রাখাল নৃত্য দিয়ে শুরুঃ কমলগঞ্জে চলছে মণিপুরীদের রাসোৎসব
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ রাখাল নৃত্যের মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় মণিপুরী সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা শুরু হয়েছে।
কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, ২৭ নভেম্বর সোমবার দুপুরে তুমুল হৈ চৈ, আনন্দ-উৎসাহে ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খধ্বনির মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ ও তার সখী রাধার লীলাকে ঘিরে এ উৎসব শুরু হয়। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা রাখাল নৃত্য পরিবেশ করে।
ভক্তবৃন্দ নৃত্যরত শিল্পীদের বাতাসা ও টাকা উপহার দেন। উৎসব উপলক্ষে নানা ঐতিহ্যবাহী সাজে মেতেছে মণিপুরীপাড়া। রাতভর বৈষ্ণব সাহিত্যের রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলার নৃত্যগীতাভিনয় রাসলীলার মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। মূল রাসলীলা রাত ১১টা থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত চলবে।
বাঁশ ও কাগজ কেটে বিশেষ কারুকাজে রাসের মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। মণ্ডপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বসে রাসধারী বা রাসের গুরু, সূত্রধারী ও বাদকরা।
পাশাপাশি ৩টি মণ্ডপে তরুণীরা এ রাসলীলায় অংশ নিয়ে থাকে। রাসের সাধারণ ক্রম হচ্ছে- সূত্রধারী কর্তৃক রাগালাপ ও বন্দনা, বৃন্দার কৃষ্ণ আবাহন, কৃষ্ণ অভিসার, রাধা ও সখীদের অভিসার, রাধা ও কৃষ্ণের সাক্ষাৎ ও মান-অভিমান, ভঙ্গীপারেং, রাধার কৃষ্ণ-সমর্পণ, যুগলরূপ প্রার্থনা এবং আরতি ইত্যাদি।
যদিও সেটি একটি ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, কিন্তু তার নৃত্যশৈলী বরাবর সব ধর্ম ও জাতের মানুষকে আকর্ষণ করেছে। এ উপলক্ষে পুলিশ প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উৎসবে মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও সকল ধর্মের মানুষ ভিড় করছে মণ্ডপগুলোতে।
কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে বেলা ১টা থেকে শুরু হয় গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাত ১১টায় জোড়ামণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা।
এবার মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে ১৮১তম রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যদিকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের আয়োজনে ৩৮তম রাসোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রাসোৎসবে মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার লোক মেতে উঠেছেন এই আনন্দ উৎসবে। মহারাত্রির আনন্দের পরশ পেতে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী, বরেণ্য জ্ঞানী-গুণী লোকজনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদচারণায় রাতে মুখরিত হয়ে উঠছে মাধবপুর ও আদমপুরের মণ্ডপপ্রাঙ্গণ।
রাসোৎসবকে ঘিরে মাধবপুর ও আদমপুরের মণ্ডপগুলো সাজানো হয়েছে সাদা কাগজের নকশার নিপুণ কারুকাজে। করা হয়েছে আলোকসজ্জাও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাসোৎসবকে কেন্দ্র করে কমলগঞ্জ মণিপুরী সংস্কৃতির এক বিশাল মিলনমেলায় পরিণত হয়। রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, এবারে মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে ১৮১তম মহারাসলীলা উপলক্ষে বিকেল সাড়ে ৩টায় শুভেচ্ছা বিনিময় ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের এমপি, সাবেক চিফ হুইপ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, কমলগঞ্জ পৌর মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ।
তিনি আরও জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ সিদ্দিকী (এনডিসি)। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ, অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিন এন্ড ফিন্যান্স) সৈয়দ হারুন- অর-রশীদ, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম, পুলিশ সুপার মনজুর রহমান পিপিএম-বার, কমলগঞ্জের ইউএনও জয়নাল আবেদীন।
অন্যদিকে উপজেলার আদমপুরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মণিপুরী রাসোৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাসোৎসবের অনুষ্ঠান চলছিল।