রাজারবাগে হট্টগোল, সভা শেষ না করেই চলে গেলেন পুলিশপ্রধান

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের কাজে ফেরানোর জন্য রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় মতবিনিময় সভার। কিন্তু বিক্ষুব্ধ পুলিশ সদস্যদের হট্টগোলের মধ্যে সভা শেষ না করেই চলে যান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম।বৃহস্পতিবার  পুলিশের সব ইউনিটের সদস্যদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে কর্মবিরতিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের অধিকাংশই কাজে ফেরেননি। তাদের কাজে ফেরানোর জন্যই রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করা হয়।

সেখান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এ কারণে-ই রাজারবাগে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম, র‌্যাব মহাপরিচালক একে এম শহিদুর রহমান ও ডিএমপি কমিশনার মাইনুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার (০৯ আগস্ট) বিকেলে মতবিনিময় সভায় আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে কথা বলেন আইজিপি। তাদের দাবি-দাওয়া বিষয়ে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধি নিয়ে আগামী রোববার (১১ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি সভার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যরা আইজিপির এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।এ সময় মতবিনিময় সভায় পুলিশ সদস্যরা তাদের বিভিন্ন ক্ষোভ ও হতাশার কথা ব্যক্ত করেন। সভায় একজন কনস্টেবল বলেন, গত ৫ আগস্ট কনস্টেবল থেকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার যত পুলিশ সদস্য মারা গেছেন গত ৫০ বছরেও পুলিশের অফিসার পদমর্যাদার এতো সদস্য মারা যাননি।

তারা (আন্দোলনরতরা) দাবি করেন, পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নে আইজিপি যে ৮ সদস্যের কমিটি করেছেন, সেই কমিটির পাশাপাশি কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যের আরেকটি কমিটি তারা করবেন। তাদের সমস্যা ও সমাধান বাস্তবায়নে এই কমিটি কাজ করবে। এ সময় আইজিপিকে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যরা।এদিকে, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় পুলিশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম।

বক্তব্যে আইজিপি বলেন, আমরা আহত পুলিশ সদস্যদের আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। তাদের জন্য প্রয়োজনে বিদেশ থেকে পরামর্শক আনা হবে। এছাড়া নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে ক্ষতি পূরণের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হবে। আপনারা (পুলিশ সদস্যরা) যে ১১ দফা দিয়েছেন সেগুলো নিয়ে আমরা আগামী রোববার (১১ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বসবো আপনাদের প্রতিনিধিদল নিয়ে। এছাড়া থানা পর্যায়ে কোনো জুনিয়র পুলিশ সদস্য সিনিয়র পুলিশ সদস্যের কাছে হয়রানি হবে না।শুক্রবার বিকেল ৪টায় এই মতবিনিময় শুরুর আগে আইজিপি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে গিয়েছিলেন আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে। বক্তব্যে সেটাও উল্লেখ করেন আইজিপি।এই সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পুলিশ বাহিনীর সংস্কার চেয়ে স্লোগান দেন। উচ্চাভিলাষী পুলিশ সদস্য হারুন অর রশীদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি তোলেন তারা।

তবে দাবি-দাওয়া নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সভায় বসার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন মিলনায়তনে উপস্থিত আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যরা। তারা জোর দিয়ে বলেন, স্বরষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে রাজারবাগে আনতে হবে। আলোচনা হবে এখানেই।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের বৈষম্যবিরোধী কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক কনস্টেবল শোয়াইবুর রহমান জানান, আমরা আগামী রোববার (১১ আগস্ট) মিটিংয়ের বিষয়ে এখন পর্যন্ত (রাত ৮টা ৪২) কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা না পাওয়া পর্যন্ত কেউ কাজে ফিরবো না। প্রয়োজনে পুলিশের নাম, পোশাক সব সংস্কার করতে হবে। আইজিপিকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে যে, ‘আমরা পূর্ববর্তী সময়ে ভুল করেছি’। এছাড়াও পুরো পুলিশ বাহিনী সংস্কার করে নতুন বাহিনী করতে হবে। এই বাহিনীর ঘোষণা দেবে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।পুলিশের সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে রাজারবাগে এমনই হট্টগোল বাধায় আজও কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে যোগদান করেননি।

You might also like