চাপে শেখ হাসিনার সরকারঃ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রধানমন্ত্রী হাসিনার রাজনৈতিক সুবিধার ওপর চাপ প্রয়োগের কারেন জিমিয়ে পড়া বিএনপি ও তালেবানপন্থিরা আবারও একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সভা সমাবেশ করছে। পাকিস্তানের মিত্র জামায়াতে ইসলামীকেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বেশ উৎসাহিত লক্ষ করা গেছে। কারণ শেখ হাসিনার শাসনামলে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। যদিও সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে তাদের নির্বাচনের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে আগেই। তবে সম্প্রতি জামায়াত নেতারা ঢাকায় একটি বড় সমাবেশের আয়োজন করে প্রতিদিনিই দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল সমাবেশ করছে । যা বিগত দশ বছর দেখা যায়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠ হলে আওয়ামী লীগের পতন হবেই’। প্রকৃতপক্ষে, জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য মৌলবাদী সংগঠনের সমর্থনে বিএনপি যদি বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসে তাহলে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতের অকৃত্রিম বন্ধু বালাদেশঃ প্রায় এক দশক ধরে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং শেখ হাসিনা আস্থার একটি দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। যার ফলে দুই দেশই উপকৃত। বিজেপি নেতাদের মুসলিম-বিদ্বেষী উপহাস উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ভারতের সাথে গভীর সম্পর্ক ধরে রেখেছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টির নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ভারত অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু কয়েক দশক ধরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সেই উজ্জ্বলতার অনেকটাই ক্ষয়ে গেছে। কারণ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসা সরকারগুলো ভারত বিদ্বেষীতা উস্কে দিয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে সেই বিদ্বেষের নিরসন করেন। তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে দিল্লিও ।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছেন যা সর্বজন স্বীকৃত। ১৮ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশ গত এক দশকে বার্ষিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হারে রেকর্ড করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রভাবশালী অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বহুলাংশে ভালো। বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ বিগত ৫০ বছরে প্রচুর অগ্রগতি করেছে। এটি এখন দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি দেশ। ২০২২ সালে, মহামারী এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের পর খাদ্য, জ্বালানী এবং সার সরবরাহে বাধার কারণে সৃষ্ট সঙ্কট মোকাবেলায় আইএমএফ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ যেটা তারা পেয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে।
ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটঃ ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, ভারত মহাসাগরের নিয়ন্ত্রণের জন্য নেতৃস্থানীয় শক্তিগুলোর মধ্যে চলমান ক্ষমতার লড়াইয়ে শেখ হাসিনা কারও পক্ষ নিতে সরাসরি অস্বীকার করেছেন। কারণ বাংলাদেশ ভারত মহাসাগরের অংশ বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। যেটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট জোন যেখান থেকে বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্যের আনুমানিক ৮০ শতাংশ চলাচল করে। একইসাথে বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের সাথে সমান সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হলো সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শত্রুতা নয়, সেই আদর্শকে ধারন করেই শেখ হাসিনার পররাষ্ট্রনীতি যেটা বাংলাদেশের সাথে অন্যান্য দেশের সমতা ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়ক। এবং সেটি হচ্ছেও।তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত ও চীনের যুদ্ধক্ষেত্র হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ। প্রত্যেকেই বাংলাদেশে তাদের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টায় লিপ্ত। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) বিরাজমান উত্তেজনা তাদের অবস্থানকে আরও শক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র নিজের উপস্থিতি জাহির করার জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ নেয়ায় এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। মার্কিন-চীন বৈরিতার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরেও পরিলক্ষিত হচ্ছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাহাব এনাম খান বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের যথেষ্ট বাণিজ্য স্বার্থ রয়েছে। কারণ আমেরিকা বাংলাদেশের পোশাকের বড় বাজারগুলোর মধ্যে একটি। মার্কিন ভিসানীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।আমরা যদি আরো পেছনে যই দেখতে পাব আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চীন-আমেরিকা কেউই আমাদের পক্ষে ছিলনা। আমাদের পাশে দাড়িয়েছিল ভারত-এবং সভিয়েত ইউনিয়ন। আমেরিকা যখন পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে সপ্তম নৌবর পাঠিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের হুমকীতে তা সরিয়ে নেয়। চীনও অনেক পড়ে আমাদের স্বীকৃতি দেয়। মিত্রদেশ ভারত এবং চীন বর্তমানে উন্নয়ন সহযোগী। সবার সাথে বন্ধুত্ব সেই আলোকে চীনের সাথে সম্পর্ক। ভারত সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী এবং বিপদের বন্ধু কখনোই ভারতের বিপক্ষে অন্তত আওয়ীলীর সরকারের যাওয়া সম্ভব নয় এবং যাবেনা। কিন্তু আমেরিকানরা তা মানতে পারছেনা। সাম্র্রাজ্যবাদী আমেরিকানরা তাদের নিজদের স্বার্থে যা ইচ্ছে তা করতে পারে। তারা যেমন তাদের স্বার্থে সিরিয়া-ইরাক-আফগানিস্থান এবং লিবিয়ায় যা করেছে। তাদের স্বার্থে বাংলাদেশেও তা করতে চায়। আজকের ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটন আমেরিকানদের সৃষ্ট , এর প্রভাব পড়েছে সমগ্র বিশ্বে। আমেরিকানরা মুখে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বললেও সবচাইতে বেশী মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটে আমেরিকাতে। প্রতিদিন ইসরাইলী দখদার বাহিনীর হাতে নীরিহ ফিলিস্তিনীরা হত্যার শিকার হচ্ছে সেখানে তাদের মানবিধার কোথায়?
