ভারত-বাংলাদেশ বৈঠক সোমবার, কোন পথে যাচ্ছে সম্পর্ক

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নানামুখী টানাপোড়েন চলছে। দুই দেশের মিডিয়ার খবর আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই উত্তাপে গরম দুই দেশের রাজনীতি। এমতাবস্থায়, আগামীকাল সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।ধারণা করা হচ্ছে, এই সফরে আগরতলায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে হামলার বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবে ভারত। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সুযোগে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে ভারতের কাছে। যাতে ভবিষ্যতে দুই প্রতিবেশির মধ্যে এমন উত্তেজনা সৃষ্টি না হয়।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই ভারতীয় মিডিয়া একতরফাভাবে বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা ইস্যুতে খবর প্রচার করছে। এর প্রভাব পড়ে ভারতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও। তাতে হিংসা আর বিদ্বেষমূলক বক্তব্যে ভারতীয় নেটিজেনরা বাংলাদেশবিরোধী মনোভাব প্রকাশ করেন।তাদের দাবি, বাংলাদেশে মূলত শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে মৌলবাদীদের উত্থান হয়েছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর, তাদের বাড়ীঘর, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে হামলা করছে। ভারতের উচিত সীমান্তের ওপাড়ে অরক্ষিত হিন্দুদের পাশে দাঁড়ানোর।

এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ও নিজেদের লোকবল সংকটের অজুহাতে ভারত বাংলাদেশিদের জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ট্যুরিষ্ট ও অন্যান্য ভিসা সীমিত করে। এমন অবস্থায়, পরিস্থিতি আরও বেগতিক হয়।এদিকে হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগে সনাতনী মঞ্চ নামে একটি সংগঠন বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করে। অভিযোগ রয়েছে, ওই সমাবেশ থেকে বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য ও কার্যকলাপকে উৎসাহ দেয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে সংগঠনটির মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা ও তাকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।চট্টগ্রামে চিন্ময়ের আটকের ঘটনার বিক্ষোভে নিহত হন আইনজীবী সাইল ফুর আলম আলিফ। এরপর থেকেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। দুই দেশের মিডিয়া, রাজনৈতিক দল ও নেতারা একে অপরের উপর দিকে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশি হাইকমিশনে হামলার চালায় একদল ভারতীয় নগরিক।

এরপর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের ফাটল আরও বড় হতে থাকে। যদিও সরকারি ভাবে দুই দেশের শীর্ষ নেতারা এই সম্পর্ক আবারও আগের মতো অবস্থায় নিয়ে যেতে চেষ্টা করতে থাকেন। তবে দুই দেশের জনগণের মধ্য বিভেদের রাজনীতি আকাশচুম্বি অবস্থায় গিয়ে পৌঁছায়।দেশের কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ চাপে রয়েছে ভারত। এছাড়া বাংলাদেশিদের ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণে তাদের পর্যটন শিল্পে এর প্রভাব পড়ছে। এছাড়া ব্যবসা বাণিজ্য ও চিকিৎসা খাতেও এর প্রভাব পড়েছে।জানা গেছে, কলকাতা ও ত্রিপুরায় হোটেল এখন পর্যটক শূণ্য, এছাড়া ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। কাপড়ের ব্যবসায় চলছে মন্দা। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতে যে পরিমাণ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে যান, তাতে বিরাট একটি অংক তাদের রেমিট্যান্সে যোগ হয়। এটাও বন্ধ রয়েছে।এছাড়া সীমান্তরক্ষায়ও ভারত বেশ চাপে রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হলে তার প্রভাব বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তে পড়বে বলে মনে করছেন দুই দেশের কূটনৈতিকরা। তাদের ভাষ্য, এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে জল ঢেলে সব শান্ত করতেই মূলত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ঢাকায় আসছেন।

পররাষ্ট্র দপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক এখন থেকে সমতা, ন্যায্যতা-মর্যাদা ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে হতে হবে বলে বাংলাদেশ মনে করছে। বাংলাদেশের এই অবস্থান আগামীকালের বৈঠকে স্পষ্ট করবে সরকার।কেবল সরকার বা বিশেষ কোন দল নয়, প্রতিবেশি দুই দেশের মানুষের সম্পর্কও টেকসই করার তাগিদ দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম ঢালাওভাবে অপপ্রচার করে আসছিলো। এসবের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করা দরকার বলে তাদের অভিমত।জানা গেছে, মঙ্গলবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির সাথে বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন।এরপর বিক্রম মিশ্রি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাথেও দেখা করবেন।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রথম কারও ঢাকা সফর হতে যাচ্ছে এটি। এখন দেখার বিষয় এই আয়োজন দিল্লি-ঢাকা’র সম্পর্কে ইতিবাচক কোনো আবহ তৈরি করতে পারে কি না।সূত্র:একুশে টেলিভিশন

You might also like