মরণোত্তর স্বীকৃতির দাবি  মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস বন্দী ছিলেন মাওলানা ঈসমাঈল

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ গ্রামবাসীকে পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়ে দীর্ঘ ৯ মাস পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে অন্তরীণ থাকা পিতা মাওলানা ইসমাঈল মিয়ার মরণোত্তর স্বীকৃতি চান ছেলে আবুল কাশেম।গত ১৩ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বরাবরে দেয়া লিখিত আবেদনে তিনি এ দাবি জানান। মাওলানা ইসমাঈল হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার শেখের মহল্লা গ্রামের মরহুম মশরফ মিয়ার পুত্র।
আবেদনের অনুলিপি সুত্রে বানিয়াচং থেকে সংবাদদাতা জানান, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ওই সালের ১৮ এপ্রিল স্থানীয় এরালিয়া মাঠে মাওলানা ইসমাঈল মিয়া কিছুসংখ্যক এলাকাবাসী নিয়ে সমাবেশ করেন। সমাবেশে তিনি পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং সকলকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান।
খবর পেয়ে পাকিস্তানী হায়েনারা ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে অদম্য সাহসী মাওলানা ইসমাঈলকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় এবং শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের টর্চার সেলে বন্দী করে রাখে। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ওখানে বন্দী অবস্থায় অনেক নির্যাতন সহ্য করেন। বীর বাঙালি যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করলে মাওলানা ইসমাঈল বন্দীশালা থেকে মুক্তি পান এবং বাড়ি ফিরে আসেন।

স্বাধীনতা উত্তর সময়ে তিনি বানিয়াচং থানা রিলিফ কমিটির সদস্য মনোনীত হন। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন এলআর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অরবিন্দু বাবু। রিলিফ কমিটির মাধ্যমে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বানিয়াচংয়ের নিরীহ হতদরিদ্র মানুষজনকে সঠিকভাবে খাবার, ওষুধ, কাপড়সহ মানবিক সহায়তা দেয়া হয়।মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকের সংগঠক মাওলানা ইসমাঈল মিয়ার পুত্র আবুল কাশেম জানান, সভা শেষে বাড়ি ফেরার পর রাতে পাকিস্তানী সৈন্যরা আমার বাবাকে গ্রেফতার করে নেয়ার সময় আমাদের পরিবারের সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি। তখন তিনি আমাদের শান্তনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমরা কেঁদো না। দেশের জন্য যদি আমার মৃত্যুও হয়, আমি তা হাসিমুখে মেনে নেবো।মাওলানা ইসমাঈল ১৯১৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৬ সালে মারা যান। তিনি স্থানীয় যাত্রাপাশা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।আবুল কাশেম আরও বলেন, আমার পিতা যে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে গিয়ে পাক হানাদারদের ক্যাম্পে বন্দী ছিলেন, তার সত্যতা জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জিজ্ঞেস করলেই পাওয়া যাবে। তিনি তার পিতাকে মরণোত্তর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিতে সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।এ ব্যাপারে বানিয়াচংয়ের ইউএনও পদ্মাসন সিংহ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বরাবরে একটি দরখাস্ত পাঠিছেন মরহুম মাওলানা ইসমাঈল মিয়ার পুত্র আবুল কাশেম। ওই আবেদনের একটি অনুলিপি ইউএনও অফিসে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা আসলে তদন্ত করে যথাযথ প্রতিবেদন পাঠাবো।

You might also like