মসজিদ ভাঙ্গার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ, প্রতিবাদ নর্থ-ইস্ট সৈয়দপুরবাসীর: দেশে-বিদেশে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

সৈয়দ হিলাল সাইফ
সত্যবাণী

লন্ডন: সৈয়দ শাহ শামসুদ্দিন (রঃ) দরগা জামে মসজিদ ভাঙার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশে বসবাসরত সৈয়দপুরের সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আলোচনা সমালোচনার পাশাপাশি বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। গত দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের মতামত প্রকাশ করে এ বিষয়ে ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ।

সম্প্রতি সৈয়দপুর দরগা মসজিদকে ভেঙ্গে পূনঃনির্মান করতে চাইলে এমন পরিস্থিতির সৃস্টি হয়।

৭ই মার্চ, বৃহস্পতিবার সান্ডারল্যান্ড বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টারে নর্থ-ইস্ট সৈয়দপুরবসীর উদ্যোগে মসজিদ ভাঙার এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সান্ডারল্যান্ড শহরের বিশিষ্ট কমিউনি নেতা, প্রবীন মুরব্বি সৈয়দ ফারক মিয়ার সভায় অনুষ্টিত এই সভায় ব্রিটেনসহ বহির্বিশ্বে বসবাসরত প্রবাসী সৈয়দপুরবাসী ও গ্রামে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষের কোন মতামতের তোয়াক্কা না করে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি ভাঙার এমন অপসিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, কারা, কোন স্বার্থে গ্রামের সাধারণ মানুষের মতামতের তোয়াক্কা না করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে গ্রামবাসী তা জানতে চায়।
সান্ডারল্যান্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ও কমিউনিটি নেতা সৈয়দ মঞ্জুরুল হক তালহার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে
পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন, হার্টলিপূল শহরের কমিউনিটি নেতা, সৈয়দ মুকাররাবিন আহমদ।

উল্লেখ্য; সৈয়দপুর গ্রামের ঐতিহ্যের ধারক-বাহকের অন্যতম নিদর্শন এই দরগা জামে মসজিদ। সৈয়দপুরের হাজারো মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার স্থান এই মসজিদ। এখানে শায়িত আছেন, অলিকুল শিরোমণি ‘হযরত শাহজালাল রহঃ’ অন্যতম সফর সঙ্গী হযরত ‘শাহ শামসুদ্দিন রহঃ’। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সৈয়দপুরে সৃস্টি হওয়া অনেক বড় বড় সমস্যার সমাধান হয়েছে মসজিদ সংলগ্ন, মাজার ও তেঁতুল গাছের তলায় অনুষ্ঠিত গ্রামবাসীর জমায়েতে। সৈয়দপুরের অধিকাংশ মানুষ বিদেশে বসবাস করেন। তার মধ্যে যুক্তরাজ্যে সবচে বেশি সংখ্যক লোক রয়েছেন।এ ছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদিআরব, ইতালিসহ আরো অনেক দেশে রয়েছেন সৈয়দপুরের মানুষ। বিদেশিদের সাহায্য সহযোগিতা নিয়েই আজকের এই উন্নত সৈয়দপুর। মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল,পাঠাগারসহ যত প্রকারের প্রতিষ্ঠান টিকে আছে এবং খ্যাতি অর্জন করেছে, তার পেছনে নি:সন্দেহে প্রবাসীদের বড় অবদান রয়েছে।  সিলেট, ঢাকা,সুনামগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন শহরে সৈয়দপুরের কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষ বসবাস করেন। আদর্শ গ্রাম বিনির্মানে সবার রয়েছে উল্লেখ যোগ্য অবদান।

অথচ, দেশে বিদেশে ছড়িয়ে থাকা অগণিত মানুষের কোন মতামত না নিয়েই মসজিদ ভাঙ্গার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন হাতে গোনা কিছু লোক। হাজারো মানুষকে উপেক্ষা করে নেওয়া সিদ্ধান্তের তিব্র প্রতিবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রাকাশ হলে নড়েচড়ে বসেন গ্রামের মানুষ। শান্তিপূর্ণ সমালোচনা ও সভা সমাবেশে ব্যক্ত করেন তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। এরই ধারাবাহিকতায় সান্ডারল্যান্ড কমিউনিটি সেন্টারের সভায় বিভিন্ন শহর থেকে আসা মানুষজন নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন তাদের বক্তব্যে।

