মৌলভীবাজারে একসঙ্গে ১৩ শকুনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বড়কাপন এলাকা থেকে বিলুপ্তপ্রায় শকুনের ১৩টি মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মো. রোকন ও মজনু মিয়ার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলাটি করেছেন মৌলভীবাজার সদর বন্যপ্রাণী রেঞ্জের বর্ষিজোড়া বিটের বিট কর্মকর্তা আবু নাঈম মো. নুরুন্নবী।মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা জানান, ২৪ মার্চ শুক্রবার ঘটনাটি তদন্ত করতে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং আইইউসিএনের কর্মকর্তা ও গবেষক দল।মৌলভীবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস ছামাদ বলেন, ‘মৃত ১০টি শকুন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) কর্মকর্তারা বস্তায় করে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। এগুলো ১০/১২ দিন আগে মারা গেছে বলে ধারণা করছি। সব পচে-গলে গেছে। শকুনগুলোর মৃত্যুর কারণ জানতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সিলেট ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছি। ধারণা করছি, মৃত গরু কিংবা কুকুর অথবা শিয়াল খেয়ে শকুনগুলো মারা যেতে পারে।
অনেক সময় গরুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় এবং কুকুর-শিয়াল নিধনে গ্রামগঞ্জে বিষ জাতীয় পদার্থ ব্যবহৃত হয়। এই প্রাণীগুলোর কোনটি মারা যাওয়ার পর তার মাংস শকুন খেলে তারাও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে,’ বলেন তিনি।বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, ‘মামলায় মো. রোকন ও মজনু মিয়ার নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। বন বিভাগ থেকে শকুনের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়া এলাকা থেকে দু’টি বিষের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে ওই বোতল দ’ুটি থানায় জমা দেয়া হয়েছে।বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মহাবিপন্ন বাংলা শকুনগুলোর মরদেহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ল্যাব টেস্টের পর বুঝা যাবে আসলে কী কারণে শকুনগুলো মারা গেছে।কোতয়ালি থানায় ওসি হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানান, শকুন হত্যার ঘটনায় থানায় বৃহস্পতিবার রাতে একটি মামলা করেছে বন বিভাগ। বন বিভাগের অভিযোগের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পুলিশ ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়েছে বলে জানান তিনি।বন বিভাগ ও আইইউসিএনের জরিপ অনুযায়ী, দেশে ২৬০টি শকুন ছিল। এরমধ্যে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে ছিল ৮০টি। এই ১৩টি শকুনের মৃত্যুর পর সংখ্যাটি আরও কমে গেল।প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের কালারবাজারের কাছে বড়কাপন গ্রামের বুড়িকোনা বিল থেকে বনবিভাগের কর্মকর্তারা ১০টি মৃত শকুন উদ্ধার করেন। পরে দুপুরে সেখান থেকে আরও ৩টি মৃত শকুন উদ্ধার করা হয়।