রেল ও সড়ক বিভাগের ‘ঠেলাঠেলি’কিনব্রিজের সংস্কার কাজ শুরু কবে?
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ ৩ বছর আগে সংস্কার কাজের প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি হয়েছিল। সেই প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দও দেয়া হয়েছে প্রায় আড়াই বছর আগে। কিন্তু সরকারি ২ দপ্তরের ‘ঠেলাঠেলি’র কারণে বার বার ঘোষণা দিয়েও শুরু হয়নি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজের সংস্কার কাজ।সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই কিনব্রিজের সংস্কার কাজ শুরুর ঘোষণা দেয় কাজের দায়িত্ব পাওয়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সংস্কার কাজের জন্য ২৫ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিনব্রিজ দিয়ে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধেরও ঘোষণা দেয়া হয়। সংস্কার কাজ চলাকালীন যান চলাচল বন্ধ রাখতে ১০ জুলাই সিলেট মহানগর পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে একটি পত্রও দেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু বিভাগের প্রকৌশলী জিসান দত্ত। কিন্তু এখনও যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়নি, আবার কাজও শুরু হয়নি। ১২ আগস্ট শনিবার পর্যন্তও কিনব্রিজ দিয়ে আগের মতো যান চলাচল করতে দেখা গেছে।জানা গেছে, কিনব্রিজ সওজের নিয়ন্ত্রণাধীন হলেও লোহার তৈরি এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ে বিভাগের মাধ্যমে। লোহার কাঠামোর কাজে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ অধিক পারদর্শী। তাই জরাজীর্ণ হয়ে পড়া ৮৭ বছরের পুরনো কিনব্রিজের সংস্কার কাজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রেলওয়ের সেতু বিভাগই সংস্কার কাজ করবে। তবে কাজ শুরুর আগেই সওজ ও রেলওয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে।
ঘোষণা দিয়েও কাজ শুরু না হওয়া প্রসঙ্গে রেলওয়ের সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) জীসান দত্ত বলেন, ‘সংস্কার কাজ শুরুর জন্য আমরা প্রস্তুত। সব মালামাল কিনব্রিজ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আশা করছি, সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।তিনি বলেন, কিনব্রিজে যান চলাচল বন্ধ রাখার দায়িত্ব সওজের। তারা যান চলাচল বন্ধ করে আমাদের জানাবে। এরপর কাজ শুরু করবো।এ ব্যাপারে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সংস্কার কাজের জন্য রেলওয়ের ঠিকাদার এখনো সম্পূর্ণ প্রস্তুত নয়। তাই কিনব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করিনি। কারণ, কাজ শুরু করতে দেরি হলে শেষ করতেও দেরি হবে। আর দীর্ঘ সময় গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু বন্ধ রাখলে জনভোগান্তি বাড়বে। তাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বলেছি পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে আমাদের জানাতে। তখন আমরা সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেব। তারা এতে সম্মত হয়েছেন। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানাতে পারেননি। তাই আগে-ভাগে যান চলাচল বন্ধ করা হয়নি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, জরাজীর্ণ কিনব্রিজ সংস্কারের জন্য ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সওজ। ওই বছরেরই জুনে বরাদ্দের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ে অর্থ স্থানান্তরে জটিলতা ও বন্যাসহ নানা কারণে কয়েক দফা পিছিয়ে যায় কিনব্রিজের সংস্কার কাজ।
উল্লেখ্য, ১৯৩৬ সালে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এই সেতু তৈরি করে ব্রিটিশরা। তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় ‘কিনব্রিজ’। সেতুটি সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন হলেও এটি দেখভাল করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ।