বিপাকে লক্ষাধিক মানুষ সাড়ে ৪ মাসেও মেরামত

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সাড়ে ৪ মাস পরও ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক এখনও মেরামত হয়নি। ফলে সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সঙ্গে জামালগঞ্জ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলা সদর, ফেনারবাঁক ও ভীমখালী ইউনিয়নের লক্ষাধিকেরও বেশি মানুষ।জামালগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ১৬ জুন দ্বিতীয় দফা ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল সুনামগঞ্জ জেলার সব রাস্তাঘাট। সারাদেশের সঙ্গে জেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল ৫ দিন। বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ চালু হলেও এখনো বিচ্ছিন্ন আছে জামালগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ-মান্নানঘাট সড়কের দৈর্ঘ্য ৪৫ কিলোমিটার। এ সড়কের সদর উপজেলার কাঠইর থেকে শাখাইতি ও হুসেননগর গ্রামের কাছে বন্যার পানিতে ভেঙে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সড়কের বিভিন্ন অংশে ভেঙে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দেরও।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, উপজেলাবাসীর জন্য সুনামগঞ্জ পৌরশহর, সিলেট বিভাগীয় শহরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াতের অন্যতম সড়ক এটি। স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় পড়ুয়া কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এবং বিশাল অঞ্চলের রোগীদের জন্য সড়কটি এখন মরণফাঁদ। মাঝখানে গর্ত হওয়া কিংবা ঢালাই না থাকায় সড়কে যানবাহন নিয়ে যেতে চান না পরিবহন শ্রমিকরাও।এদিকে, সড়কের একাধিক ভাঙা স্থানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপর হচ্ছেন মানুষ। আবার অনেকে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে সাচনাবাজার হয়ে জেলা সদরে যাতায়াত করছেন। এতে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে, সময়ও নষ্ট হচ্ছে।স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্যার পর থেকে সাড়ে ৪ মাস যাবত সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সঙ্গে এ উপজেলার সরাসরি সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকলেও সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে সরকারিভাবে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।নোয়াগাঁও গ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক আবির মিয়া বলেন, বন্যার সময় জাল্লাবাজ গ্রামের ব্রিজের দু’পাশের পাকা সড়ক ভেঙে গাড়ি চলাচল বন্ধ আছে। তবে বাঁশের সাঁকো দিয়ে মানুষ খুব ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা রনি মিয়া বলেন, রাস্তা ভাঙার কারণে মানুষের কী যে কষ্ট হচ্ছে তা বলার মতো না। গাড়ি না চলার কারণে তিন বস্তা সার জাল্লাবাজের বাঁশের সাঁকো মাথায় করে পার করতে হয়েছে। নোয়াগাঁও থেকে জামালগঞ্জ আসতে ৩ জায়গায় গাড়ি বদলাতে হচ্ছে। একইভাবে জামালগঞ্জ থেকে নোয়াগাঁও আসতেও একই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

লেগুনা চালক লেবু মিয়া বলেন, ‘রাস্তা ভাঙার কারণে সুনামগঞ্জ থেকে সরাসরি জামালগঞ্জে যাওয়া যায় না। যতটুকু রাস্তা যাওয়া যায় তাও ভাঙাচোরা ও গর্তে ভরা। একবার কেউ এদিকে গেলে দ্বিতীয়বার যেতে চায় না। বন্যার সাড়ে ৪ মাস পার হওয়ার পরও সড়ক মেরামত না করায় যাত্রী অনেক কমে গেছে।জামালগঞ্জের ইউএনও বিশ্বজিত দেব বলেন, বন্যায় জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সড়ক ভেঙে ১০ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত গভীর হয়েছে। সড়ক মেরামতের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। ১৫ দিনের মধ্যেই উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হবে।সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম বলেন, বন্যায় সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের কয়েকটি স্থানে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যেসব স্থানে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটুকু জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছি। বন্যায় সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তা মেরামতের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।