লালমনিরহাট ও মুরাদনগরের মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং নিহত ও ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে নির্মূল কমিটি
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লালমনিরহাটঃ আজ ৫ নবেম্বর একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অজুহাতে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাম্প্রতিক উত্থান এবং এ বিষয়ে সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয় সম্পর্কে এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে। নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের পরিচালনায় সংগঠনের লালমনিরহাট শাখার সভাপতি সমাজকর্মী ময়নুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবিনারে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক,নিরাপত্ত বিশ্লেষক ও কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অবঃ), কেন্দ্রীয় সদস্য শহীদসন্তান কথাশিল্পী মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মওলানা জিয়াউল হাসান, নির্মূল কমিটি চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব, কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, কেন্দ্রীয় সদস্য
অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, নির্মূল কমিটির সুইজারল্যান্ড শাখার সভাপতি সমাজকর্মী রহমান খলিলুর, ফিনল্যান্ড শাখার আহ্বায়ক সমাজকর্মী মুজিবুর দফতরী, ফ্রান্স শাখার আহ্বায়ক চলচ্চিত্রনির্মাতা প্রকাশ রায়, অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি মানবাধিকারকর্মী একরাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, রংপুর শাখার সভাপতি ডাঃ মফিজুল ইসলাম মান্টু, কুড়িগ্রাম শাখার সভাপতি সংস্কৃতিকর্মী জ্যোতি আহমদ, যশোর শাখার সভাপতি সমাজকর্মী হারুণ অর রশীদ, দিনাজপুর শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ সাইফুদ্দিন আখতার, নীলফামারী শাখার সভাপতি শিক্ষাবিদ মমতাজ উদ্দিন, কুমিল্লা শাখার আহ্বায়ক অধ্যাপক দিলীপ মজুমদার, সিলেট শাখার আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চক্রবর্তী, ঠাকুরগাঁও শাখার সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী সুচরিতা দেব, বগুড়া শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সমাজকর্মী এটিএম রাশেদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী কাজী মুকুল প্রমুখ।
সূচনা বক্তব্যে নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, লালমনিরহাটের পাটগ্রামে কোরান অবমাননার গুজব রটিয়ে শহীদুন্নবী জুয়েলকে পুড়িয়ে হত্যা করা কিংবা কুমিল্লার মুরাদনগরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য ফেসবুকে শেয়ার করার অপরাধে নিরীহ হিন্দুদের উপর হামলা ও গৃহে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন কিংবা নির্বাচনকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভের পর থেকেই জামায়াত-হেফাজত-বিএনপি যখনই কোনো অজুহাত পাচ্ছে কিংবা নিজেরা মিথ্যা অজুহাত সৃষ্টি করে শুধু সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় নয়, তাদের অপছন্দের মানুষদের ওপর হামলা ও হত্যা, গৃহে অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন ও লুণ্ঠন সহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করছে বাংলাদেশে উদারনৈতিক ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য এবং বাংলাদেশকে মোল্লা ওমরের আফগানিস্তান বা জিয়াউল হকের পাকিস্তানের মতো মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র বানাবার জন্য। লালমনিরহাট ও মুরাদনগরের ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং হামলাকারীদের পূর্ব পরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণকে জানাবার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির পাটগ্রামের নিহত শহীদুন্নবী জুয়েলের পরিবার এবং মুরাদনগরে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ভিকটিমদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।
নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মাণিক বলেন, সম্প্রতি মুরাদনগরে সনাতন ধর্মালম্বীদের বাড়িঘর এবং উপসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় প্রশাসন নির্লিপ্ত ভ‚মিকা পালন করেছে, এমনকি হামলাকারীদের মদদ দিয়েছে। বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম পুরুষ কর্মকর্তাদের পায়ের গোড়ালির উপর পোষাক পরা এবং নারী কর্মকর্তাদের হিজাব সহ পায়ের গোড়ালির নিচ পর্যন্ত কাপড় পরার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিষয়টিকে বিচারপতি মানিক ফৌজদারী অপরাধ বলে গণ্য করেছেন। আব্দুর রহিমকে শুধু ও.এস.ডি বা বহিষ্কার করলে হবে না তার ফৌজদারি আইনে বিচার হতে হবে বলে দাবী করেছেন সাবেক এই বিচারপতি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অবঃ) মোহাম্মদ আবদুর রশীদ বলেন, ধর্ম ও ধর্মান্ধতাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী এর ফায়দা লুটছে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তাদেরকে দিয়ে এমন বর্বর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে মৌলবাদী জামায়াত-শিবির চক্র ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছে। যে কারণে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। যে কোনো মূল্যে আমাদের মৌলবাদীদের প্রতিহত করতে হবে।নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা কথাশিল্পী মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা সীমালঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করেন না’ এবং ‘যে একজন ব্যক্তিকে বিনা কারণে হত্যা করল সে যেন পুরো মানবজাতিকে হত্যা করল।’ এই কথাটি পবিত্র কোরানে সবচেয়ে বেশিবার উল্লেখ আছে। অথচ ধর্মান্ধরা ধর্মগ্রন্থ ভাল করে না পড়ে নিরীহ মানুষকে বর্বরভাবে হত্যা করছে।
নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, লালমনিরহাটে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে মৌলবাদীরা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করছে। আজকে যদি একজন মুসলমানকে নির্মমভাবে আগুনে পুড়ে মরতে হয় তাহলে আমাদের দেশের যে সমস্ত সংখ্যালঘুরা আছে তাদের কী অবস্থা হতে পারে তা ভাবাই দুষ্কর।হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, কোরানে কোথাও ইসলাম ও নবীর বিদ্রূপকারীদের জাগতিক শাস্তির বিধানের কথা উল্লেখ করা হয়নি বরং এর জন্য আল্লাহ পাক নিজেই বিদ্রূপকারীদের শাস্তি দেবেন বলে উল্লেখ আছে।নির্মূল কমিটি ফ্রান্স শাখার আহ্বায়ক প্রকাশ রায় বলেন, বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলাম যেভাবে ফ্রান্স বিরোধী আন্দোলন করছে এতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তো ক্ষুণœ হচ্ছেই সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের বিশেষ করে ফ্রান্সে অবস্থানরত প্রবাসীদের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে এবং প্রবাসীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।