শাল্লায় হাওর রক্ষা প্রকল্পঃ পুরোনো বাঁধের মাটি কেটে নির্মিত হচ্ছে নতুন বাঁধ

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় পুরনো বাঁধের মাটি দিয়েই বাঁধ নির্মাণ করছেন পিআইসি কমিটির সদস্যরা। ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজে থাকা স্বার্থান্বেষী চক্র অক্ষত বাঁধ কেটে সেই মাটি দিয়েই নতুনভাবে বাঁধ নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা।
এরপূর্বে হাওর রক্ষা বাঁধ মেরামত প্রকল্প কমিটি গঠনের অনিয়মের বিরুদ্ধে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন শাল্লা উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক রঞ্জিত দাস। তিনি ১, ৪, ৫, ৭, ১৭, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ৩২, ৩৪, ৩৫, ৩৭, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৫১, ৫৩, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৪, ৬৬, ৬৯, ৭৩, ৭৪, ৮৯, ৯১, ৯৪, ৯৫, ৯৬, ৯৭, ৯৮, ৯৯, ১০০, ১০২, ১০৩, ১০৪, ১০৭, ১০৮, ১১০, ১১৩, ১১৪, ১২০ ও ১২৮ নং পিআইসির বিভিন্ন অনিয়মের কথা অভিযোগে তুলে ধরেন।
গত ২৫ জানুয়ারি সরেজমিন ঘুরে শাল্লা থেকে সংবাদদাতা জানান,শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওর উপ-প্রকল্পের ৮৫, ৮৬, ৮৭, ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯১, ৯২, ৯৩, ৯৪ ও ৯৫ নং পিআইসিতে পুরনো বাঁধের মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার কিছু কিছু পিআইসিতে এখনো মাটি ফেলা হয়নি, সামান্য মাটি দিয়ে প্রলেপ দেয়া হচ্ছে। আবার অনেক পিআইসিতে বালু মাটিঁ দিয়ে বাঁধ নির্মাণের সত্যতা পাওয়া গেছে। পুরনো বাঁধের স্লোভের মাটি এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে কেটে বাঁধের উপরে তোলা হচ্ছে। বাঁধের উপর কেটে সমান করে রাখা হয়েছে। দেখলে মনে হয় যেন এটি সদ্য করা নতুন বাঁধ।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, আমরা জানতাম প্রকৃত কৃষকরা স্থান পাবে পিআইসিতে। কিন্তু ৯৪ ও ৯৫ নং বাঁধের কাজ যারা পাইছে তারা প্রকৃত কৃষক না।
৯৫ নং পিআইসির সভাপতি ও ১নং আটগাঁও ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুন আল কাওছার বলেন, মাটি কোঁড়ার বিষয়টি হচ্ছে এই বাঁধে মোট ৫৬৩ মিটার কাজ। এখানে ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমি যখন কাজ করছি, ভুল আমার থাকতেই পারে। কিন্তু আমার জানামতে ১০ কেজি মাটিও নিচ থেকে উপরে উঠেনি। প্রকল্পের সদস্য সচিব বলেন, এভাবে বাঁধের স্লোভের মাটি এনে উপরে তোলাই নিয়ম।
অন্যদিকে ৩৩ নং ফসল রক্ষা বাঁধের প্রথম উদ্বোধন করেন শাল্লা উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দায়সারাভাবে বাঁধের কাজ করছেন পিআইসি কমিটির সদস্যরা। বাঁধের কাছ থেকে তুলছেন মাটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট পিআইসির সভাপতি সুরঞ্জিত সামন্ত বলেন, বাঁধের কাছ থেকে মাটি কাটার বিষয়টি কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। বিগত দ্বাদশ নির্বাচন চলাকালীন সময়ে গাড়ি আনতে পারিনি তাই কাজের এত ধীরগতি।
এ বিষয়ে শাল্লা উপজেলা কৃষকলীগের আহবায়ক ও কাবিটা কমিটির সদস্য রনজিৎ কুমার দাস জানান, যারা প্রকৃত কৃষক তাদেরকে বাদ দিয়ে এবং পিআইসির নীতিমালা না মেনে হাওর রক্ষা বাঁধের কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাওরে যাদের জমি নাই তাদেরকে হাওর রক্ষা বাঁধের দায়িত্ব দিলে কোনভাবেই সুফল আসবে না। তবে ফসলের সুফল বয়ে আনার জন্য প্রকৃত কৃষকদের দিয়ে হাওর রক্ষা বাঁধের নতুন করে কমিটি নির্মাণ করার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে শাল্লা হাওর বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস বলেন, সরকার প্রতি বছরই কৃষকদের ঘাম ঝরাণো বোরো ফসল রক্ষায় শত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু পলিমাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ ও বাঁধের কাছ থেকে মাটি কাটলে সেই বাঁধ কখনো টেকসই হবে না। সামান্য বৃষ্টি হলেই বাঁধ দূর্বল হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী ও কাবিটা কমিটির সদস্য সচিব রিপন আলী বলেন, আমাদের যে জনবল আছে তাদেরকে ১৩১টি পিআইসির দায়িত্ব নিয়ে প্রতিদিন মাঠে কাজ করছেন। কোন পিআইসিতে বালু মাটি ও কালো মাটি দেখলে তা সরিয়ে ফেলতে বলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও কম্পেকশন না করে মাটি ফেলে দেয়া হচ্ছে। যারা পিআইসি নিয়েছে তারা মূলতঃ ঠিকাদার না। তাদের ফিলিং চার্ট দিচ্ছি কিন্তু আমরা না বুঝিয়ে দিলে তারা বুঝতেছে না। পিআইসিদের এজন্যই ভুল ত্রুটিগুলো একটু বেশিই হচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত মাঠে যাচ্ছি। বাঁধে কোন প্রকার অনিয়ম করার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাবিটা কমিটির সভাপতি ও শাল্লার ইউএনও মনজুর আহসান বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধে কোন অনিয়ম করা যাবে না। আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
উল্লেখ্য যে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলায় বোরো ফসল রক্ষায় ১৩১টি বাঁধের ৮৪.৩৯৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ২২.৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ বাস্তবায়ন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন।

You might also like