মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে দেখা করার কথা স্বীকার করেছেন নুর: ফারুক

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর ইসরাইলের নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করার কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান। তিনি বলেছেন, গণমাধ্যমে স্বীকার না করলেও গণঅধিকার পরিষদের একাধিক বৈঠকে সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন নুর। তবে কী বিষয়ে ইসরায়েলি ওই নাগরিকের সঙ্গে নুর বৈঠক করেছেন তা দলকে জানাননি।বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ফারুক হাসান।ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির নাম বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসে ২০১৬ সালের মে মাসে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতে ইসরায়েলিদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। শিপন কুমার বসু নামে এক ব্যক্তির মধ্যস্থতায় মেন্দির সঙ্গে আসলামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তিনি ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আগ্রায় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সে সময় মেন্দি ভারত সফর করছিলেন। মেন্দির সঙ্গে সাক্ষাতের খবর বের হওয়ার পর ওই বছরের ১৫ মে আসলামকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।এর প্রায় সাত বছর পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবার সাফাদিকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর মেন্দি সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কি না, তা নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। সাক্ষাতের খবরকে নুর অপপ্রচার বলে দাবি করলেও রেজা কিবরিয়া তা সত্য বলে জানান।

বৃহস্পতিবার গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সংবাদ সম্মেলনেও সাফাদির সঙ্গে নুরের বৈঠক হয়েছে বলে দাবি করা হয়।লিখিত বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, দলের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের কিছু অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৮ জুন রেজা কিবরিয়ার বাসার ছাদে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি জরুরি সভা হয়। সেখানে নুর দলের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে রেজা কিবরিয়ার ইনসাফ কায়েম কমিটির একটি সভায় অংশ নেওয়া ও তাদের কাছ থেকে অর্থগ্রহণের অভিযোগ তোলেন। তখন ড. রেজা কিবরিয়া ইনসাফ বাস্তবায়ন কমিটির সভায় যাওয়ার ব্যাখ্যা দেন। তবে, আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন এবং প্রমাণ থাকলে তা হাজির করতে বলেন।

ফারুক বলেন, একই সময়ে রেজা কিবরিয়া নুরের বিরুদ্ধে কয়েকটি সুস্পষ্ট অভিযোগ আনেন। যার মধ্যে ইসরায়েলি নাগরিক ও কথিত মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে আলোচিত বৈঠকের সত্যতা সংক্রান্ত কিছু তথ্য, আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে দলীয় তহবিল গ্রহণ, হিসাব না দেওয়া এবং শিপন বসুসহ বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সন্দেহভাজন লোকদের সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগ তোলেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নুর কাতারে ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে কোনো রকম আর্থিক সুবিধা গ্রহণের বিষয়ে অস্বীকার করেন। তখন নুর সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও সেই বৈঠকের আলোচ্যসূচি কী ছিল, তা তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তখন নুর দলের বয়োবৃদ্ধ কয়েকজন সদস্যকে ব্যক্তিগত আক্রমণমূলক ও অশালীন ভাষা প্রয়োগ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে রেজা কিবরিয়া সভাস্থল ত্যাগ করেন এবং সভা মুলতবি হয়।ফারুক হাসান আরও বলেন, ওই রাতেই দলের আহ্বায়ক একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, তিনি জরুরি প্রয়োজনে দেশের বাইরে যাচ্ছেন এবং তিনি দেশে ফিরে পুনরায় সভা ডেকে এ বিষয়ে সমাধান করবেন। কিন্তু ১৯ জুন নুর দফতর সমন্বয়কের মাধ্যমে নোটিশ দিয়ে আরেকটি সভা ডাকেন, যা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বৈধ নয়। ওই সভায় নুর নিজেই সভাপতিত্ব করেন এবং সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে আবারও মেন্দি সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে এ বিষয়ে দলের সদস্যদের আলোচনার সুযোগ না দিয়ে আহ্বায়ককের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো উত্থাপন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব তোলেন।

তিনি আরও বলেন, তখন অনেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় নিয়ে, ধীরে-সুস্থে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দেন। যেহেতু আহ্বায়ক কয়েকদিনের জন্য বিদেশে আছেন, তার অবর্তমানে দলের ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক চলতি দয়িত্ব পালন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারেন বলে মত দেন। কিন্তু সভা শেষে দফতর সমন্বয়কের স্বাক্ষরে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, ‘রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে সরিয়ে রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক’ করার কথা। এমন বিজ্ঞপ্তি সুস্পষ্টভাবে বৈঠকের সিদ্ধান্ত প্রতারণামূলকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আরও জানান, পরদিন আহ্বায়ক প্রবাসে থাকা অবস্থায় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অসাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় আহ্বায়ককে অব্যাহতির নোটিশ দেওয়ায় নির্বাহী ক্ষমতাবলে নুর ও রাশেদ খানকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। একইদিনে দলের ৪৫ জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উভয়ের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত করা প্রয়োজন বলে দাবি করেন এবং পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটির সুপারিশ করেন।

