ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে মসজিদের জায়গা আত্মসাত করলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ সুনামগঞ্জের ছাতেক মসজিদের নামের ওকফকৃত জায়গা ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আতœসাতের অভিযোগ উঠেছে।জানা যায়, উপজেলার দক্ষিন খুরমা ইউনিয়নের মায়েরকুল জামে মসজিদের নামে কীর্তিশাসন মৌজাস্থিত, ৩৭৯ জেএল, ৫২ ও ৭৫ খতিয়ান ১৩৫ নং দাগে, ২.৪০ শতাংশ জমি গত ২৫ জুন ১৯৯০ ইং তারিখে ৫১২৮ নং দলিল মুলে ওকফ করেন ইউনুছ আলী, জয়ধন বিবি, কাঞ্চন মালা বিবি ও মায়ার মা বিবি। দলিল গ্রহীতা মসজিদ কমিটির পক্ষে তৎসময়ের মোতাওয়ালী মো. ইছকন্দর আলী।
অভিযোগ উঠেছে দক্ষিন খুরমা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, আওয়মীলীগ নেতা আব্দুল মছব্বির ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মসজিদের এই জায়গা আতœসাত করেন। গত ২৪ জুন ২০১২ ইং তারিখে আব্দুল মছব্বির মসজিদ কমিটির পক্ষে ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে তার স্ত্রী মোছা: বানেছা বেগম ও বোন মোছা: সুরেছা বেগমের নামে ২.৪০ শতাংশ জায়গা দলিল নং-২৫৪৪ মুলে হস্তান্তর করেন। গ্রামবাসীর অভিযোগ সেই সময়ে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান থাকার সুবাদে ইচ্ছামত উত্তরাধীকারী সনদ ও মসজিদ কমিটির ভূয়া কাগজ সৃজনসহ সরকার দলীয় প্রভাব বিস্তার করে আল্লাহর ঘর মসজিদের জায়গা কৌশলে আতœসাত ও জবর দখল করেন। এর আগে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ১১৩৩/২০১০-১১ ইং নং মোকদ্দমার আদেশ বলে মসজিদ কমিটির পক্ষে আব্দুল মছব্বির এর নামে ৩৩০ নং খতিয়ান রেকর্ড ভুক্ত করা হয়।
গ্রামবাসী জানান, দলিলে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, মোতাওয়াল্লীর তত্বাবধানে রেখে এই জমি ও জমি থেকে আয়কৃত অর্থ মসজিদের উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করা হবে। মোতাওয়াল্লী তার নিজস্ব কোন কাজে খরছ করিতে পারবেন না। গ্রামের পঞ্চায়েতের অধিকাংশ মতানুযায়ী মোতাওয়াল্লি পরিবর্তন হলে পরবর্তীতে যিনি মোতাওয়াল্লি হবেন তিনি এই জমির তত্বাবধান গ্রহন করবেন।এছাড়াও একই দাগে মায়ের কোল গ্রামের চান্দালীর ছেলে মাজন আলী বাড়ীসহ ১.২০ শতাংশ জায়গা নামজারী করা হয়। অভিযোগ উঠেছে ওই নামজারীতে আপত্তি করে নামজারী বাতিল করান ভূমি খেকো আব্দুল মছবিবর। ছাতক উপজেলা ভূমি অফিসের ৩১/২০১৯-২০ ইং রিভিউ মোকদ্দমার আদেশ এর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ভূমি, সুনামগঞ্জ নামজারী রিভিশন মোকদ্দমা নং-২/২০২০ দায়ের করেন মাজন আলী।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির কখনো মায়েরকোল জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী ছিলেন না মর্মে গ্রামের প্রায় অর্ধ শতাধিক মুরব্বিয়ান ঘোষনা পূর্বক একটি কাগজে স্বাক্ষর করেছেন। এ ছাড়াও স্মারক নং ৪৬.০০৯০.২৩.০৪২.০৭.০০৮.১৮/১৬১ মুলে খুরমা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক ও ইউপি সদস্য মো. দবির উদ্দিন স্বাক্ষরিত কপিতে উল্লেখ করা হয়, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির মায়েরকুল জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী সেজে বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ড করিয়াছেন। আব্দুল মছবিবর কখনো মায়েরকোল জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী ছিলেননা।
এ বিষয়ে মায়েরকুল গ্রামের মাজন আলী বলেন, আব্দুল মছব্বির কখনো মায়ের কোল জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী ছিলেন না। তিনি ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে মসজিদের জায়গা আত্মসাত করেছেন। আমার জমিও তিনি হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করছেন। আমার বাড়ী ও জমির নামজারী আপত্তি দিয়ে নামজারী বাতিল করে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ভূমি, সুনামগঞ্জ নামজারী রিভিশন মোকদ্দমা দায়ের করি। মামলাটি শুনানী শেষে আদেশ হয়েছে। তবে আদেশের কপি এখনো আমার হাতে আসেনি।মায়ের কোল গ্রামের মকবুল আলী বলেন, আব্দুল মছব্বির কখনো মায়ের কোল জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী ছিলেন না। তিনি ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে মসজিদের জায়গা আত্মসাত করেছেন।সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির বলেন, আমার বোন প্রবাস থেকে টাকা দিয়েছে আমি জায়গা ক্রয় করেছি। মসজিদের মোতাওয়াল্লী কিভাবে হয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন আপনার কাছে বলবো কেন ? এ সময় তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে অসৌজন্যমুলক আচরন করেন।দক্ষিণ খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিন ও ইউপি সদস্য মো. দবির উদ্দিন জানান, মায়ের কোল গ্রামের মুরব্বিয়ানদের স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রত্যয়ন করেছি যে, আব্দুল মছব্বির কখনো মায়ের কোল জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী ছিলেন না।