শেখ রাসেলের জন্মদিন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

একটি শিশুকে চরমতম মানসিক নির্যাতনের পর প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দোতলায় গিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।নিষ্ঠুরতা,প্রতারণা আর হঠকারিতা- এই তো ছিল আমাদের ’৭৫ পরবর্তী শাসকদের চরিত্র।

শেখ রাসেলের আজ জন্মদিন। জাতির পিতার প্রিয় ব্যক্তিত্ব বারট্রান্ড রাসেলের নামে করা হয়েছিল পরিবারটির সর্বকনিষ্ঠ এই সদস্যের নামকরণ। পরিণত বয়সে শেখ রাসেল তার কর্মগুণে বারট্রান্ড রাসেলকে ছাড়িয়ে যেতেন কি যেতেন না, তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। উপসংহার আসবে না কখনই। ঘাতক সেই উপসংহারে পৌঁছানোর সুযোগ আমাদের দেয়নি। অকালেই থেমেছে অপরিণত রাসেলের জীবন। তবে যার বাবার হাত ধরে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ আর যার বোনের কল্যাণে আমরা আগামীর স্বপ্নীল স্বপ্নে বিভোর, সেই শেখ রাসেল আজ আমাদের মাঝে থাকলে যে আমাদের গর্বিত করতেন আর গর্বিত হবার কারণ হতেন, সেই কথা বোধহয় অবলীলায় বলা যায়।

বঙ্গবন্ধুর কত যে প্রিয় ছিলেন শেখ রাসেল, তা বঙ্গবন্ধুর সাথে জাপান সফরে তার ছবিগুলোতে স্পষ্ট। ১৫ আগস্টের রাতে জাতি হিসাবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি জাতির পিতা আর তার পরিবারকে ঘাতকের বুলেট থেকে রক্ষা করতে। মা’র কাছে নিয়ে যাওয়ার মিথ্যা আশ্বাসে ঘাতক তাকে নিয়ে গিয়েছিল বত্রিশের দোতলায়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের শহীদের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজিত হয়েছিল শেখ রাসেলের নামটি। দোতলায় যাওয়ার পথে তাকে মাড়িয়ে যেতে হয়েছিল জাতির পিতার রক্তাক্ত নিথর দেহ।

একবার ভাবুন তো, ঐ অত্তটুকুন শেখ রাসেলকে কিসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল! আশা-হতাশার দোলাচলে এক একটি সেকেন্ড তার কাছে কত সহস্র বছর সম মনে হয়েছিল! শেখ রাসেলের হত্যাকাণ্ডের কথা মনে করলে আমার কাছে ১৫ আগস্ট-পরবর্তী এদেশের শাসক শ্রেণির বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একটি শিশুকে চরমতম মানসিক নির্যাতনের পর প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দোতলায় গিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। নিষ্ঠুরতা, প্রতারণা আর হঠকারিতা- এই তো ছিল আমাদের ’৭৫ পরবর্তী শাসকদের চরিত্র।

১৫ আগস্টের অপরাধের যে ব্যাপ্তি, তার বিচার গুটিকয়েক খুনির ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে কখনই শেষ হয়ে যায় না। এই কয়জন অফিসারই তো শেষ কথা নয়। তাদের সাথে সেদিন যেসব সৈনিক অপারেশনে অংশ নিয়েছিল, তাদের বিচারের কী হবে? কমান্ডিং অফিসারের অন্যায় কমান্ড মানাই অন্যায়, না মানাটা নয়। এই বিতর্কের অবসান হয়ে গিয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালীন সময়েই। আমাদের দেশেও ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় মানবতাবিরোধী এই অপরাধের সংজ্ঞা অনুসরণ করা হয়েছে।

পাশাপাশি ১৫ আগস্টের নেপথ্যের কুশীলবদের বিচারেরই বা কী হবে? শুধুমাত্র মরে গিয়েই কি বেঁচে যাবে মোশতাক-জিয়া-তাহের ঠাকুর- মাহবুব উল আলম চাষী গং।তাছাড়া আমরা কি হলফ করে বলতে পারি সেদিন শেখ রাসেলের হত্যায় যারা অংশ নিয়েছিল সরাসরি, কিংবা যারা ছিল নেপথ্যে, তাদের সবাই কি মৃত্যুবরণ করেছে? তাদের কারও নিঃশ্বাসে কি এখনও কলুষিত হচ্ছে না বাংলার পবিত্র বাতাস।শেখ রাসেলের জন্মদিনে আমাদের ইতিহাস আর এই দেশের পবিত্র বাতাসকে কলঙ্কমুক্ত করার এতটুকু প্রত্যাশা তো আমরা করতেই পারি। ’৭১-এ আমাদের স্লোগান ছিল ‘এরা মানুষ হত্যা করছে, আসুন আমরা পশু হত্যা করি’। তখন তো আমাদের পূর্বসূরীরা পিছিয়ে ছিলেন না, তাহলে আমরা কেন পিছিয়ে?

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল: চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর সদস্য সচিব

You might also like