বিশ্বকাপ বাছাই : পেশী শক্তির ম্যাচে ব্রাজিলকে হারালো আর্জেন্টিনা
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
রিও ডি জেনেইরো: ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে দারুন বিশৃংখল ম্যাচে আজ স্বাগতিক ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বিশ^ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ম্যাচ শুরুর আগেই দর্শকদের উশৃংখলতা এবং এর ফলে বিলম্বে ম্যাচ শুরু হওয়া থেকে শুরু করে ময়দানি লড়াইয়েও ছিল দুই দলের আগ্রাসী আচরণ। যা ল্যাতিন ম্যাচের সৌন্দর্য্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ৬৩ মিনিটে অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার নিকোলাস ওটামেন্ডির দর্শনীয় হেডের গোল ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করেছে। স্বাগতিক ব্রাজিলের বিপক্ষে এই জয়ের মাধ্যমে গত সপ্তাহে উরুগুয়ের কাছে দুর্ভাগ্যজনক পরাজয়ের ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলো বিশ^ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।
রিও’র আইকনিক মারাকানা স্টেডিয়ামে চির প্রতিদ্বন্দ্বি ব্রাজিলের বিপক্ষে এই জয়ে দক্ষিন আমেরিকা অঞ্চলের বছাইপর্বে এককভাবে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থান দখলে নিল আলবিসেলেস্তেরা। এই নিয়ে ছয় ম্যাচ থেকে ১৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে লিওনেল মেসির দল। অপরদিকে বাছাই পর্বে এই তৃতীয় পরাজয়ে পাঁচ বারের বিশ^ চ্যাম্পিয়নদের নামিয়ে দিলে পয়েন্ট তালিকার ষষ্ঠ স্থানে। ৬ ম্যাচ থেকে এখন ব্রাজিলের সংগ্রহ ৭ পয়েন্ট।
ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই মেজাজ হারিয়ে মারমুখি হয়ে উঠে স্বাগতিক সমর্থকরা। আর্জেন্টিনা সমর্থকদের দুয়ো ধ্বনি দিয়ে তাদের ওপর চেয়ার ছুড়ে মারতে শুরু করে ব্রাজিলের সমর্থকেরা। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ। এই সময় আর্জেন্টিনার একটি সমর্থক দলকেও লাঠিপেটা করতে দেখা যায় পুলিশকে। এমনকি পরিস্তিতি শান্ত করতে চেস্টা করেন আর্জেন্টিনার বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় । কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছিলো না এক পর্যায়ে ্য স্ট্যান্ডের দিকে লাফিয়ে যাবার চেস্টা করেন আর্জেন্টাইন গোল রক্ষক এমি মার্টিনেজ। এমনই গোলযোগপুর্ন এক পরিস্থিতিতে সতীর্থদের নিয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান মেসি। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে নির্ধারিত সময়ের প্রায় আধা ঘণ্টা পর শুরু হয় ম্যাচ।তবে গ্যালারির দর্শকদের সেই তেজ যেন মাঠে দেখাতে শুরু করে ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা। ফলে ম্যাচে ৪২টি ফাউলের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ব্রাজিল একাই করেছে ২৬টি। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে এসে লাল কার্ড দেখতে হয়েছে ব্রাজিলের বদলী খেলোয়াড় জোয়েলিংটন। মাত্র ১২ মিনিট খেলেই মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তিনি। মাঠে ম্যাচ গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় দুই দলের পেশী শক্তির মহড়া। শুরুটা হয় রডরিগো ডি পল ও লিওনেল মেসিকে দিয়ে। এরপর বাকিরাও জড়িয়ে পড়েন তাতে। ম্যাচের শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে ফাউল ও কার্ডের ব্যবহার চলতে থাকে। ম্যাচের ৫ মিনিটে বল পেয়ে আর্জেন্টাইন রডরিগোকে কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন জেসুস। কিন্তু তার হাত গিয়ে লাগে রডরিগোর মুখে। ফলে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন এ আর্সেনাল তারকা। ম্যাচের ১৩ মিনিটে আবারও ফাউলের শিকার হন রডরিগো। এবার করেন রাফিনহা, ফলে ম্যাচে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখান রেফারি।
ম্যাচের ২৬ মিনিটে গিয়ে প্রথমবারের বল পায়ে আক্রমণে আসেন মেসি। কিন্তু সেখান থেকে গোলের কোনো সম্ভাবনা তৈরি করতে পারেননি ইন্টার মায়ামি তারকা। উল্টো ৩৩ মিনিটে এ্যালিসন বেকারের ট্রেডমার্ক পাস থেকে বল পেয়ে এগিয়ে যান গাব্রিয়েল মার্টিনেলি। কিন্তু আর্জেন্টাইন ডি বক্সের কাছাকাছি এসে বলের নিয়ন্ত্রণ হারান তিনি।
প্রথমার্ধের শেষ মিনিটের আগে মার্টিনেলির নেয়া শট মার্টিনেজকে পরাস্ত করলেও গোললাইনের কাছ থেকে বল ক্লিয়ার করেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার। প্রথমার্ধে সব মিলিয়ে ২২টি ফাউল করে দু’দল। যেখানে ব্রাজিলের ১৬টি ফাউলের বিপরীতে আর্জেন্টিনার ছিল ৬টি।দ্বিতীয়ার্ধেও একাধিকবার আক্রমণে গিয়ে সুযোগ তৈরির চেষ্টা চালায় ব্রাজিল। কিন্তু আলবিসেলেস্তেদের রক্ষণদেয়াল ভাঙতে পারেনি তারা। ম্যাচের ৫৮ মিনিটে মার্টিনেলির প্রচেষ্টা দারুণভাবে ঠেকিয়ে দেন মার্টিনেজ। তবে খেলার ধারার বিপরীতে ম্যাচের ৬৩ মিনিটে এগিয়ে যায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। লো সেলসোর কর্নার থেকে দর্শনীয় হেডে লক্ষ্যভেদ করেন নিকোলাস ওটামেন্ডি।এরপর ম্যাচের ৭৮ মিনিটে নিজেকে খুঁজে বেড়ানো মেসিকে তুলে নিয়ে ডি মারিয়াকে পাঠায় আর্জেন্টিনা। ৮২ মিনিটে ব্রাজিলের বিপদ আরও বাড়ে বদলী খেলোয়াড় জেয়েলিংটন লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে। শেষ পর্যন্ত সেই এক গোলের লিড নিয়েই মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা। সেই সঙ্গে ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো তাদেরই মাঠে বাছাইপর্বের ম্যাচে জয়ের মুখ দেখে কোচ লিওনেল স্কালনির দল।