রানির প্রতি আমাদের অফুরান শ্রদ্ধা

সৈয়দা ফেরদৌসি পাশা কলি
ম্যানেজিং এডিটর, সত্যবাণী

লন্ডন: ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ইহলোক ত্যাগ করেছেন ৯৬ বছর বয়সে। পরিণত বয়সে তাঁর এই মৃত্যু হলেও ব্রিটেনসহ বিশ্বব্যাপি চলছে শোকের মাতম। একজন পরিণত বয়সের মানুষ মৃত্যু বরণ করবেন, এটি একটি স্বাভাবিক বিষয় হলেও রানীর মৃত্যুতে কেন এই মাতম? শুধুই কি ব্রিটেনের মত একটি শক্তিধর রাষ্ট্রের রানি এজন্য, না আরও অন্য কিছু?

রানি শুধু একটি দেশ ব্রিটেনেরই রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন না,  তিনি ছিলেন এন্টিগুয়া ও বারমুডা, টুভ্যালু, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সলুমান দ্বীপপুঞ্জ, বেলিজ, বাহামা, বার্বাডোস, কানাডা, গ্রানাডা, জ্যামাইকা, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, সেন্ট কিটস এন্ড নেভিস এবং সেন্ট লুসিয়া ও সেন্ট ভিনসেন্ট এন্ড গ্রেনাডাইন দীপপুঞ্জসহ ১৫টি দেশের রানি বা রাষ্ট্র প্রধান।

শুধু একজন রানি বা রাষ্ট্রপ্রধানই নন, তিনি ছিলেন প্রায় পুরো এক শতাব্দীর বিশ্ব পরিবর্তনের একজন স্বাক্ষি। আর একারনেই মানুষের কাছে তিনি ছিলেন সারা বিশ্বের রানির মতো।

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁর মেয়াদকালে দেখেছেন মহাযুদ্ধ, মহাযুদ্ধ পরবর্তী কৃচ্ছতা, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে কমনওয়েলথে উত্তরণ, স্নায়ুযুদ্ধের পরিসমাপ্তি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রিটেনের যোগদান ও পরে প্রত্যাহারের মত ঘটনা।

১৯৫২ সালে রানির দায়িত্ব গ্রহনের আগে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভেঙে ভারত-পাকিস্তান দুটো রাষ্ট্রের জন্ম যেমন দেখেছেন তিনি, ঠিক তেমনি রানির দায়িত্বকালীন সময়েই পাকিস্তান ভেঙ্গে অসাম্প্রদায়িকতার স্লোগানে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রেরও জন্ম দেখেছেন রানি, দেখেছেন মাত্র সাড়ে নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি জাতির নিজস্ব ভূখন্ড তৈরির বিশ্ব কাঁপানো ঘটনা।

এক সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন ৫৬টি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত কমনওয়েলথের প্রধান হিসেবে সদস্য দেশগুলোর সাধারণ মানুষের কাছেও আমৃত্যু রানির মর্যাদাই পেয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যুসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘটনায় সমালোচিত হলেও ব্রিটিশ জনগনের কাছে রানি হিসেবে তাঁর গ্রহনযোগ্যতা কখনও খাটো হয়নি। দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ১৫জন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার বিরল সুযোগ যার হয়েছে, তাঁকে শুধু একজন রাষ্ট্র প্রধান বা ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করলেই যে চলে না, রানির মৃত্যুর পর বিশ্বব্যাপী এই শোকের মাতম তারই প্রমান।

পরিণত বয়সে হলেও মহামান্য রানির মৃত্যুতে আমরাও শোকাহত। তাঁর মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপি প্রবাহিত এই শোক প্লাবনে ভাসছে ‘সত্যবাণী’ পরিবারও। একজন মানবিক মানুষ রানির মৃত্যুপরবর্তী এই সময়ে সত্যবাণী শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে তাঁকে। বহু বর্ণের বহুজাতিক ব্রিটিশ সমাজে রানি ছিলেন আমাদের ঐক্যের সেতুবন্ধন, বটবৃক্ষতুল্য ছাতা। এই ছাতা সরে যাওয়ায় আমরা অভিভাবকহীন। নতুন রাজা আবারও আমাদের উপর  এমন অভিভাবকত্বের ছাতা তুলে ধরবেন এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা। রানির প্রতি আমাদের অফুরান শ্রদ্ধা।

 

 

 

 

 

 

You might also like