বিস্ফোরন্মুখ জেলা বিএনপি!
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ বিএনপি’র সিলেট জেলা শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে মারাত্মক অসন্তোষ। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ক্ষোভ ঝেড়েছেন দলের কয়েকজন নেতা। গঠিত কমিটির প্রতিবাদ করায় এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ স্থগিত করা হয়েছে।অভিযোগ ওঠেছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ত্যাগীদের বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দের লোকজনের সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেছেন। জেলা শাখার দীর্ঘদিনের পরীক্ষিতদের বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের স্থান দেয়া হয়েছে কমিটিতে। চলমান আন্দোলনকে গুরুত্ব না দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের নির্বাচনী এলাকার লোকজনকে প্রাধান্য দিয়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। বিস্ফোরণমূখ এই অবস্থায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি বাতিল কিংবা পুনর্গঠনের দাবি জানাচ্ছেন বিদ্রোহীরা।
দলীয় সূত্র জানায়, গত ১৯ মার্চ আবদুল কাইয়ূম চৌধুরীকে সভাপতি ও এমরান আহমদ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে জেলা বিএনপি’র ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। কমিটি প্রকাশের পরই জেলা বিএনপিতে বিদ্রোহ শুরু হয়। কমিটিতে বাদ পড়াদের পাশাপাশি স্থান পাওয়া অনেক নেতাও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
অভিযোগ ওঠে, কমিটিতে সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী তার নির্বাচনী এলাকা (সিলেট-৩ আসন) দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ এবং সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী (সিলেট-৬ আসনভূক্ত) গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের নেতাদের বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। ১৫১ জনের কমিটির মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্বাচনী আসনের ৮৭ জন নেতা স্থান পেয়েছেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা ও পৌর শাখার ১৮ জন আহবায়কের মধ্যে কমিটিতে স্থান পেয়েছেন মাত্র ২ জন। বাকি ১৬ জনকে রাখা হয়নি। এমনকি যেসব উপজেলা পরিষদ ও ইউপি চেয়ারম্যান দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনই করেননি তাদেরকেও স্থান দেয়া হয়নি কমিটিতে।
এই অবস্থায় গত ২১ মার্চ দলীয় এক সভায় অংশ নিতে সিলেটে আসেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ওইদিন নগরির দরগাহ গেইটের একটি হোটেলে আমীর খসরু মাহমুদের সামনে জেলা বিএনপি’র সভাপতির উপর ক্ষোভ ঝাড়েন কয়েকজন নেতা। এ ব্যাপারে আমীর খসরুসহ উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপও কামনা করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। কিন্তু বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে গত ৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার এক চিঠিতে নবগঠিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলুর পদ স্থগিত করা হয়। তবে সেই চিঠিতে পদ স্থগিতের মেয়াদ উল্লেখ ছিলনা। পরে ৩১ মার্চ শুক্রবার নতুন এক চিঠিতে তার শাস্তির মেয়াদ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত তার পদ স্থগিত করা হয়েছে। অর্থাৎ আগামী তিন মাস দলীয় কর্মকা- থেকে বিরত থাকতে হবে তাকে।এই স্থগিতাদেশ যেন ‘উত্তপ্ত কড়াইয়ে ঘি ঢালা’র মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে এখন নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝাড়ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তারা কমিটি বাতিল করে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে সিদ্দিকুর রহমান পাপলু বলেন, ‘কমিটিতে না স্থান পেয়েছেন ত্যাগীরা, না হয়েছে আন্দোলনমূখী। পুরনো বিএনপিকে আড়ালে ঠেলে দিয়ে নতুন এক বিএনপিকে তুলে ধরেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এটা পরিকল্পিত না অনিচ্ছাকৃত তা জানি না। তবে এই কমিটি দেখে শুধু বঞ্চিতরা নয়, পদপ্রাপ্ত অর্ধেক নেতাই হতাশ।
নবগঠিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল আহাদ খান জামাল বলেন, ‘সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও আহবায়ক কমিটির সিনিয়র নেতাদের সাথে আলোচনা করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে নিজেদের ইচ্ছেমতো কমিটি করেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। দলীয় স্বার্থ চিন্তা না করে দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজেদের নির্বাচনী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন।নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর জেলা বিএনপিতে মারাত্মক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। যেখানে আন্দোলনমুখী কমিটি হওয়ার কথা ছিল, সেখানে পুরো কমিটি হয়ে গেছে দ’ুটি আসনভিত্তিক। বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে যারা উপজেলা কমিটিতে সভাপতি হতে পারেননি তাদেরকে জেলা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে এভাবে কমিটি করে কৌশলে সিলেটে বিএনপির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।অভিযোগ প্রসঙ্গে, জেলা বিএনপি সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী বলেন, ‘আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ত্যাগীদের দিয়েই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে উপজেলা পর্যায়ের নেতাদেরই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তবে শহরের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় আন্দোলনের কথা বিবেচনা করে সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কমিটিতে হয়তো কেউ কাঙ্খিত পদ পাননি, তাই বিরোধিতা করছেন। উপজেলা ও পৌর শাখার আহবায়ক যারা ১৫১ সদস্যের কমিটিতে নেই তাদেরকে উপদেষ্টা কমিটিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রবীণ অনেক নেতাকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। বিগত কমিটি ৩৫০-৩৭০ জনের ছিল, আর এবার কমিটি হয়েছে ১৫০ জনের। তাই প্রত্যাশা থাকলেও হয়তো কেউ কেউ কমিটিতে স্থান পাননি। তবে কমিটিতে কোন বিশেষ আসন কিংবা নির্বাচনী বিবেচনায় নয়, বিএনপির চলমান আন্দোলন-সংগ্রামকে সামনে রেখেই করা হয়েছে।’