লন্ডনে একুশের প্রভাতফেরি: শিশুকিশোরদের কলকাকলিতে মুখর সারাদিন

ভাষাসৈনিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, ডা. আহমদ জামান ও সুলতান শরীফকে সম্মননা ক্রেস্ট প্রদান

বিশেষ প্রতিবেদন
সত্যবাণী

লন্ডন, ২৭ ফেব্রুয়ারি: বিলেতে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে তার শেকড়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া একান্ত প্রয়োজন এই চিন্তা থেকে একুশে প্রভাতফেরি আয়োজন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত প্রভাতফেরি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুখর ছিল পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্ক ও ব্রাডি আর্টস সেন্টার। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় আলতাব আলী পার্কে অনুষ্ঠিত হয় প্রভাতফেরি এবং দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়া শিশুকিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হয় বিকাল ৫টায়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় শিশুদের পুরস্কার প্রদান ও ভাষাসৈনিক ও গুণীজন সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান ছিল উল্লেখযোগ্য।  

আমাদের জাতীর ভাষা বাংলা,ভাষা আন্দোলন,সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য মন্ডিত সংগ্রামমুখর ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারলে তারা ও গর্ব করার মত অনেক বিষয় খুঁজে পাবে। নিজ শেকড়ের সাথে অটুট সেতুবন্ধন তৈরি হবে যা তাদের গর্বিত আত্মপরিচয়ের সন্ধানে সাহায্য করবে। উপস্থিত সুধীজন এসব মন্তব্য করেন অনুষ্ঠানে।

একুশে প্রভাতফেরি আয়োজন পরিষদ যুক্তরাজের উদ্যোগে লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে প্রভাতফেরী পরবর্তী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন। সভা ও সমাবেশ পরিচালনায় ছিলেন  আয়োজন পরিষদের সদস্য সচিব জামাল আহমেদ খান।

দুপুরে ব্রাডি আর্টস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হওয়া শিশুকিশোরদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,গুণীজন সম্মাননা প্রদানও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়।  সমগ্র  অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের সদস্য সচিব জামাল আহমেদ খান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যুক্তরাজ্য  সংসদ, সত্যেন সেন স্কুল অফ পারফর্মিং আর্টস এবং লন্ডনের স্থানীয় শিল্পীরা। আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারিগানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করে ক্ষুদে শিল্পী আর্শি, অনিন্দি, তোড়া,  মাইজা ও মিশেল এবং আমার মুখে ভাষা কাইড়া নিতে চায়গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করে ৬ বছরের ক্ষুদে শিল্পী মাইজা হক আর্শি।  একুশের ইতিহাসভিত্তিক রচনা পাঠ করে সাবিহা ও মুসা আমান হক। আবৃত্তি করে অন্বেষা ও অনুভা। শিশুদের পরিবেশনায় উপস্থিত সুধীজন মুগ্ধ হন।

সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আয়োজন পরিষদের প্রাক্তন সদস্যসচিব আমিনা আলী ও  সহযোগিতা করেন ইফতেখারুল ইসলাম পাপলু। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরবর্তী সমাপনী অধিবেশনে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের মাঝে করতালির মাধ্যমে পুরস্কার ও একুশে প্রভাতফেরি লেখামেডেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় আকরাম, দ্বিতীয় সাবিহা আহমদ ও তৃতীয়স্থান লাভ করে স্বর্ণালী ধর। এ প্রতিযোগিতায় ব্যাপক সংখ্যক শিশুকিশোর অংশগ্রহণ করে।এবারেরবিশেষত্বের মধ্যে ছিল প্রভাতফেরি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বার্মিংহামথেকে আসেন স্ত্রী পুত্রকন্যাসহ ইফতেখারুল ইসলাম পাপলু, সাউথএণ্ড থেকে আসেন বাচিকশিল্পী পুত্র ইলহামকে নিয়ে, আরো ক্যামব্রীজথেকে আসেন শাহরিয়ার বিন আলী নাসরীন মঞ্জরী

এছাড়া  প্রভাতফেরী আয়োজন পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলা ভাষার জন্য অবদান রাখা তিন গুণীজনকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয় প্রয়াত ভাষাসৈনিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, ডা. আহমেদ জামান ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ সুলতান মাহমুদ শরীফকে।  

প্রভাতফেরি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান, লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে মাহমুদ এ রউফ, আবেদ আলি আবিদ, মানবাধিকার আন্দোলন নেতা আব্দুল আহাদ চৌধুরী, উদীচী সভাপতি হারুন অর  রশিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, রাজনীতিক নিসার আহমদ,সাংবাদিক নিলুফা ইয়াসমীন হাসান,কবি হামিদ মোহাম্মদ, কবি মিল্টন রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বুলবুল হাসান, কাউন্সিলার সৈয়দা সায়মা আহমেদ,  টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক স্পিকার মোহাম্মদ আহবাব হোসেন, যুবনেতা জামাল আহমদ খান, সাংস্কৃতিক নেত্রী সুলতানা জলি, বাচিকশিল্পী মুনিরা পারভীন, নাট্যকর্মী নূরুল ইসলাম, বাবলু খন্দকার, উদীচীর সেক্রেটারি জুবের আক্তার সোহেল, সাংস্কৃতিক নেত্রী মুনজেরিন রশীদ চৌধুরী, আবৃত্তিকার নাসিমা কাজল, সাংস্কৃতিককর্মী সেলিনা শফি, অসীমা দে, যুবনেতা শাহরিয়ার বিন আলী, আবৃত্তিকার স্মৃতি আজাদ, সাংবাদিক জুয়েল রাজ, যুবেনেতা ইফতেখারুল হক পপলু,যুব ইউনিয়নের সাবেক সেক্রেটারি নাসরিন মঞ্জুরী,  সাংস্কৃতিককর্মী সুশান্ত দাস প্রশান্ত, আবৃত্তিকার সালাহ উদ্দিন শাহীন ও নাসিমা আলীসহ শতাধিক সংস্কৃতিজন।

উল্লেখ্য বিলেতে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম এবং অপরাপর ভাষাভাষী মানুষের মাঝে অমর একুশের গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রাম ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর লন্ডনে স্কুল বন্ধের দিনে শিশুদের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে সকালবেলা প্রভাতফেরির আয়োজন করা হয়ে আসছে। বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন ইউকের আহবানে লন্ডনে ক্রিয়াশীল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একুশের প্রভাতফেরি আয়োজন পরিষদ যুক্তরাজ্য। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিগত দুই বছর ভার্চুয়ালি প্রভাতফেরীর অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলেও এবার পুনরায় লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে সশরীরে প্রভাতফেরী অনুষ্ঠিত হয়।

You might also like