বৈঠকে ১৪৫ টাকা মজুরি নির্ধারণ, বেঁকে বসেছেন সাধারণ চা শ্রমিকরা

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ ২০ আগস্ট শনিবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের অফিসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নতুন মজুরি নির্ধারণের পর চা শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও বেঁকে বসেছে সাধারণ শ্রমিকরা। তারা কমপক্ষে ২০০ টাকা দৈনিক মজুরি না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরআগে ১৪৫ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে শ্রম দপ্তরের অফিসে বৈঠক শেষ হয়।শ্রীমঙ্গল থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন, শনিবার দুপুরে শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের অফিসে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী ও মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া। অপরদিকে, চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল ও বিভিন্ন ভ্যালির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

বৈঠক শেষে শনিবার বিকেলে চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল জানান, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন। শ্রমিকদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া খোদ প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে ফিরে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করবেন। চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এ সময় তাদের দাবি প্রধানমন্ত্রীর নিকট উপস্থাপন করবেন। এই আশ্বাসে তারা আপাতত ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন। রোববার থেকে সব বাগানে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবে।কিন্তু নেতাদের এই সিদ্ধান্তকে মেনে নেননি সাধারণ চা শ্রমিকরা। বৈঠকের পরপরই শ্রীমঙ্গলস্থ শ্রম দপ্তরের সামনেই বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয় চা শ্রমিকরা। তারা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ারও কথা জানান তারা। এ সময় সমিতির নেতাদের প্রতিও ক্ষোভ জানান সাধারণ শ্রমিকরা।অপরদিকে, বৈঠকের পর সিলেট মহানগরির মালনীছড়া, হিলুয়াছড়া ও তারাপুর চা বাগানে শ্রমিকরাও এ সিদ্ধান্তকে বয়কট করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কয়েক শ’ চা শ্রমিক বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মালনীছড়া বাগানের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।এ সময় মিছিলে উপস্থিত থাকা চা শ্রমিক ফেডারেশনের সংগঠক অজিত রায় গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা এ সিদ্ধান্ত মানি না। কমপক্ষে ২০০ টাকা দৈনিক মজুরি ছাড়া মানবো না। আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার
এর আগের খবরে জানানো হয়, দৈনিক ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে নিয়ে কর্মবিরতির কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন আন্দোলনরত চা শ্রমিকরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সম্মান দেখিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন তারা।শনিবার বিকেল ৪টায় শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের অফিসে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৪৫ টাকা মজুরির বিষয়টি মেনে নেন উপস্থিত চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। এরপর বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তিনি কর্মবিরতি পালনকালে গত ১২ দিনের মজুরী, রেশনসহ আনুষাঙ্গিক সুবিধাদি প্রদানের দাবি জানান।প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুন মাসে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের বৈঠক হয়। সেখানে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দেন শ্রমিক নেতারা। কিন্তু মালিকপক্ষ ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়। যে কারণে শ্রমিক নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর আরও এক মাস পেরিয়ে যায়, মালিকপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এর প্রতিবাদে ৯ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত টানা চার দিন প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ধর্মঘট পালন করা হয়। তারপরও মালিকপক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কথা না বলায় ১৩ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের সব চা-বাগানে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকরা।

You might also like