মসজিদ না ভাঙার সিদ্ধান্ত: সৈয়দ শাহ শাসুদ্দিন (র:) দরগাহ জামে মসজিদ নিয়ে লিডসে সমাবেশ
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডন : যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সৈয়দপুরবাসীর এক সমাবেশে গ্রামের ঐতিহাসিক স্থাপনা সৈয়দ শাহ শাসুদ্দিন (র:) দরগাহ জামে মসজিদ না ভাঙার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ১৫ই এপ্রিল ইয়র্কশায়ারের লিডস শহরে সর্বস্তরের গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যাক্তিত্ব আজহার কোরেশীর আহবানে লিডসের বাংলাদেশী কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত এই সমাবেশে অভূতপূর্ব নাড়া দেন প্রবাসী সৈয়দপুরের জনসাধারণ। বিষয় ছিলো সৈয়দপুর দরগাহ জামে মসজিদ সংস্কার না পুনঃনির্মান। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মসজিদকে বহাল রেখে সবাই সংস্কারের পক্ষে রায় দেন।
মওলানা ফয়েজ আহমদের পবিত্র কুরআন তেলওয়াত এর মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিশিষ্ট গীতিকার ও গল্পলেখক সৈয়দ দুলাল। সভাপত্বি করেন সাণ্ডারল্যাণ্ড জামে মসজিদ কমিটির সাবেক সভাপতি সৈয়দ ফারুক আহমদ। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে আগত সৈয়দপুরবাসীর স্বতঃস্ফুর্ত উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়। প্রায় ৭শ বছরের একটি ঐতিহ্যের প্রতি সবাই ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। এ বিষয়ে একে একে সবাই নিজেদের অভিব্যাক্তি তোলে ধরেন। অনুষ্ঠানের বক্তাগণ আহবায়ক আজহার কোরেশীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে মসজিদ প্রসঙ্গে অনেক আনুসঙ্গিক বিষয়ও উপস্থাপন করেন। মসজিদটি আগের অবস্থায় রেখে সংস্কার করার ক্ষেত্রে তাদের মূল যুক্তি ছিলো, যেহেতু এই মসজিদ এখনো ব্যবহারযোগ্য এবং দুতালা বিশিষ্ট মসজিদটির যথেষ্ট পরিমান পরিসর রয়েছে তাহলে অযথা ইসরাফ বা অপচয় করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারন থাকতে পারে না। ইসরাফের ব্যাপারে আমাদের আলেম সমাজ অনেক সচেতন রয়েছেন, মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, এমন কোন অবকাঠামোগত ঝুঁকিও দেখা দেয়নি যে, গ্রামের ঐতিহ্যের প্রতিক মসজিদটি ভেঙে ফেলতে হবে। মসজিদে নামাজ আদায় করার জন্য যতটুকু স্থান রয়েছে, সেসব স্থান পাঞ্জেগানা নামাজের সময় কতোটুকু পূর্ণ হয় তাও দেখার বিষয় বটে।
কমিউনিটি ব্যাক্তিত্ব সৈয়দ খালিদ মিয়া ওলিদ ভূমিকা পর্বে বলেন, আমরা মসজিদ সম্পর্কে যে সিদ্ধান্ত নেবো তা গ্রামের মুরুব্বীদের অবগত করানো হবে। আমরা কারো পক্ষে বা বিরুদ্ধে কোনো উদ্যোগ নেই নাই। মসজিদটি যেহেতু সকলের তাই প্রবাসীদেরও মতামত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজ আমরা স্বাধীনভাবে সবার মতামত ব্যাক্ত করবো। এই মতামতের ভিত্তিতেই আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
অনষ্ঠিানের মূল আহবায়ক আজহার কোরেশী সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আপনারা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। কারণ, আপনারা বুঝতে পেরেছেন সৈয়দপুরের ঐতিহ্যবাহী দরগাহ জামে মসজিদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রসঙ্গ। কোনোভাবেই তা অবজ্ঞা করা যায় না। আপনারা যে অভিমত রাখবেন সেটাই আমরা চূড়ান্ত বলে গণ্য করবো। দেশের ভাই-বন্ধুরা অবশ্যই এর সম্মান রাখবেন।