চীন ঘনিষ্ঠতাঃ বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের টানাপোড়েনে ঢাকার কাছে ভিড়ছে বেইজিং। জুনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এক বিবৃতিতে বলেন: ‘আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। ‘ চীন আরও বলেছে, তারা বাংলাদেশের স্বাধীন অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশকে সমর্থন করে। কিন্তু চীনের সাথে বাংলাদেশের সখ্যতা মানতে পারছনা ভারত। ভারত আশঙ্কা করছে, শেখ হাসিনার পতন ঘটলে তথা বিএনপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে সাথে চীনের সম্পর্ক আরও গভীর হবে। এদিকে চীনের বন্ধু রাষ্ট্র পাকিস্তান বরাবরই ভারতের বিরোধী পক্ষ হিসেবে চিহ্নিত। ভারতের সেটা ভাববার কারন নেই , ভারতের স্বার্থ নষ্টহয় এমনটি কোনদিনই করবেনা শেখ হাসিনার সরকার। লন্ডনের এসওএএস ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার এবং দক্ষিণ এশীয় কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ অবিনাশ পালিওয়ালের মতে শেখ হাসিনা বিরোধীদের মুখোমুখি হচ্ছেন এবং বিএনপি রাজনৈতিক গতি পাচ্ছে এটা ভারতের কাছেও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হয়, এই চ্যালেঞ্জ নয়াদিল্লির জন্য আরও চাপ সৃষ্টি করবে’।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞর মতে, শেখ হাসিনার প্রতি মার্কিন বিরোধিতার আসল কারণ চীনের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা। আমেরিকানরা তাদের চেয়ে কেউ প্রভাবশীলী হউক তা তারা মানতে পারেনা। রাশিয়াকে কাবু করেছে ফেলেছে, তাদের মাথা ব্যাথা এখন চীন। তাই চীনকে কাবু করতে বাংলাদেশে আমেরিকানরা ঘাটি করতে চায়। চলমান বাংলাদেশ-মার্কিন বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে চীন। বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ২০১৩ সাল থেকেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরের পর থেকেই যা দৃশ্যমান। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এ যোগদানের পর থেকে বাংলাদেশ চীন থেকে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। চীনও বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার; চীন-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বর্তমানে ২৫ বিলিয়ন ডলারের। সেই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার এবং ভারতের সঙ্গে ১৮ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।তবে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রতিরক্ষা খাতে অংশীদারিত্ব। এটি ১৯৮০ এর দশকে শুরু হয় এবং পরবর্তী বছরগুলোতে যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সরবরাহের ৭২ শতাংশই চীনের। পাকিস্তানের পর চীনের অস্ত্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য ঢাকা।বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়ের জন্যই উদ্বেগের কারণ। ভারতের পীড়াপীড়িতে শেখ হাসিনা চীনকে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানান। বছরের পর বছর ঝুলে থাকার পর প্রকল্পটি বাতিল করে দেন। তিনি এখন চট্টগ্রামের কাছে কক্সবাজারের কাছে মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য জাপানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।শেখ হাসিনা গত মার্চে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলের কাছে বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি পেকুয়া উদ্বোধন করেন। যা ১.২১ বিলিয়ন ব্যয়ে নির্মিত। ২০১৬ সালে চীনের কাছ থেকে দুটি রিফারবিশড সাবমেরিন কেনে বাংলাদেশ। ২০১০ সাল থেকে চীনের কাছ থেকে ঢাকা ২.৩৭ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনেছে। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাত্র ১২৩ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনেছে।
বাংলাদেশে আমেরিকার স্বার্থ: ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী। সম্প্রতি ঢাকায় ফ্রিগেট এবং সামরিক পরিবহন বিমান সরবরাহ করেছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশ সরকার দুটি (আকসা ও জিসমিয়া) মৌলিক চুক্তি স্বাক্ষর করুক যেগুলো সামরিক চুক্তির সাধারণ নিরাপত্তা এবং ক্রস সার্ভিসিং চুক্তি। যা পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে। তবে বাংলাদেশ জানিয়েছে, এই চুক্তির বিষয়ে তাদের কোনো তাড়া নেই। পালিওয়ালের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদ বাংলাদেশকে চীনের সাথে আরও ঘনিষ্ঠ করছে। যেটা বিএনপি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। জুলাই মাসে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠকে উজরা জেয়া এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ঢাকার প্রশংসা করেন। তবে এসময় তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেন।শেখ হাসিনা নির্বাচনে হেরে গেলে বাংলাদেশকে আরও কয়েক বছর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য লড়াই করতে হবে। সেইসাথে দেশটিতে আবারও সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী শক্তির মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। সুতরাং আওয়ামী লীগের বিদায় শুধুমাত্র ভারতের জন্য নয়, সমগ্র অঞ্চলের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে ভেবে দেখতে হবে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও উন্নয়নের স্বার্থে শেখ হাসিনার প্রয়োজন। না আমেরিকার মানবাধিকারে ভূয়া বুলিতে বাংলাদেশকে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া।