বৃটেনে ‘ন্যাশনাল লকডাউন’ ঘোষণার দাবি বিরোধী লেবার পার্টির নেতার
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডনঃ মিউট্যান্ট কোভিড ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যাবার ফলে ‘ন্যাশনাল লকডাউন’ ঘোষণার দাবি করছেন বৃটেনের বিরোধী লেবার পার্টির নেতা স্যার কেয়ার স্টারমার।এর আগে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সতর্ক করেছিলেন,মিউট্যান্ট কোভিড স্ট্রেনের কারণে কঠোর লকডাউন ব্যবস্থা ‘সম্ভবত’ প্রয়োজন হবে।তবে তিনি আজ স্কুল খোলার তারিখে সন্তানদের প্রাইমারিতে প্রেরণের জন্য পিতা-মাতাদের অনুরোধ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী স্কুলকে নিরাপদ স্থান বলেও দাবি করেছেন।
কেয়ার স্টারমার ‘বিলম্ব’ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে নিন্দা জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ‘ন্যাশনাল লকডাউন’ জারির মাধ্যমে জাতীয়ভাবে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের দাবি জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ভাইরাস যখন স্পষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তখন বাধা-নিষেধ আসছে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন, এটা ভাল লক্ষণ নয়। বরং এখনই এই বিধি-নিষেধ আরোপ করা উচিত। লেবার পার্টির নেতা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, এটি ‘অনিবার্য’ এবং আরও বেশি স্কুল বন্ধ করতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে যত বেশি দেরি করেন, পরিস্থিতি ততই খারাপ হবে।লেবার পার্টি এবং ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শতকরা ৭০ পার্সেন্ট আক্রান্ত হবার আশঙ্কার এই ভাইরাস যে কোন বয়সের মানুষের মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই শিক্ষার চেয়ে জীবনের মূল্য বেশী, সরকারকে সেটা বুঝতে হবে।
শুধু লন্ডন নয়, সারা দেশজুড়েই স্কুলগুলো বন্ধ রাখা উচিত।তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বলেছেন, সপ্তাহে পাঁচ মিলিয়ন টিকা দেয়ার মাধ্যমে স্কুল খোলা রাখা যেতে পারে এবং লকডাউন এড়ানো সম্ভব হবে।ক্রিস্টমাস ও নববর্ষের ছুটি শেষে ৪ঠা জানুয়ারি স্কুলসমূহ খোলার কথা রয়েছে। বিপুল সংখ্যক স্কুল আজ চালু করতে অস্বীকার করছে। তবে বেশির ভাগ তাদের দরজা উন্মুক্ত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রাইটন এবং বার্মিংহামের কিছু অংশ, ব্ল্যাক কান্ট্রি, এসেক্স, ম্যানসফিল্ড, সাফুক, নরফোক, ডিভন, কাউন্টি ডারহাম, নর্থবারল্যান্ড, বার্কশায়ার এবং ডার্বিশায়ারের স্কুলগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। ক্যান্ট এবং কুম্বরিয়ার মতো উল্লেখযোগ্য কাউন্সিলগুলি তাদের অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
লন্ডন মেয়র সাদিক খান নিশ্চিত করেছেন, ট্রাম শুরুর আগে লন্ডনের সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। এডুকেশন সেক্রেটারি গ্যাভিন উলিয়ামস বলেছেন, শিক্ষাকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। স্কুল বন্ধ থাকলেও অনলাইনে ক্লাস নেয়া হবে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি এই মাসের শেষের দিকে পুনরায় খোলা হবে।
পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ১৮ই জানুয়ারী সেকেন্ডারি স্কুল খোলার কথা। বরিস জনসন বলেছেন, আগামী সপ্তাহগুলিতে বিধি-নিষেধের প্রভাবের আলোকে বিবেচনা করা হবে। তিনি মেনে নিয়েছিলেন যে মারাত্মক ভাইরাসের আরও সংক্রামক রূপ ধারণ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপগুলি ‘সম্ভবত’ প্রয়োজন হবে। কার্ফিউ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে কিনা সে সম্পর্কে জবাব দিচ্ছিলেন। তিনি জোর দিয়েছেন, ভ্যাকসিনই ভাইরাস থেকে মুক্ত করার উপায়। দশ মিলিয়ন লোককে আগামী তিন মাসের মধ্যে টিকা প্রদান করা হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৪ হাজার ৯৯০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রাণ হারিয়েছেন ৪৫৪ জন। টানা ৬ষ্ঠ দিনেও আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। নার্স বা স্টাফ রোগীর অনুপাতে অনেক কমে গেছে। হাসপাতালে রোগী রাখার সব জায়গা পরিপূর্ণ। বাইরে অনেকে অপেক্ষা করছেন। চিকিৎসা একটি টিম ওয়ার্কের বিষয়। ডাক্তার, নার্স, হেলথওয়ার্কার, অক্সিজেন ও চিকিৎসা। যাকে যতুটুকু দরকার সেটি দিতে হয় এবং এসব পর্যাপ্ত সাপোর্ট থাকতে হয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা হিমশিম খাচ্ছেন, কাকে রেখে কাকে সার্ভিস করবেন। কঠিন অবস্থা বিরাজ করছে।