তিনি আরো বলেন, মসজিদ সংস্কারের ব্যাপারে আমার দ্ব্যর্থ সমর্থন রয়েছে। এবং এর কৌশলগত দিকও আমরা বিবেচনায় রাখবো।
সাণ্ডারল্যাণ্ড কমিউনিটি নেতা সৈয়দ মঞ্জুরুল হক তালহা বলেন, বাংলাদেশে মসজিদ ভাঙা নিয়ে যারা ভাবছেন তাদের পূর্বে ভাবা উচিত যে, এ ক্ষেত্রে কোনো আইনি জটিলতা আছে কি না। বর্তমান পরিস্থিতে আমরা সর্বসম্মতিতে ক্রমে মসজিদ সংস্কার করার পক্ষে। ভাঙার কোনো প্রয়োজন নেই।
এ বিষয়ে লীডস কমিউনিটির অন্যতম ব্যাক্তিত্ব সৈয়দ সালিক মিয়া বলেন, দরগাহ মসজিদের ব্যাপারে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। আমরা অবশ্যই একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবো। এই মসজিদকে বহাল রেখে আমরা পুনঃসংস্কার করবো।
কবি মাশুক ইবনে আনিস বলেন, আমাদের গ্রামের ৯০ ভাগ প্রতিষ্ঠান প্রবাসীদের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত হয়। সে হিসেবে কোনোভাবেই প্রবাসীদের মতামতকে উপেক্ষা করা যাবে না। আমাদের মুরুব্বিরা যে সিদ্ধান্ত নেন আমরা সেসব সিদ্ধান্তকে মান্য করি। তারাও নিশ্চয়ই আপনাদের যুক্তিসঙ্গত মতামতের গুরুত্ব দেবেন।
কাদের কোরেশী মসজিদের রাস্তার ব্যাপারে গুরুত্ব দেন। তিনি মসজিদ ভাঙার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন।
কাউন্সিলার সৈয়দ শেখুল ইসলাম বলেন, আমাদের কোনো কিছু নিয়ে এতো তাগাহুড়ো করার দরকার নেই। ধীরেসুস্থে উদ্যোগ নেয়া দরকার। অবকাঠামো ভেঙেফেলার ক্ষেত্রেও তিনি দ্বিমত পোষণ করেন। একটি ঐতিহ্যকে রাতারাতি সিদ্ধান্ত নিয়ে ভেঙেফেলা অত্যন্ত গর্হিত কাজ।
লণ্ডন সৈয়দপুর শামসিয়া সমিতির সহ-সভাপতি সৈয়দ জিল্লুল হক অপচয় সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে বলেন। ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়ে যারা ইতিমধ্যে একটি ডিজাইন সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করেছেন এ থেকে তাদের অভিসন্ধি সস্পর্কে অনুমান করা যায়। একটি গোষ্ঠী পূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়ে এসব তোড়জোর করছেন যা মসজিদ ও গ্রামের ঐতিহ্যকে ক্ষুন্ন করেছে। আমরা চাইবো, মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষার্থে মসজিদটি না ভেঙে এর প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হোক।
লণ্ডন সৈয়দপুর সমিতির অন্যতম সহ-সভাপতি সৈয়দ মিসবাহ আহমদ আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমান মসজিদে যে পর্যাপ্ত পরিমান নামাজের জায়গা রয়েছে তা পূর্ণ হয় না। জুম্মাবারের নামাজের সময় অধিকাংশ সম্পূর্ণ খালি থাকে। পাঞ্জেগানা নামাজে কয়টা লাইন পুরন হয় সেটা কেউ লক্ষ্য করেছেন? তাহলে কীসের ভিত্তিতে মসজিদটি ভেঙে ফেলে আরো বড় পরিসরের প্রয়োজন দেখা দিলো? কর্মহীন কর্মফলানো এক ধরণের ফ্যাশন। মসজিদ নিয়ে এ ধরণের আজগুবী পরিকল্পনা থেকে বিরত থাকা উচিত। না ভেঙে এর অবকাঠামোর সংস্কার করা যেতে পারে।
সাপ্তাহিক সুরমার সাবেক সম্পাদক কবি আহমদ ময়েজ সারসংক্ষেপভাবে তার বক্তব্য তোলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রথমে দেখা দরকার কাঠামোগত পরিবর্তন করতে হলে এর মানদণ্ড কি, দ্বিতীয়ত নতুন পরিসরের জন্য কি কোনো আবেদন রয়েছে? যদি তা না থাকে তাহলে অযথা অর্থ অপচয় করার কোনো দরকার নেই। এর ঐতিহ্যকে অক্ষুন্ন রাখাই যুক্তিযুক্ত হবে।
