রাজা এলেন বাংলা টাউনে: শুনলেন দেশ-বিদেশের বাঙালীর গৌরবগাঁথার গল্প (ভিডিও)
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
সত্যবাণী
লন্ডন: রাজা তৃতীয় চার্লস ও তাঁর রানী সহধর্মিণী ক্যামিলা এসেছিলেন পূর্ব লন্ডনের বাংলা টাউনে। আলতাব আলী পার্কের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বাঙালির প্রাণকেন্দ্র ব্রিকলেন ও বিভিন্ন সময় পর্যায়ক্রমে তিনটি ধর্মীয় সম্প্রাদায়ের উপাসনাস্থল হিসেবে ব্যবহৃত বর্তমান ব্রিকলেন জামে মসজিদ পরিদর্শণকালে তিনি শুনলেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, মাতৃভাষা রক্ষায় জীবনদান ও বহুজাতিক ব্রিটিশ সমাজে বাঙালীর উত্তাণের যত গৌরবগাঁথার গল্প।
বুধবার, ৮ই ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় চার্লস ও ক্যামিলা প্রথম এসে প্রবেশ করেন বর্ণবাদী হামলায় শহীদ ব্রিটিশ বাংলাদেশী আলতাব আলীর নামে নামকৃত পার্কে, যেখানে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে বাঙালীর ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজরিত শহীদ মিনার। এসময় টাওয়ার হ্যামলেটস এর স্পীকারকে সাথে নিয়ে রাজা দম্পতিকে স্বাগত জানান বাংলাটাউন পরিদর্শনের মূল আয়োজক ব্রিটিশ বাংলাদেশী পাওয়ার এন্ড ইন্সিপিরেশন এর প্রতিষ্ঠাতা আয়েশা কোরেশী এমবিই ও কাউন্সিলার আব্দাল উল্লাহ। রাজা তৃতীয় চার্লস ও তাঁর রানী সহধর্মিনী ক্যামিলা আলতাব আলী পার্কে হেটে হেটে উপস্থিত কমিউনিটির সুধীজনদের সাথে কুশল বিনিময় করেন এসময়।
কুশল বিনিময় পর্যায়ে ৭০ দশকে এই এলাকা থেকে বর্ণবাদ তাড়ানোর আন্দোলনে স্থানীয় বাঙালীদের গৌরবোজ্জল আন্দোলনের গল্প রাজা ও তাঁর রানী সহধর্মিনীকে শোনান সেই সময়কার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা কর্মী সাবেক কাউন্সিলার রাজন উদ্দিন জালাল, হেলাল উদ্দিন আব্বাস ও সত্যবাণীর কন্ট্রিবিউটিং এডিটর আনসার আহমেদ উল্লা।
আলতাব আলী পার্কে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে থাকা শহীদ মিনারের ইতিহাস জানতে আগ্রহী রাজা চার্লসকে পর্যায়ক্রমে এসময় বাঙালীর ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানান লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি নবাব উদ্দিন ও এটিএন বাংলার উপস্থাপিকা উর্মী মাজহার।
কুশল বিনিময়ের ফাঁকে ব্রিটেনের বহু সাংস্কৃতিক সমাজে ব্রিটিশ- বাংলাদেশীদের বর্তমান ঔজ্জ্বল্য ছড়ানো অবস্থানের গল্পও এসময় রাজা দম্পতির কাছে তুলে ধরেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার ও সিনিয়র সংবাদ পাঠিকা ডা: জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার।
কুশল বিনিময়ের ফাঁকে দেশ-বিদেশের বাঙালীর গৌরব উপাখ্যান শুনে রাজা চার্লস ও রানী সহধর্মিনী ক্যামিলা শ্রদ্ধা জানান এসব উপাখ্যানের জন্মদাতা বাঙালির পূর্ব প্রজন্মের প্রতি। এসময় তাঁকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
আলতাব আলী পার্ক ত্যাগ করার আগে রাজা বর্ণবাদী হামলায় শহীদ আলতাব আলীর নামে একটি বৃক্ষ রোপন করেন পার্কে।
প্রায় ৩৫ মিনিট আলতাব আলী পার্কে অবস্থান শেষে রাজা দম্পতি বাংলাটাউনের রাজধানীখ্যাত ব্রিকলেনে প্রবেশ করলে নাচে-গানে তাদের বরণ করা হয়। এখানে রাজা চার্লস ও কুইন কনসোর্ট ক্যামিলাকে স্বাগত জানান ব্রিটেনে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। হাই কমিশনার এসময় রাজাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি ইতিবাচক সাড়া দেন।
ব্রিকলেনের দুপাশে দাঁড়ানো সমবেত মানুষ ও ছোট্ট স্কুল শিশুদের প্রতি হাত নেড়ে ও কারো কারো সাথে হাত মিলিয়ে রাজা ও তাঁর রাণীসহধর্মিনী শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে স্থানীয় গ্রামবাংলা রেষ্টুরেন্টে গেলে সেখানে তাদের বাঙালি খাবারে আপযায়িত করা হয়। এখানে রাজা দম্পতি বিবিপিআই জামদানী নেটওয়ার্কের নারী উদ্যোক্তাদের সাথে পরিচিত হন। জামদানী নেটওয়ার্কের পক্ষে কুইন কনসোর্ট ক্যামিলাকে এসময় একটি জামদানী শাড়ি উপহার দেন তরুণ টেলিভিশন উপস্থাপিকা প্রপা রেজওয়ানা আনোয়ার।
সর্বশেষে রাজা ও কুইন কনসোর্ট পরিদর্শন করেন ব্রিকলেন জামে মসজিদ। মুসলমান সম্প্রাদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয় এই মসজিদে রাজা ও তাঁর রানী সহধর্মিণীকে স্বাগত জানান মসজিদ কমিটি ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ। কমিউনিটি নেতারা এসময় বিভিন্ন সময় পর্যায়ক্রমে তিনটি ধর্মীয় সম্প্রাদায়ের উপাসনাস্থল হিসেবে ব্যবহৃত এই ঐতিহাসিক বিল্ডিংটির ইতিহাস শোনান রাজা চার্লস ও কুইন কনসোর্ট ক্যামিলাকে।
ব্রিকলেন মসজিদ পরিদর্শনের পরই সমাপ্তি ঘটে রাজা ও তাঁর রানী সহধর্মিনীর বাঙালিপাড়া সফর। এখান থেকেই বাকিংহাম প্যালেসের উদ্দেশ্যে উঠে পড়েন তাঁরা তাদের গাড়িতে। রাজার সফর হয় সমাপ্ত, ইতিহাসে আরেকটি অধ্যায় রচিত হয় ব্রিটেনের বাঙালী কমিউনিটির।