কমিউনিটি নেতা ও অনুষ্ঠানের সভাপতি সৈয়দ ফারুক মিয়া বলেন, আমি চাইনা সৈয়দপুর গ্রামের একজন মানুষকেও অবজ্ঞা করে মসজিদ সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। এই গ্রামের যে ব্যক্তি ভিক্ষা করে খায়, তারও মতামত রাখার অধিকার আছে। কোন কিছু করতে হলে সবার মতামতের ভিত্তিতে করতে হবে। বর্তমানে তিনি সৈয়দপুর গ্রামের অন্যতম বয়স্ক মুরব্বি দাবি করে মসজিদের প্রাচীন ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন তিনি।

সান্ডারল্যান্ড কমিউনিটি সেন্টারের অনেকবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট কমিউনি নেতা
সৈয়দ খালিদ মিয়া অলিদ বলেন, দরগা মসজিদ নিয়ে তুমুল সমালোচনার কারণ এবং বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের সবার জানা। আমি চাচ্ছি, পবিত্র রমজান ও ঈদের শেষে যুক্তরাজ্যের সর্বস্তরের সৈয়দপুরের জনসাধারণ নিয়ে ব্যাপক ভাবে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হোক। আর সেখানেই সকলের উপস্থিতিতে মসজিদ ভাঙ্গা না সংস্কার হবে বা কীভাবে নির্মান হবে গঠনমূলক আলোচনা পর্যালোচনার মাধ্যমে তা ঠিক করা হবে। সৈয়দপুরের নর্থ-ইস্টবাসীর পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ মসজিদ ভাঙ্গার বিপক্ষে সকলেই আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরা কারো বিপক্ষে নই। সবাইকে নিয়ে কাজ করার পক্ষে।

সান্ডারল্যান্ড কমিউনিটি নেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ মনজুরুল হক তালহা বলেন,
মসজিদ সংস্কারের সাথে সাথে পূর্ব এবং পশ্চিমে আসা-যাওয়ার রাস্তার সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

সান্ডারল্যান্ড বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জিয়াউল বারী বলেন, আমাদের বর্তমান যে মসজিদ আছে তা ভাঙ্গা হলে অপব্যায় ছাড়া আর কিছুই হবে না।

সাউথশিল্ড কমিউনিটি ও চেয়ারম্যান পদে একসময় প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী  নেতা (৭ নং সৈয়দ পুর শাহার পাড়া ইউনিয়ন) মো মকসুদ কোরেশি বলেন, গ্রামে কোন নামি-দামি ব্যক্তি আসলে যখন নামাজ আদায় করতে এবং মাজার জিয়ারত করতে দরগা মসজিদে যেতে চান, গাড়ি হালিছাড়া মাঠে রেখে হেঁটে যেতে হয়। সেই দিকে কারো কোন খেয়াল নাই। অথচ মসজিদ ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত তারা নিয়ে ফেলেছেন।মসজিদ নিয়ে সেচ্ছাচারিতার জবাব দেয়া এখন আমাদের ঈমানী দায়িত্ব মনে করি।

হার্টলিপূলের কমিউনিটি নেতা সৈয়দ মুকাররাবিন আহমেদ বলেন, সৌন্দর্য বাড়াতে দুইদিকে দুটি মিনার হতে পারে। আমাকে এভাবে বলাও হয়েছিলো।এখন কে বা কারা মসজিদ ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিলো সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।মসজিদ ভাঙ্গা হলে অপব্যায় হবে, আর অপব্যায় কারা করে, সেই হাদিস আমরা সকলেই জানি।

সভায় বক্তব্য রাখেন, সৈয়দ ফারুক মিয়া, সৈয়দ খালিদ মিয়া ওলিদ, সৈয়দ জিয়াউল বারী,  সৈয়দ জিলু মিয়া, মোহাম্মদ মকসুদ কুরেশি, সৈয়দ জয়েব আহমদ,  সৈয়দ মিজান,  সৈয়দ আবুমুছা আহসান, সৈয়দ কামরান হোসেন, সৈয়দ মুতমাইন আহমদ, সৈয়দ মারহানুল হক, সৈয়দ শাহনেওয়াজ আহমদ, সৈয়দ হুমায়ুন রশিদ, সৈয়দ মুকাররাবিন, সৈয়দ মিজান আহমেদ, মোহাম্মদ নওশাদ আহমদসহ আরো অনেকে।

ঈদের পরেই যুক্তরাজ্যে বসবারত সর্বস্তরের সৈয়দপুরবাসীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বৃহৎ আকারে একটি বড় সভার আয়োজন করার ঘোষণা দেয়া হয় সভায়। সকলের সুবিধার্থে  লীডস শহরকে পরবর্তা সভার স্থান নির্ধারণ করা হয়। এই সভার তারিখ  সবাইকে শীঘ্রই জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানানো হয়।

You might also like