লীডস কমিউনিটি নেতা সৈয়দ ফজলুল হক চুনু বলেন, আমি কখনো মসজিদ ভাঙার পক্ষে নই। হ্যা, এর সংস্কার অপরিহার্য হতে পারে। তাই এর আলোকে সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি ভালো উদ্যোগ নেয়া জরুরী।
পৌষমাউথ এর কমিউনিটি নেতা শেখ আব্দুল মুকিত বলেন, বিভিন্ন সময়ে মসজিদের সংস্কার করা হয়েছে। ভাঙা বা না ভাঙা পরের বিষয়। আগে দেখা দরকার এর প্রয়োজনীয়তা কতোটুকু রয়েছে। অন্যদিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রাম থেকে মিটিং করে বলা হয়েছে প্রবাসীদের সাথে তারা সমন্বয় করবেন কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর সমন্বয় কোনো অর্থবহ হয় না। এর অর্থ হলো, আমরা কেবল অর্থদান করবো কোনো মতামত রাখতে পারবো না। এ ধরণের মানসিকতা খুবই অপমানজনক।
তিনি বলেন, মসজিদ যদি উপযুক্ত কাঠামোর মধ্যে না থাকে, এর কোনো টেকনিকেল ফল্ট থাকে তাহলে ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে এর সল্টটেস্ট করা যেতে পারে। রিপোর্টের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। ভেঙে ফেলে তো আর এসব করা যাবে না।
সাণ্ডারল্যাণ্ড এর কমিউনিটি নেতা সৈয়দ আলা মিয়া বলেন, আমার মনে হয় আমাদের সম্মিলিতভাবে একটি মতামত দেয়া দরকার। মসজিদ এর জন্য ফাণ্ড না করে ভাঙা ঠিক হবে না। আমি চাই না মসজিদ ভাঙা হোক, বরং সংস্কার করাই যুক্তিযুক্ত।
বার্মিংহামের কমিউনিটি নেতা সৈয়দ আলী আহসান বলেন, আমার মনে হয় সর্বসম্মতির ভিত্তিতে আমাদের সিদ্ধান্ত দেশে জানিয়ে দেয়া হোক।
সাবেক ইউপি মেম্বার সৈয়দ শাহেদ আহমদ মসজিদ না ভাঙার জন্য মতামত ব্যক্ত করেন।
সৈয়দ জিয়াউল বারী বলেন, গ্রামের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ ভাঙার পক্ষে নয়। এবং প্রবাসেও আমরা ভাঙার ব্যাপারে একমত নই। একই মতামত ব্যাক্ত করেন রফিক শিকদার।
বিশিষ্ট তরুণ ব্যবসায়ী সৈয়দ সোহেল আহমদ বলেন, মসজিদ সবার। কারোর বিরুদ্ধে আমরা দাড়াইনি। মসজিদের ব্যাপারে আমাদের কথা বলার অধিকার রয়েছে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় মতামত ব্যাক্ত করে বলেন, মসজিদ ভাঙা যাবে না। কেউ না থাকলেও আমি একাই এর প্রতিবাদ করবো।
সৈয়দ কবির আহমদ বলেন, এখানে যেসব মুরুব্বী আছেন তারা এ বিষয়ে বলার জন্য যথেষ্ট। তবে আপনারা এ বিষয় নিয়ে কি কোনো টিম বানিয়েছেন? যদি না করেন সেটা আগে করা দকার। আর টিমের মাধ্যমে দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। এবং ভাঙার ব্যাপারে আমাদের মতামত জানিয়ে দিবেন।
শেখ রেজওয়ান আহমদ বলেন, আপনারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সে বিষয়্ সহমত জানাচ্ছি। আমার বিশেষ দাবী থাকবে, মসজিদে যাতায়াত ব্যবস্থার দিকে অধিক জোর দেয়া দরকার।
সৈয়দ মাওলানা মাসুদ বলেন, দরগাহ মসজিদ আমাদের ঐতিহ্য ও আমাদের পবিত্র স্থান। মসজিদ নিয়ে আমাদের বিতর্কে যাওয়া ঠিক নয়। দরকারী বিষয়ের উপর প্রাধান্য দেয়া দরকার।
শাহবির কোরেশী তার স্পষ্ট মতামত তোলে ধরে বলেন, আর্কিটেক্টরা যদি কোনো মতামত দেন যে মসজিদ ভেঙে পড়ার মতো হুমকির মুখে রয়েছে তবেই আমরা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারি। কিন্ত এ ধরণের কোনো আশঙ্কা আমাদের সামনে নেই। তাহলে সংস্কারই করা হোক।
