ব্যারিস্টার মওদুদ সম্পর্কে সংসদে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

জাতীয় সংসদভবন থেকেঃ প্রয়াত বিএনপি নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মেধাবী ছিলেন, তিনি দেশকে অনেক কিছু দিতে পারতেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। যদিও কখনো ছাত্রলীগ করেননি। তিনি সব সময় একটু সরকার ঘেঁষাই ছিলেন। বার বার দল বদল করা তার একটা অভ্যাস ছিলো এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরেও আমি বলবো একটা ট্যালেন্টেড মানুষ ছিলো কিন্তু সেটা যদি যথাযথভাবে দেশপ্রেমে কাজে লাগতেন তাহলে হয়তো দেশকে অনেক কিছু দিতে পারতেন; এটা হলো বাস্তবতা।বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে এভাবে বিএনপি নেতা মওদুদ সম্পর্কে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর শোক প্রস্তাবের আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আর একজন ভদ্রলোকের কথা বলতে হয় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। ব্যারিস্টার পাস করে ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশে আসেন। তিনি কবি জসিম উদ্দিনের মেয়ের জামাই বলে সব সময় তার প্রতি একটু সহানুভুতি ছিলো। কিন্তু কিছু কিছু কাজ তার সব সময় একটু ভিন্ন ধরণের ছিলো। যার কারণে ১৯৭৩ সালে তাকে একবার গ্রেপ্তারও করা হয়। কারণ বাংলাদেশের কিছু গোপন তথ্য তিনি সে সময় পাচার করছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কবি জসিমউদ্দিন সাহেব নিজে এসেছিলেন আমাদের বাসায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কাছে অনুরোধ করলেন বলে তখন তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হয়। তাকে বন্দি করা হয়, তখন সেই মামলা চলছিলো, মওদুদ তার জীবনীতে লিখেছেন তিনি সেই মামলার আইনজীবী ছিলেন। আসলে তিনি কোনো অ্যাপয়েন্টেড আইনজীবী ছিলেন না। তিনি ড. কামাল হোসেন সাহেবের সাথে ঘুরতেন এবং বঙ্গবন্ধুর যিনি পিএ ছিলেন মোহাম্মদ হানিফ তাদের সাথেই ঘুরতেন। সেই গ্রুপটার সাথেই সব সময় ছিলেন। বিশেষ করে ব্যারিস্টার আমিন উল ইসলামের সাথে তার খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল। দুই জন সব সময় এক সাথেই চলতেন।

তিনি বলেন, আয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠক ডাকলো এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আগরতলা মামলায় বন্দি অবস্থায় প্যারোলে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলো। সেই প্রস্তাব আমার মাকে জানালে মা খুব কঠিন পদক্ষেপ নিয়ে বলেছিলেন- ‘মুক্ত মানুষ হিসেবেই যেন তিনি ফিরে আসেন। তিনি প্যারোলে যাবেন না’। এই তথ্যটা আমার মায়ের কাছ থেকে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছিলাম ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে, সেখানে অনেক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তারা প্যারালে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু আমি আমার মায়ের বার্তাটা পৌঁছে, সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু নিজেও প্যারোলে যেতে চাননি। তিনি নাকোচ করে দেন যে তিনি প্যারোলে যাবেন না। এরপর বাসায় যখন ফিরে আসি- ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম আর একজন হলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আমাদের বাড়িতে আসেন। বারান্দায় আমি একা একা দাঁড়িয়ে আছি- তারা আমার কাছে আসেন। আমিল উল ইসলাম সাহেবই একটা কথা বললেন ‘তুমি কেমন মেয়ে যে তুমি চাও না তোমার বাবা কারাগার থেকে ফিরে আসুক’ ব্যারিস্টার মওদুদ তাতে সায় দিয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম আমার বাবা সন্মান নিয়েই ফিরে আসবে। আপনারা এই সমস্ত বিভ্রান্তি ছড়াবেন না।

তিনি বলেন, তিনি (মওদুদ) মুখে যাই বলুক তার লেখাগুলোর মধ্যে অনেক অনেক কন্ট্রভার্সি নিজের আপন মনের মাধুরী মিশিয়েও লিখেছেন। আর উনি দল বদল করতে পছন্দ করতেন। যখন আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার কথা সেই সুযোগে ১৯৬৯ সালে মিশে গেলেন। পরবর্তী ১৯৭৫ সালে বিএনপিতে যোগ দিলেন। এরপর যখন এরশাদ এলেন তিনি (মওদুদ) একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন এরশাদ সাহেব তার সাজা মওকুফ করে দিয়ে তার মন্ত্রিপরিষদে আইনমন্ত্রী করলেন। এরপর আবার তিনি বিএনপিতে যোগদান করলেন। রাজনীতিতে বার বার দল বদল করা তার একটা অভ্যাস ছিলো এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি যখন মারা গেলেন আমি নিজে ফোন করেছিলাম হাসনাকে। কারণ হাসনার সাথে আমার পরিচয় ছিলো সবসময়। সিঙ্গাপুরে ওর সাথে কথা বলি।

You might also like