মামুনুলকে নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন বিএনপির মাওলানা শামীম
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ গ্রেফতার হেফাজত নেতা মামুনুল হককে নগ্ন করে নির্যাতন করা হচ্ছে দাবি করে যুক্তরাজ্য থেকে ফেসবুক ও ইউটিউবে শামীম নামে বিএনপিপন্থী এক মাওলানা গুজব রটাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।যুক্তরাজ্য ওলামা দলের সভাপতি পদবিধারী এই ব্যক্তি ওই ভিডিওগুলোতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান ও তসবি টয়লেটে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন।যদিও ভিডিও বক্তব্যগুলোতে তার কথায় অসংলগ্নতা স্পষ্ট; মনগড়া এসব কথার সপক্ষে কোনও প্রমাণও দেখাতে পারেননি তিনি।ভিডিওগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ে আপত্তিকর নানা মন্তব্যও করেন তিনি।তার এমন বক্তব্যে ব্যথিত তার বাবা।বলেছেন,বাবা হিসেবে তিনি লজ্জিত,তার পরিবার এই মন্তব্যে বিব্রত।গত সোমবার জুনায়েদ আহমেদ নামের একটি ফেসবুক পেজ ও বিডি এসকে মিডিয়া নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে এসব লাইভ সম্প্রচার করেন ওই বিএনপির দেশি-বিদেশি কমিটিতে থাকা কথিত ওই মাওলানা।মুহুর্তেই লাইভটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মাওলানা শামীম সম্পর্কে ঘেঁটে দেখা যায়, Mowlana Shamim নামে তিনি একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছেন।এতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ২ হাজার ৬শ ২৪ জন তার বন্ধু তালিকায় যুক্ত আছেন। বায়োতে তিনি তার দলীয় পরিচয় দিয়েছেন, যাতে লেখা আছে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দল যুগ্ম আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় কমিটি’, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বরগুনা জেলা বিএনপি। তিনি শিক্ষা সম্পর্কিত তথ্য দিয়েছেন, সরকারি মাদরাসা-ই আলিয়া ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। তার ব্যক্তিগত তথ্যে জন্ম সাল উন্মুক্ত করা না থাকলেও তারিখ দেওয়া আছে ফেব্রুয়ারি ৩।
জুনায়েদ আহমেদ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে সোমবার ১১.৫৫ মিনিটে ৩২ মিনিট ৫১ সেকেন্ড লাইভ করেন মাওলানা শামীম। ওই লাইভে তিনি হেফাজত নেতা মামুনুল হককে রিমান্ডের নামে নির্যাতন করা হয়েছে বলে দাবি করেন।এসময় ধর্মীয় উসকানিমূলক আরও বিভিন্ন মন্তব্য করেন তিনি যা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে পারে যে কোনও সময়। তবে এসব মন্তব্যের সপক্ষে কোনও প্রমাণ দেখাতে বা উল্লেখ করতে পারেননি তিনি। তথ্যগুলোর কোনও সোর্সও জানান তিনি।
দেখা গেছে, লাইভটি হেফাজত ও বিএনপি সমর্থিত বিভিন্ন পেজে শেয়ার দেওয়া রয়েছে। একইসাথে ইউটিউবের bd sk media নামের একটি চ্যানেলেও এটি লাইভ প্রচার হয়। এর আগে ১৮ এপ্রিল তিনি নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে লাইভে সরকার পতনের হুমকি দেন। এছাড়া ২৮ মার্চ মাওলানা শামীমের প্রোফাইল থেকে আপলোড করা একটি ভিডিওতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করতেও দেখা গেছে।
কে এই মাওলানা শামীম
মাওলানা শামীম বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের হাড়িটানা গ্রামের আবদুল জব্বার মুন্সির ছেলে। তিনি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা এলাকার একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করেন। পরে ঢাকার গেন্ডারিয়া নেছারিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করেন। আবদুল জব্বার মুন্সির তিন ছেলের মধ্যে শামীম ২য়, বড় ভাই শাহ আলম শাহীন যুক্তরাজ্যে থাকেন, ছোটভাই শাহ জালাল সাইমুন এলাকায় ইট বালু সিমেন্ট ব্যবসা করেন। ২০১০ সালের শুরুর দিকে পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নে বিয়ে করেন শামীম। ওই বছরই ব্যবসা পরিচালনার জন্য শামীমকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যান তার বড় ভাই শাহীন। কিন্তু, শামীমের উগ্র চলাফেরা, আপত্তিকর আচরণের জন্য দু’বছরের মধ্যে বড় ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি ঘটে। বড় ভাইয়ের কাছ থেকে চলে যান শামীম। দীর্ঘ ১১ বছরেও তিনি এলাকায় ফেরেননি। শামীমের স্ত্রী ১০ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান নিয়ে চরদুয়ানী এলাকায় তার বাবার বাড়িতে থাকেন।
