মামুনুল হকের অ্যাকাউন্টে ৬ কোটির লেনদেন, জোগানদাতা ৩১১ জন
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ মাদ্রাসার উন্নয়নের কথা বলে বিভিন্ন সময়ে হেফাজত ইসলামকে টাকা দিয়ে আসছেন এমন ৩১৩ অর্থদাতার তালিকা তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি। সেই টাকা সত্যিই মাদ্রাসার উন্নয়নে খরচ হয়েছে কিনা তা জানতে তদন্ত চলছে।মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।তিনি বলেন, ‘ওই ৩১৩ জনের অর্থায়নের উদ্দেশ্য কী মাদ্রাসার উন্নয়নই ছিল নাকি আরো কোনো কিছু ছিল তাও যাচাই করা হচ্ছে। তদন্তে অসঙ্গতি পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।গ্রেপ্তার হওয়া হেফাজত নেতা মামুনুল হকের দুটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, ‘তার ওই দুটি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে আসা এই অর্থের উৎস খোঁজা হচ্ছে।’
হেফাজতে শফীপন্থিদের সরিয়ে নেতৃত্ব পরিবর্তন বিষয়েও তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান এই তিনি। বলেন, ‘জুনায়েদ বাবুনগরীর ছেলের বিয়েতেই সাবেক আমির আল্লামা শফীকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা হয়। ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে মামুনুল হক, জুনায়েদ আল হাবিবসহ কয়েকজন নেতার বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে আল্লামা শফীকে সরিয়ে বাবুনগরীকে আমির করার পরিকল্পনা করা হয়।২৬ মার্চ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক সহিংসতার ঘটনায় হেফাজতে ইলামের সংশ্লিষ্ট নেতাদের পর্যায়ক্রমে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে হেফাজতকে রাজনীতিমুক্ত রাখতে রোববার (২৫ এপ্রিল) হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। আবার নেতৃত্ব অন্য গ্রুপের কাছে চলে যাওয়া ঠেকাতে গভীর রাতে সাবেক শীর্ষ নেতাদের নিয়েই আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে।গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯ এপ্রিল তাকে একটি মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ২৬ এপ্রিল তাকে আদালতে হাজির করে অন্য দুই মামলায় আরো ৭ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে পুলিশ জানায়, সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া হেফাজত নেতাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পাকিস্তানের ‘তেহেরিক-ই-লাব্বায়িক’ নামের সংগঠনের আদলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে গঠন করে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মতো এ দেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তারা।পুলিশ আরো জানায়, গত শনিবার (২৪ এপ্রিল) গ্রেপ্তার হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদের ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। হেফাজতে ইসলামের অধিকাংশ নেতাই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে জড়িত। মাদরাসার শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সরকার উৎখাত করে ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ২০০৫ সালে পাকিস্তান সফরের সময় মামুনুল ও তার শ্যালক নিয়ামাতুল্লাহ ওই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই সময়ে এই দুজন পাকিস্তানে প্রায় ৪৫ দিন অবস্থান করেন এবং একটি রাজনৈতিক দলের কাঠামো সংগ্রহ করেন। যেটি মামুনুল পরে হেফাজতে প্রয়োগের চেষ্টা করেন। মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি জানা গেছে।মাদরাসা ছাত্রের এতিম অসহায় ছাত্রদের দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ বাড়ি গাড়ি করেছে হেফাজত নেতারা। মাদরাসা দখলের মতো অপকর্ম ও অনেকের নারী বিলাসের মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম।