লন্ডনে ‘আমরা একাত্তর’ চেয়ারপার্সন মাহবুব জামান: তরুণ প্রজন্মের উপরই আমাদের ভরসা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
সত্যবাণী

লন্ডন: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক সমাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় সংগঠন ‘আমরা একাত্তর’ এর চেয়ারপার্সন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ঢাকসু এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মাহবুব জামান বলেছেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের সাহস, প্রত্যয় ও মেধা যখন দেখি, তখন মনে হয় আমাদের দেশ নিশ্চিত আরও অনেক এগিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধ এবং এর আগে ও পরে তরুণ প্রজন্ম যেমন বিভিন্ন সময় আমাদের জন্য ছিনিয়ে এনেছে বীজয়, ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার বর্তমান আন্দোলনে আজকের তারুণ্যও তাদের পূর্ব প্রজন্মের ঐতিহ্যে বলিয়ান হয়ে বীজয় ছিনিয়ে আনবে, এটি আমাদের বিশ্বাস। আর এখানেই তরুণ প্রজন্ম আমাদের ভরসা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের একটি হলে ‘আমরা একাত্তর’ যুক্তরাজ্য ইউনিটের উদ্যোগে তাঁর সম্মানে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামান উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সদ্য প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা শাহ এনামের মৃত্যুতে এক মিনিট দাড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই ইন দ্যা ইউকের পক্ষ থেকে ডাকসু’র সাবেক জিএস মাহবুব জামানের হাতে একটি ক্রেস্ট তুলে দেন, হাবিব রহমান, নিলুফা ইয়াসমিন, মারুফ চৌধুরী, মেজবাহ উদ্দিন ইকো, সৈয়দ হামিদুল হক ও সৈয়দ এনামুল ইসলাম।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনার পর পাক হানাদার বাহিনীর হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে উল্লাসরত ছয় মুক্তিযোদ্ধার সেই ঐতিহাসিক ছবির একজন মাহবুব জামানের সম্মানে আয়োজিত এই মতবিনিময়ে সভাপতিত্ব করেন ঐ ছবিতে উল্লাসরত আরেক মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানের প্রবীন সাংবাদিক আবু মুসা হাসান। ‘আমরা একাত্তর’ যুক্তরাজ্য ইউনিটের সংগঠক সত্যব্রত দাশ স্বপনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের প্রবীন সংগঠক, মাহবুব জামানের এক সময়ের শিক্ষক সুলতান মাহমুদ শরীফ।

লন্ডনের জনপ্রিয় প্রিন্টার্স ‘ফেইথ’ এর সৌজন্যে প্রাপ্ত মতবিনিময় সভার পেছনের ব্যানারে যখন শোভা পাচ্ছিলো ৬ মুক্তিযোদ্ধার সেই ঐতিহাসিক ছবি, তখন অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষন মাহবুব জামান বার বার ফিরে যাচ্ছিলেন তাদের সেই স্বর্ণজ্জোল ঐতিহাসিক তারুণ্যের দিনগুলোতে। জানালেন, ছবির ৬ জনের ২জন এখন আর ইহজগতে নেই, ২জন আছেন আজকের মতবিনিময় সভা মঞ্চে, আর বাকী দুইজন তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশে বসেই দেখছেন আজকের আলোচনা অনুষ্ঠান।

মাহবুব জামান বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে বাঙালী একটি স্বাধীন ভূখন্ড বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিলো, সেই স্বপ্ন শতভাগ সফল হয়েছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তিনি বলেন, নেতিবাচক বিষয়গুলো যেভাবে আমাদের সমাজে প্রচার পায়, সে তুলনায় ইতিবাচক বিষয়গুলো আমরা প্রচার করি না। শুধু দেশের ভেতরে নয় আন্তর্জাতিক ভাবেও আমাদের সন্তানরা যার যার কর্মক্ষেত্রে যেভাবে সুনাম কুড়াচ্ছে, সেই ইতিবাচক খবরগুলো আমরা তৃণমূলের মানুষের কাছে পৌছাতে পারিনা। দেশের সামাজিক, অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রের উন্নয়নের খবরের চেয়ে আমেরিকায় আমাদের কোন রাজনীতিককে আমাদেরই স্বদেশী কেউ কেউ কোথায় অপমান করলো সেই খবর ভাইরালে আমরা আনন্দ পাই। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ খরশ্রোতা নদী আমাজনে যেখানে সেতু নির্মান সম্ভব হয়নি, সেখানে দ্বিতীয় খরশ্রোতা নদী পদ্মায় আমাদের দেশের প্রোকৌশলীদের নেতৃত্বে সেতু নির্মানে আমরা সফল হই। অথচ এটির কোন ইতিবাচক প্রচারণায় না গিয়ে আমরা অন্য নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে পড়ে থাকি।

একটি দীর্ঘ সময় ইতিহাস বিকৃতির মধ্য দিয়ে দেশটি এগিয়েছে, এমন মন্তব্য করে মাহবুব জামান বলেন, এই ইতিহাস বিকৃতির কারনেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে আমাদের এই প্রজন্মের মধ্যে বিভ্রান্তি জিইয়ে রাখতে সুক্ষভাবে কাজ করছে একটি মহল। পৃথিবীর কোন দেশেই সফল বিপ্লবের পর আর পক্ষ বিপক্ষ থাকেনা। কিন্তু আমরাই সেই দুর্ভাগা জাতি, যাদের সামনে এখনও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ দল দন্ডায়মান থাকে। মাহবুব জামান বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মকে যদি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানানো যায়, তবে এই পক্ষ-বিপক্ষও আর থাকবে না। এক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢালাওভাবে সাজাতে হবে। 

মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হাবিব রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান খান, লোকমান হোসেইন, আমান উদ্দিন, মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী, সৈয়দ আনাস পাশা, আবুল কাশেম খান, সাংবাদিক নিলুফা ইয়াসমীন, সৈয়দ ইকবাল, শাহাব আহমেদ বাচ্চু, হরমুজ আলী, সৈয়দ এনামুল ইসলাম, মোহাম্মদ আব্দুর রকিব, আনসার আহমেদ উল্লা, অনিন্দ ওলি, এম এ মান্নান, মারুফ চৌধুরী, আসাদ উদ্দিন, মন্জুর হোসেইন, গোলাম আলী, আব্দুর রহমান, ময়নুর রহমান বাবুল, এ কে এম সেলিম, ব্যারিষ্টার মাসুদ চৌধুরী, আমিনুল হক জিলু, সরোয়ার কবীর, সুভাষ দাশ, গোলাম আকবর মুক্তা, এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, রীপা রাকিব ও এরিনা সিদ্দিক সুপ্রভা প্রমূখ।

You might also like