ছড়াকার সৈয়দ হিলাল সাইফ বলেন, গ্রাম আমাদের, তাই সিদ্ধান্তও হবে আমাদের। প্রবাসীদের উপেক্ষা করে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে আবার অযাচিতভাবে প্রবাসীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া কোন সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিতে পারিনা। আমরা প্রবাসীরা শুধু টাকার যোগান দাতা হয়ে থাকতে চাই না। গ্রামবাসীকে আগে ভাবা উচিৎ আগে মসজিদ ভাঙা জরুরী না ঈদগাহ এবং রাস্তা ঘাট গড়া জরুরী।
লীডস কমিউনিটির তরুণ নেতা মল্লিক ওয়াহিদ মিয়া মিয়া বলেন, মসজিদ ভাঙার প্রশ্নই আসে না বরং নির্মাণ কমিটি ভেঙে সংস্কার কমিটি গঠন করা হোক।
নর্থাম্পটন কমিউনিটি নেতা শহীদ আহমদ বলেন, আমাদের ঐতিহ্যবাহী মসজিদটা ভেঙে ফেলা ঠিক হবে না। আমরা এর সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করি।
সাউথশিল্ড কমিউনিটি নেতা মোহাম্মদ মকসুদ কোরেশী বলেন, মিনার বানানোর কথা বলে অনেকের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছেন কিন্তু সে বিষয় আড়াল করে তারা গোপনে মসজিদ ভাঙার পরিকল্পনা করেছেন। এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ।
যুক্তরাজ্য সৈয়দপুর যুব পরিষদের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আফফান বলেন, অতীতে রাতে মসজিদ ভেঙে ফেলার নজির রয়েছে। বর্তমানেও সে ধরণের উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশে মসজিদ ভাঙার পায়তারা যারা করছেন তারা যদি তা করেই ফেলেন, তাহলে অবৈধভাবে ঈদগায়ের যে জায়গাটুকু আগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো তা যেন ফেরৎ দেয়া হয়। এ জটিলতা থেকে রক্ষা পেতে হলে মসজিদ না ভাঙলেই তারা মুক্তি পাবেন।
সৈয়দপুর যুব পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক সৈয়দ মাহফুজ আহমদ বলেন, কেউ কেউ অপপ্রচার চালাচ্ছেন, এটা নাকি কোনো এক গোষ্ঠীর মিটিং। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো আমি কি সেই গোষ্ঠীর মধ্যে পড়ি? আজকের মিটিং প্রমাণ করে তাদের অপপ্রচার ব্যর্থ হয়েছে। আমরা চাইবো এসবে কান না দিয়ে মসজিদটি সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হোক।
জগন্নাথপুর উপজেলার গত নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, তরুণ সমাজকর্মী সৈয়দ তুহেল কতিপয় ব্যক্তির মসজিদ ভাঙার পরিকল্পনার বিস্তারিত অবহিত করেন সমাবেশকে। বলেন, এনিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে একটা দ্বিধাবিভক্তি আসবে আশঙ্কা করেই আমি বাড়ীতে থাকাকালীন মোতাওয়াল্লী সাহেবের সাথে দেখা করে অনুরুধ করেছিলাম, দেশ-বিদেশের সর্বস্তরের গ্রামবাসীর ঐক্যমত ছাড়া আমাদের ঐতিহ্যের প্রতিক দরগা জামে মসজিদ ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবেনা। উনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন, সবার মতামত ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হবেনা। কিন্তু দেশ ছাড়ার পর এখন শুনছি কোন মতামত গ্রহন ছাড়াই তারা ভাঙার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি খুবই দুঃখজনক।
