বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ খসরু আর নেই

পঙ্কজ দে
সত্যবাণী

সুনামগঞ্জ থেকে: বীর মুক্তিযোদ্ধা, সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট আইনজীবী, কলামিষ্ট ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু আর নেই। বুধবার বেলা আড়াইটায়  তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বুধবার হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

হাওর বাঁচাওসহ বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে সক্রিয় এই বিশিষ্টজন মঙ্গলবার ভোরেও তাঁর প্রিয় সংগঠন সোনালী সকাল’এর অন্যান্যদের সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়ে ছিলেন। ওই সময়েই তিনি অসুস্থতা বোধ করেন। পরে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে নিজের ষোলঘরের বাসায় ফিরেন তিনি। বুধবার দুপুরে আবারও অসুস্থতা বোধ করলে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। হাসপাতালে নেবার পর মৃত্যুর আধঘন্টা পর বিকাল ৩ টায় ডাক্তাররা তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বয়স হয়েছিলো প্রায় ৬৯ বছর।

বজলুল মজিদ চৌধুরী ১৯৫২ সালের ২ এপ্রিল সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘরে জন্মগ্রহণ করেন। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৫ নম্বর সেক্টরের তৎকালীন ক্যাপ্টেন হেলাল (পরবর্তীতে লে. কর্ণেল) এর অধীনে সেলা সাব সেক্টরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ছাত্র জীবন থেকেই সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। ‘দৈনিক পূর্ব দেশ’ ও ‘দৈনিক সংবাদ’ এর সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। সুনামগঞ্জ থেকে প্রথম প্রকাশিত পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক সুনাম’ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। এছাড়াও ‘রক্তাক্ত ৭১ সুনামগঞ্জ’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। সুনামগঞ্জ জেলার মুক্তিযুদ্ধের উপর তাঁর লেখা বিভিন্ন নিবন্ধ পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
সুনামগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের উপর দীর্ঘ কয়েক বছর গবেষণার ফসল তাঁর ‘রক্তাক্ত ৭১ সুনামগঞ্জ’ গ্রন্থ। এই গ্রন্থের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পর একাত্তরের সুনামগঞ্জের দিকে তাকিয়েছেন তিনি প্রসারিত দৃষ্টিতে। আপন অভিজ্ঞতার সঙ্গে ইতিহাসের অনুসন্ধিৎসা মিশিয়ে তিনি ধীমান উপলদ্ধি ও নিরিড় শ্রম সংযোগে লিখেছেন একাত্তরের সুনামগঞ্জের কথা। অজস্র তথ্য তিনি সংগ্রহ করেছেন, যুক্ত করেছেন বহু মানুষের অবদান ও ভূমিকার কথা। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের প্রসঙ্গও সেখান থেকে বাদ যায় নি।
পেশায় তিনি ছিলেন একজন আইনজীবী। ১৯৯১ সালে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ২০০০ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দোয়ারাবাজার উপজেলার ‘মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন হেলাল খসরু হাইস্কুল এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। এছাড়াও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ ‘৭১ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র সুনামগঞ্জের আহবায়ক ছিলেন। দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরের উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন সদ্য প্রয়াত বজলুল মজিদ খসরু। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ২ টায় শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে তাঁর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে জানাজা হবে ষোলঘর পুরাতন জামে মসজিদে। এর আগে সকাল সাড়ে ১০ টায় সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি ভবন চত্বরে, ১১ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং শেষে সুনামগঞ্জ পৌরসভা চত্বরে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ নেওয়া হবে তাঁর।
প্রগতিশীল এই সমাজকর্মীর মৃত্যু সংবাদে সুনামগঞ্জ শহরে শোকের ছায়া নেমে আসে। শহরের ষোলঘরের বাসায় শোকার্তরা ভিড় করেন।
তাঁর মৃত্যুতে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্, সুনামগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম ও আব্দুল আহাদ, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান সেলিম প্রমূখ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

You might also like