রাজনৈতিক পরিচয়
২০১৭ সালে বরগুনা জেলা বিএনপির সবশেষ গঠিত কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয় মাওলানা শামীমকে। এছাড়াও তিনি বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্ববায়ক এবং আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা। মাওলানা শামীম বর্তমানে লন্ডন অবস্থান করছেন। তিনি সেখানেও যুক্তরাজ্য ওলামা দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ ছবিও ফেসবুকে দেখা যায়।
আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে এই শামীম:
মাওলানা শামীমের বাবা আবদুল জব্বার মুন্সি বঙ্গবন্ধুর অনুসারী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন ব্যক্তি। ১৯৬৩ সালে বরিশাল বিএম কলেজে অধ্যয়নরত থাকাকালীন তিনি তৎকালীন ছাত্র সংসদের সহ সভাপতি (ভিপি) আমীর হোসেন আমুর একজন অনুসারী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে তিনি পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের রিলিফ কমিটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তিনি উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। ২০০৮ সালে হজব্রত পালনে যাওয়ার আগে দলীয় সব পদ পদবি থেকে অব্যাহতি নেন। জব্বার মুন্সি বর্তমানে পাথরঘাটা পৌর শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডে বসবাস করেন।
আমার হয়েছে পদ্মফুলে গোবর
ছেলে মাওলানা শামীমের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে বাবা আবদুল জব্বার মুন্সি আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘গোবরে পদ্মফুল হয়, আর আমার হয়েছে পদ্মফুলে গোবর।’ সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া লাইভ ভিডিও সম্পর্কে জানেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি দেখিনি, তবে শুনেছি। সে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে সরকারবিরোধী আপত্তিকর নানা ধরনের কথা বলেছে, যা আমি লোকমুখে শুনেছি। শামীমের কর্মকাণ্ডে আমি বাবা হিসেবে লজ্জিত, আমার পরিবার বিব্রত।’
রাজনীতিবিদদের মন্তব্য:
মাওলানা শামীমের বিষয়ে কথা হয় জেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি মাওলানা শামীমকে বরগুনা জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ দেয়। বিভিন্ন সময়ে ফেসবুক লাইভে স্ট্যাটাসে বিতর্কিত কথাবার্তা বলেছে শামীম, যা আমরা শুনেছি। গ্রেফতার হেফাজত নেতা মামুনুল হককে নিয়ে সম্প্রতি শামীমের ফেসবুক লাইভটি আমি দেখিনি। যেহেতু সে প্রবাসে, তার ব্যাপারে আমার কোনও মন্তব্য নেই।
এবিষয়ে পাথরঘাটা উপেজলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাবির হোসেন বলেন, ‘মাওলানা শামীমকে শিক্ষাজীবনে ছারছিনার একজন অনুসারী হিসেবে চিনতাম। তার বাবা আবদুল জব্বার মুন্সি দীর্ঘবছর আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনা নিয়ে গুজব ছড়ানোর পর আমি জানতে পারি সেই শামীম বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছে। সেখানে থেকে শামীম প্রায়ই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে লাইভ বক্তব্য দিয়ে আসছে। সম্প্রতি মামুনুল হক ইস্যুতে সে বেশ কয়েকবার লাইভে সরকারবিরোধী উসকানিমূলক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ে গুজব ছড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছে। লন্ডনে থাকায় আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারিনি।শামীমের এসব কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।
লন্ডন প্রবাসী বিএনপি নেতা মাওলানা শামীম এর বিষয়ে তার উপজেলা বরগুনার পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিদেশে আছেন তাই তার বিষয়ে কোনও খোঁজ নেওয়া হয়নি।