লাইসিয়াম স্কুলের অন্যতম পরিচালক সৈয়দ জাবের বলেন, একটা বিষয়ে আমরা একমত যে আমরা সবাই প্রবাসী। আমরা যখন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাই প্রবাসের টাকা দিয়েই তা পরিচালিত হয়। প্রবাসীদের ন্যায্য দাবী মূল্যায়ন করেই দরগাহ মসজিদের উন্নয়ন করতে হবে। আমরা চাইবো মসজিদটি না ভেঙে সংস্কার করা হোক।
সৈয়দ জামিল বলেন, আজকের মিটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ অপেক্ষা করছেন আপনাদের সিদ্ধান্ত জানার জন্য। আপনারা তাদের বঞ্চিত করবেন না। তিনি প্রবাসীদের অবদানের গুরুত্ব তোলে ধরে বলেন, প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়ে একটি নির্মাণ কমিটি গঠন করা হোক।
কিডিমিনিস্টার এর সাবেক কাউন্সিলার সৈয়দ মমসাদ বলেন, আমাকে বলা হয়েছিলো মিনার ভেঙে পুনঃনির্মান করা হবে। এখন শুনছি মসজিদ ভাঙার কথা।। এক কথা বলে অন্য কিছু করা নিশ্চয়ই শোভন নয়।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আমাদের গ্রামে বর্তমানে ৩৭টি উল্লেখযোগ্য মসজিদ রয়েছে। এর সঙ্গে বাড়ি বাড়ি রয়েছে পাঞ্জেগানা মসজিদ। মসজিদ তো মুসল্লিদের জন্য। কিন্তু সেই মুসল্লি কোথায়? তিনি মসজিদে যাতায়াত প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এসব নিয়ে কারোর চিন্তা নেই। এসব সমস্যাকে সংস্কার কাজে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
সব শেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি সৈয়দ ফারুক আহমদ সবাইকে ধন্যবাদ জানান তাদের মূল্যবান মতামত তোলে ধরার জন্য।
তিনি বলেন, আপনাদের সবার বক্তব্য থেকে একটি বিষয়ই জোরালোভাবে গুরুত্ব পেয়েছে তাহলো আপনারা মসিজদ সংস্কার করতে চান, ভাঙতে চান না। তাহলে প্রতিয়মান হয় যে সর্বসম্মতিক্রমে মসজিদ না ভাঙারই সিদ্ধান্ত এসেছে।
সভাপতি আরো বলেন, মসজিদ আল্লাহর ঘর, এতে ব্যাক্তিগত মত চাপিয়ে দেয়ার বিষয় নয়। অধিকাংশের মত মসজিদটি না ভেঙে সংস্কার করার কথা আপনারা সবাই জানিয়েছেন। আমি সবার মতামতকে সম্মান করি। তিনি বলেন, অর্থ কোনো সমস্যা নয় সেটার ব্যবস্থা ইনশাহআল্লাহ হয়ে যাবে। দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, সিদ্দিক আলী, সৈয়দ শাহেদ ইমরান, সৈয়দ কামরান, সৈয়দ সাজন আলী, আহমদ সৈয়দ শাহনুর, সৈয়দ রিয়াদ আহমদ, শাহজম কোরেশী, সৈয়দ মুকরামিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ শফর আলী, সৈয়দ তোফায়েল আহমদ, সৈয়দ জয়েব আহমদ, সৈয়দ জয়েদ মিয়া, সৈয়দ ইমরান আহমদ, সৈয়দ দব্বির আহমদ, সৈয়দ ফরহাদ আহমদ, সৈয়দ মজনু মিয়া, সৈয়দ সজনু মিয়া, সৈয়দ আব্দুল মন্নান, সৈয়দ সুয়েজ, মোহাম্মদ সুহেল মিয়া, সিফতুল আমিন, সৈয়দ আবিদুল খাঁ। সৈয়দ নাসির আহমদ, কয়েস মিয়া, সৈয়দ এহসান আলী, সৈয়দ আলফু মিয়া, সাদিক কোরেশি, সৈয়দ মিশকাত, সৈয়দ শাহ নেওয়াজ, সৈয়দ আজমান আলী, সৈয়দ জহরুল ইসলাম, মসব্বির আলী, আমিনুর রহমান, মোহাম্মদ আনার মিয়া, সৈয়দ লাবিদ আহমদ, সৈয়দ কাবিল আহমদ, সৈয়দ লালসাদ, সৈয়দ মিনহাজ, সৈয়দ জিলু মিয়া, সৈয়দ আহসান, সৈয়দ রব্বানী, সৈয়দ শাকির আহমদ, মোহাম্মদ এমদাদ, সৈয়দ দোলন আহমদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন শহর থেকে আগতদের নিয়ে একটি কমিটি করা হয়। পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে বলে উদ্যোক্তারা জানান।
লীডস শামসিয়া সমিতির সভাপতি সৈয়দ মহফুজ আলীর উদ্যোগে সবাইকে আপ্যায়ন করানো হয়।