ফারুক বলেন, ২১ জুন নুর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আরেকটি বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত সবাই সমঝোতার জন্য অনুরোধ করেন। এ প্রেক্ষিতে তিনজনকে আহ্বায়কের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২২ জুন তিনজন আহ্বায়কের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি জানান, ২৬ জুন দেশে ফিরে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু তিনটি দিন অপেক্ষা না করে ২৩ জুন নুর আবারও দফতর সমন্বয়কে দিয়ে সভা ডাকেন। সভায় নুর আহ্বায়ককে অপসারণের প্রক্রিয়া নিয়ে সদস্যদের কাছে মতামত চাইলে অধিকাংশ সদস্য দলের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করার অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে সভা শেষে নুর গণমাধ্যমকে বলেন যে, ৮৭ জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আহ্বায়ককে অপসারণ করার বিষয়ে একমত হয়েছে।এরপর ২৫ জুন রেজা কিবরিয়ার কাছে শাকিলউজ্জামান স্বাক্ষরিত একটি অনাস্থা প্রস্তাবের নোটিশ পাঠানো হয়, যাতে ৮৪ জনের স্বাক্ষর যুক্ত করা হয়। আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, ওই তালিকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বাক্ষর সংশ্লিষ্ট সদস্যদের যথাযথ অনুমোদন না নিয়েই সংযুক্ত করা হয়েছে। নোটিশে আহ্বায়ককে ৭ দিনের মধ্যে জরুরি সভা ডাকার আহ্বান করা হয়। উক্ত নোটিশে সাড়া দিয়ে ২৮ জুন আহ্বায়ক বার্তা দেন, ১ জুলাই কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরি সভা হবে এবং সেখানে উক্ত প্রস্তাব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ফারুক আরও বলেন, জরুরি সভার আগের দিন নুর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনটি কর্মসূচি ডাকেন। ফলে থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ১ তারিখ সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা ছাড়াও বিপুল মানুষের উপস্থিতি ছিল। খবর পেয়ে নিরাপত্তার ঝুঁকি অনুভব করে ড. রেজা কিবরিয়া সভায় উপস্থিত না হয়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভা পরিচালনার আহ্বান জানান। ফলে সভা যথারীতি শুরু হয়। সভায় ৪০-৪৫ জন সদস্য উপস্থিত হন। কিন্তু দলের গঠনতন্ত্রের ৩৮ ধারা অনুযায়ী আহ্বায়কের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস ও অপসারণ করতে হলে কেন্দ্রীয় কমিটির মোট সদস্যের দুই তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১২১ জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ৮১ জন সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়। সেজন্য মাত্র ৪৫ সদস্য উপস্থিতি থাকায় সভায় আহ্বায়ককে অপসারণ অসম্ভব। অধিকন্ত উক্ত সভায় সদস্যরা গোপন ব্যালটে ভোট গ্রহণের আহ্বান জানালে তা না করে প্রকাশ্যে হাত তুলে সমর্থন জানাতে বলা হয়। ফলে অনেকেই ভোটদানে বিরত থাকেন। কিন্তু সভা শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো বিরতিতে রেজ কিবরিয়াকে দুই তৃতীয়াংশের ভোটে অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়, যা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক এবং প্রতারণামূলক। একইসঙ্গে আমরা দেখতে পাই, সুস্পষ্টভাবে ১৮ জুলাইয়ের পর থেকে নূরুল হক নুরের সকল তৎপরতা দলীয় গঠনতন্ত্রে এবং মূলনীতির পরিপন্থী। এবং গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ড. রেজা কিবরিয়ার কথিত অপসারণ সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ অপসারণ প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি না। তিনি দলের আহ্বায়ক হিসেবে বহাল আছেন বলে মনে করি। সেই সঙ্গে আমরা ঘোষণা করতে চাই, ড. রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে যারা কাউন্সিলের দিন নির্ধারণ করেছেন, তারা পরিকল্পিতভাৰে দলকে ভাঙনের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছেন।এদিকে আজ দুপুরে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে গণঅধিকার পরিষদের আরেক অংশ। দুপুর সাড়ে ১২টায় দলীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে।

You might also like