শহীদ পরিবারের স্বীকৃতির জন্য ৫১ বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ১১ চা শ্রমিক পরিবার
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ শহীদ পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য ৫১ বছর ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার লালচান্দ চা বাগানের ১১টি চা শ্রমিক পরিবার। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতেও তারা স্বীকৃতি পাননি শহীদ পরিবারের। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি ১১ জন। প্রতি বছর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে তাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে এসে পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করা হয়। কিন্তু ৫১ বছরেও তার স্বীকৃতি মিলেনি।চুনারুঘাট থেকে সংবাদদাতা জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রান্তে নভেম্বর মাসের শেষের দিকে পাক হানাদার বাহিনী উপজেলার লালচান্দ চা বাগানের ১১ যুবককে ধরে নিয়ে যায়। তাদেরকে শায়েস্তাগঞ্জে নিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে পাক সেনারা। ঘাতকদের হাতে নিহতরা হলেন-লালচান্দ চা বাগানের মৃত জগদেব গোয়ালার ছেলে রাজকুমার গোয়ালা, মৃত বিহারী বাউড়ীর ছেলে কৃষ্ণ বাউড়ী, মৃত হরিদাস সাধুর ছেলে লাল সাধু, মৃত বকেশ্বর বাউড়ীর ছেলে দিপক বাউড়ী, মৃত নিতাই বাউড়ীর ছেলে মহাদেব বাউড়ী, মৃত কৃষ্ণ বাউড়ীর ছেলে সুশীল বাউড়ী, মৃত সন্যাশী বাউড়ীর ছেলে লেপু বাউড়ী, মৃত বিহারী রায়ের ছেলে রাজেন্দ্র রায়, তার ভাই গৌরী রায়, কৃষ্ণ বাউড়ীর ছেলে ভূবন বাউড়ী ও আতাব আলীর ছেলে অনু মিয়া।
দেশ স্বাধীনের পর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে লালচান্দ বাগানে একটি স্মৃতি রাখার জন্য শায়েস্তাগঞ্জ থেকে কিছু হাড়গোড় এনে সেখানে কবর দেন। সেই থেকে সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি উঠে। দীর্ঘকাল এ স্থানটি অযতœ আর অবহেলায় পড়েছিল। একই সাথে ১১ শহীদের পরিবার তাদের স্বীকৃতির জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ১৯৯৬ সালে আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির মুখে সেখানে ছোট একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। এটিই এখন তাদের কালের সাক্ষী। এখানে প্রতি বছর বিজয় দিবস আর স্বাধীনতা দিবসে স্থানীয়রা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেও এটিকে বড় পরিসরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কিংবা শহীদ পরিবারের স্বীকৃতির বিষয়ে কোন অগ্রগতি নেই।১১ শহীদের পরিবার প্রশাসন আর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বছরের পর বছর ধর্ণা দিচ্ছে স্বীকৃতির জন্য। কিন্তু দেশ স্বাধীনের সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসেও তারা শহীদ পরিবারের মর্যাদা পাননি। এ আক্ষেপ নিয়ে তাদের পিতা-মাতা বহু আগেই মৃত্যুরবরণ করেছেন। সম্প্রতি চা বাগানের একঝাঁক তরুণ এ স্মৃতিসৌধ পুনঃনির্মাণ এবং তাদের পরিবারের শহীদ স্বীকৃতির জন্য বিভিন্ন স্থানে আবেদন করেছেন। তারা শহীদের পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন। এমনই এক তরুণ রনি ইয়াদব জানান, আমরা চা শ্রমিক আজন্মই আ’লীগের সাথে আছি। কিন্তু আমাদের সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও চা শ্রমিক ১১ পরিবারের স্বীকৃতি পায়নি। এটি আমাদের বড় দুঃখ।রনি জানায়, আমরা তাদের পরিবারের শহীদ স্বীকৃতি এবং তাদের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির দাবি জানাই। শহীদ রাজকুমার গোয়ালার নাতি রনি গোয়ালা বলেন, আমরা তাদের স্বীকৃতির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়াদৌড়ি করেছি। কিন্তু কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি।