মানব মুক্তির লড়াইয়ে অজয় রায়ের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে:সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহবান

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ আমরা প্রতিনিয়ত ব্যথিত হই, বেদনাহত হই, বিবেকের তাড়নায় আমরা দংশিত হই- যখন দেখি প্রতিদিন আমাদের গৌরবাম্বিত অর্জনগুলো বিসর্জিত হচ্ছে। সম্প্রীতি, সহ-অবস্থান ও বৈষম্যমুক্তির যে স্বপ্ন লালন করে ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম তা আজ অনেকটা কাগজে বাঘে পরিণত হচ্ছে। সর্বশেষ মিথ্যা অজুহাতে শারদীয় উৎসবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা ও বাড়িঘর লুন্ঠনের যে ঝড় বয়ে চলেছে তা বিবেকবান দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা কোনো বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারেন না। আজ প্রতিবাদ করার মতো একজন সাহসী উদ্যোগী প্রগতিশীল মানবিক ব্যক্তিত্ব খুবই প্রয়োজন। অজয় রায় ছিলেন আমাদের প্রগতির লড়াইয়ের আলোর দিশারী।

আজ ১৭ অক্টোবর, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অজয় রায়ের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেলা ১১টায় প্রয়াত নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত মন্তব্য করেন।সভার শুরুতে প্রয়াত নেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এ সময় প্রয়াত নেতার স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চ, ঐক্য ন্যাপ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় শ্রমিক জোট, ইমারত নির্মান শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) মনিসিংহ ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ঢাকা মহানগর, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক, গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ডাঃ শহীদ উল্লাহ শিকদার, সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট এস এম এ সবুর, সম্মিলিত সামাজিক

আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. অসিত বরণ রায়, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির, ছানোয়ার হোসেন সামছি, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ, ঢাকা মহানগর নেতা জুবায়ের আলম, প্রয়াত নেতার স্ত্রী জয়ন্তী রায় প্রমুখ।আরও উপস্থিত ছিলেন নাজমুল হক প্রধান, সাধারণ সম্পাদক- বাংলাদেশ জাসদ, মাহমুদুর রহমান মানিক, পলিট ব্যুরো সদস্য- বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি, সাইদুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক- রোড সেফটি ফাউন্ডেশন, কাজী সালমা সুলতানা, সাম্পাদক মন্ডলীর সদস্য- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ, চঞ্চনা চাকমা, আদিবাসী ফোরাম, গণতন্ত্রী পার্টির প্রচার সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন হোসেন।সভা পরিচালনা করেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ।

সভায় পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ক্ষুধা দারিদ্র, বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত স্বপ্নের বাংলাদেশে এখন ক্ষমতার লড়াইয়ে পরাজিত সাম্প্রদায়িক শক্তিই মুখ্য হয়ে উঠেছে। এদের দুধ কলা দিয়ে সবাই মাথায় তুলেছে। আজ সমাজের দুর্বল জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘু ও আদিবাসীরা অসহায়। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অজয় রায়ের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাস্ত করতে হবে। অজয় রায় আমৃত্যু আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক নতুন প্রজন্মকে তৈরির স্বপ্নে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছেন।আজকে আমাদের এই কাজ জোরদার করতে হবে।শাহ আলম বলেন, অজয় রায়ের স্মৃতি সত্যিই অমলিন হবে, যদি আমরা সামাজিক বৈষম্য নিরসন করতে পারি। ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে মানবমুক্তির লড়াইকে এগিয়ে নিতে পারি। তবেই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে সম্মান জানানো হবে। অজয় রায় আমৃত্যু এই লড়াইয়ে শামিল ছিলেন।
সভায় অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সোচ্চার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন,সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করতে হলে সকল অসাম্প্রদায়িক চিন্তার রাজনৈতিক,সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, আদিবাসী, শ্রমিক, কৃষক,ছাত্র, জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।সভায় সাম্প্রতিক সময়ে শারদীয় দূর্গাপুজাতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মুসলমান সম্প্রদায়ের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান শরীফ ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতাদের দ্রæত খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি বিধানের দাবী জানান বক্তারা। একই সাথে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা বন্ধ করা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানানো হয়। তা ছাড়া বৈশি^ক করোনা মোকাবেলা, ডেঙ্গু মোকাবেলা ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি প্রতিরোধে দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আহŸানও জানান বক্তারা।

You might also like