যুক্তরাজ্যের বার্কিং ও ডেগেনহামের নতুন মেয়র তরুণ রাজনীতিক মঈন কাদরী

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডন: বাংলাদেশী বংশদ্ভত তরুণ রাজনীতিক মঈন কাদরী গত মঙ্গলবার বার্কিং ও ডেগেনহাম কাউন্সিলের নতুন সিভিক মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আগামী এক বছরের জন্য তিনি মেয়র হিসেবে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এ বারার দ্বায়িত্ব পালন করবেন।

৪৫ বছর বয়সী মঈন কাদরী ১৯৭৯ সালের ১লা মার্চ পাবনার ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। ৪ ভায়ের মধ্যে মঈন তার পিতার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। তার পিতা পাবনার বিখ্যাত আইনজীবি এ্যাডভোকেট জহির আলী কাদরী, যিনি পাবনা বার কাউন্সিলের একাধারে ৫ বার সভাপতি ও ৩ বার সেক্রেটারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর মঈনের মা মরহুমা নিলুফার কাদরী ছিলেন একজন সমাজকর্মী ও ১৫ বছর যাবৎ পাবনা সদর পৌরসভার নির্বাচিত কাউন্সিলর। মঈন পাবনা কমার্স কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর পাবনা এ্যডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে বিকম পাশ করেন। মঈন কাদরীর গ্রামের বাড়ী পাবনা জেলার সাথিয়া উপজেলার সাতবিলা গ্রামে।

মঈন কাদরী ২০০১ সালে প্রথম বৃটেনের বুকে পা রাখের উচ্চ শিক্ষার তাগিদে। ভর্তি হন ইস্ট লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে। এখান থেকেই তিনি মার্কেটিং এ গ্রজুয়েশন শেষ করেন ২০১০ সালে। ছোট বেলা থেকেই রাজনীতি সচেতন মঈন সবসময় ছিলেন রাজনৈতিক বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। ২০১০ সালে খাতাকলমে লেবার পার্টির রাজনীতিতে যোগ দিলেও এই দলটির সাথে তার সখ্যতা বহু পুরানো। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালিন সময়ে রাজনৈতিক সক্রিয়তা তাকে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অফিসার পদে কাজ করতে সহায়তা করে। এসময় স্টুডেন্ট ফাইন্যান্স নিয়ে সরকারের নীতির বিরোধীতা করে ছাত্রদের অধিকার আদায়ে “লিড স্ট্রাইক অন পার্লামেন্ট“ নামে ২০০৯ সালের আন্দোলনে বৃটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত মিলিয়নের অধিক ছাত্রদের নেতৃত্ব দেন মঈন কাদরী। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে কর্মজীবনে এসেও থেমে থাকেনি তার পথ চলা। কমিউনিটির বিভিন্ন ইস্যুতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন এই তরুন উদ্যোমী যুবক। কোভিড চলাকালীন সময়ে স্থানীয় মানুষের পাশে থেকে সাহায্য করে গনমানুষের হ্রদয়ে জায়গা করে নেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে লেবার পার্টি থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন এবং প্রতি টার্মেই এই পদে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত মঙ্গলবার সিভিক মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলেন তিনি।

মেয়র হিসেবে শপথ নেয়ার পর এক সক্ষাৎকারে মঈন কাদরী বলেন, আপনার পরিশ্রম ও ত্যাগ একদিন আপনাকে তার গন্তব্যে পৌচ্ছে দেবে। আপনি যদি কোন ত্যাগ না করেন তাহলে প্রাপ্তি আশা করতে পারেন না। যেকোনো জিনিস ছোট থেকে বড় হতে হলে হামাগুড়ি দিয়ে বড় হতে হয়। ছোট থেকে বড় হতে হলে সকল কাজেই আমাদেরকে পরিশ্রমের মাধ্যমে তা অর্জন করতে হবে। সুতরাং আসুন আমরা পরিশ্রম করি। আমরা বাঙালি জাতি বীরের জাতি। পরিশ্রম করলে আমরা অবশ্যই আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। আমি চাই যে যেখানে যেটা পছন্দ করে তাকে সেখানে সেটা করতে দেয়া উচিত এবং যে যেটা ভালোবাসে তার সেটাই করা উচিত।

আজকের সফলতার পেছনে কাদের অবদান আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে মঈন বলেন, আমাকে সবচেয়ে বেশী ইনিস্পাইরেশন দিয়েছে ড্যারেন রডওয়েল, আমার মা বাবা, ভাই বোন ও আমার পরিবার।

পরিশেষে মঈন সকলকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, নিঃসন্দেহে আজকের মূহুর্তটি একটি গর্বের ও আনন্দের মুহূর্ত। আমি বার্কিং ও ডেগেনহামের অধিবাসীদের নতুন মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। আমি আশা করি নতুন মেয়র হিসাবে বার্কিং ও ডেগেনহামের অধিবাসীদেরকে নতুন আসা এবং ভরসা দিতে পারব। অবশ্যই আমি চেষ্টা করব সকল মানুষের জন্য কাজ করতে। বার্কিং ও ডেগেনহাম সহ এবং সারা ইউকেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সকলকে আমি বলতে চাই, যে যেখানে আছেন বার্কিং ও ডেগেনহামের দরজা আপনাদের জন্য উন্মুক্ত।

 

You might also like