বুদ্ধিজীবী দিবসে লন্ডন শহীদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন: একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি চাই, দন্ডিত যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকরে সহযোগীতা চাই

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
সত্যবাণী 

লন্ডন: মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সবক দেয়ার আগে একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি ও বাংলাদেশের আদালতে দন্ডিত যুদ্ধাপরাধী, বুদ্ধিজীবী ঘাতকদের বিচারের রায় কার্যকরে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য শাখা।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্ক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠান থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।

আওয়ামী লীগ, সিপিবি, জাসদ, উদীচীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠগুলোর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে জ্বলন্ত প্রদীপ হাতে দাড়িয়ে থেকে ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোষর রাজাকার আলবদরদের হাতে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান উপস্থিত সুধীজন। বাংলাদেশের আদালতে প্রমানিত মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম শীর্ষ পরিকল্পনাকারী ব্রিটেনে পালিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দিনকে অবিলম্বে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের দাবিতে এসময় অনুষ্ঠিত হয় এক প্রতিবাদ সভা। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি সৈয়দ আনাস পাশার সভাপতিত্বে ও সহসাধারণ সম্পাদক শাহ বেলালের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন নির্মূল কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি আজাদ। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন লন্ডন্স্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের ডেপুটি হাই কমিশনার জনাব জাহিদুল ইসলাম। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী,  বীর মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই ইন দ্যা ইউকের সভাপতি দেওয়ান গৌস সুলতান এবং নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ও ইউরোপীয়ান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনসার আহমেদ উল্লাহ।

বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, যুক্তরাজ্য নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা হোসনা মতিন, নির্মূল কমিটির সাবেক সভাপতি সৈয়দ এনামুল ইসলাম, সহসভাপতি মতিয়ার চৌধুরী, জামাল খান, নাজমা রহমান, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিষ্ট সারওয়ার ই আলম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য নির্মূল কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুশান্ত দাশ প্রশান্ত, প্রেস সেক্রেটারী আ স ম মাসুম, পাবলিকেশন সেক্রেটারী রুমানা রাখি, কালচারেল সেক্রেটারী সেলিনা আক্তার, রিসার্চ সেক্রেটারী রোকসানা পারভিন জোসনা, জাসদ নেতা মুজিবুল হক মনি, সাংবাদিক ও কন্ঠ শিল্পী মোস্তফা কামাল মিলন, জাসদ নেতা মাহমুদুর রহমান শাহনুর, আওয়ামী লীগ নেতা সরোয়ার কবির, কমিউনিটি সংগঠক আব্দুল বাসির ও সংস্স্কৃতিকর্মী নজরুল ইসলাম ওকিব প্রমূখ।

বক্তারা একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করে বলেন, একাত্তরের গণহত্যাসহ বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলে সংঘঠিত গণহত্যার যথাযথ বিচারের মাধ্যমেই সম্ভব প্রকৃত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। পৃথিবী থেকে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত ঘটনা বন্ধ করতে হলে অতীতে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে বক্তারা বলেন, কাউকে কোন উপদেশ দেয়ার আগে নিজে এটি চর্চা করতে হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেয়ার আগে একাত্তরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণহত্যাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সংগঠিত গণহত্যাগুলোর স্বীকৃতি ও বিচার সম্পন্নে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। তা না হলে বিষয়টি হবে ভন্ডামীর মতো, যা নতুন গণহত্যা ও মানবাধিকার লংঘনের মতো ঘটনার জন্ম দেবে।  

কোন কোন বক্তা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, একাত্তরের গণহত্যার সাথে জড়িত মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি আজ যেভাবে সংঘবদ্ধ হচ্ছে, বিপরিতে পক্ষ শক্তি প্রতি নিয়ত হচ্ছে বিভাজিত। রাজনৈতিক কৌশলের নামে সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে আপোষ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের জন্য শুভ নয়, এটি বুঝতে হবে আমাদের রাজনীতিকদের।

ব্রিটেনে পালিয়ে থাকা বাংলাদেশের আদালতে দন্ডিত বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী চৌধুরী মঈনুদ্দিনকে অবিলম্বে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর অথবা এদেশেই তাঁর বিচার কার্যকর করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, একজন দন্ডিত যুদ্ধাপরাধী অবাধে চলাচল করে কলুষিত করছে সভ্যতার দাবিদার ব্রিটেনের পবিত্র মাটি, এটি মোটেই গ্রহনযোগ্য নয়। নিজের অপরাধ গোপন করে ব্রিটেনে আশ্রয় লাভে মঈনুদ্দিনকে কারা সহযোগিতা করেছে তদন্ত করে তা চিহ্নিত করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা। তারা বলেন, একজন ভয়ঙ্কর অপরাধীর নিঃশ্বাস যে বাতাসে ভেসে বেড়ায়, সেই বাতাস থেকে কেমন করে আমরা শ্বাস নিয়েছি, সেই প্রশ্নের জবাবও কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্মকে আমাদের দিতে হবে।

You might also like