শ্রীমঙ্গলের রিসোর্টে পর্যটকের রহস্যময় খুনের খুলছে না জট
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ জট খুলছে না মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার রিসোর্টে পর্যটক হত্যাকা-ের। ৩ দিনেও হত্যার কোনো ক্লু উদ্ধার বা পলাতকদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। শুধু খুনের ঘটনার পর রিসোর্ট থেকে ৪ জন পালিয়ে যেতে যে প্রাইভেটকার ব্যবহার করেছিল সেটি ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে জব্দ করা হয়েছে।শ্রীমঙ্গল থেকে সংবাদদাতা জানান, গত ২৭ আগস্ট রোববার রাত ৮টায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার ডলুবাড়ি এলাকার লেমন গার্ডেন রিসোর্ট থেকে শরীফুল ইসলাম (৪১) নামের এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার হাঁটুভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা কামরুজ্জামানের ছেলে। শরীফুল ঢাকার ভাটেরা এলাকার ৪০নং ওয়ার্ডের ফাঁসেরটেকে বসবাস করতেন।
পুলিশ ও রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ২৫ আগস্ট শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে চাঁদপুরের শাহারাস্তি উপজেলার খাসেরবাড়ি গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে নুরুল আমিন রাব্বিসহ অজ্ঞাতনামা আরও মধ্যবয়সী ৩ জন পর্যটক লেমন গার্ডেন রিসোর্টের বৃষ্টি বিলাসের ৫ নং রুমে ওঠেন। পরদিন শনিবার রাত ১১টায় রিসোর্ট ম্যানেজারকে রুম ভাড়া পরিশোধ করে জানান, তাদের দু’জন সঙ্গী রুমে রয়ে গেছেন, রোববার দুপুরে তারা চেক আউট করবেন। এ কথা বলে ওই ৪ জন রিসোর্ট থেকে কৌশলে ড্রাইভার পরিচয়ে একজনকে নিয়ে পালিয়ে যান। রোববার সন্ধ্যায় হোটেল স্টাফ সহিদুল ইসলাম ও রুহান আহমেদ ওই রুমে চেকিংয়ের জন্য গেলে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে তারা জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পান, এক ব্যক্তি রুমের ভেতরে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন এবং রক্তের দাগও রয়েছে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক তারা রিসোর্ট ম্যানেজারকে জানান। পরে হোটেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি শ্রীমঙ্গল থানাকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে পাঠায়।পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৯টার ভেতরে যেকোনো সময় শরীফুলের মাথায় কাঠের বর্গা দিয়ে একাধিকবার আঘাত করে খুন করা হয়। কারণ, নিহত ব্যক্তির মাথা ও মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সে কারণে মুখম-ল একেবারে বিকৃত হয়ে গেছে। তবে এখন পর্যন্ত এ খুনের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া কাউকে আটক করাও সম্ভব হয়নি।
এদিকে, স্থানীয়রা রিসোর্টের কর্মকা- নিয়ে নানা কথাবার্তা বলছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, রিসোর্টটিতে অবাধে অবৈধ ও অনৈতিক কাজ হচ্ছে। প্রশাসন তা দেখেও না দেখার ভান করছে। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে রিসোর্ট কতৃপক্ষকে এরআগে জরিমানাও করা হয়েছে। লেমন গার্ডেন রিসোর্টের মালিকপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলেন না।
একটি সূত্রে জানা গেছে, রিসোর্টে রোববারে খুনের ঘটনার পরদিন সোমবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ জনকে শ্রীমঙ্গল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরমধ্যে একটি ফাইভ স্টার মানের রিসোর্টের ফুড এন্ড ব্যাভারেজ-এ দায়িত্বরত শান্ত ঘোষ, লেমন গার্ডেন রিসোর্টের ম্যানেজার মামুন আহমদ, সিকিউরিটি গার্ড ও ২জন হোটেল বয় রয়েছেন। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত তাঁদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, পলাতক রাব্বি শান্ত ঘোষের পূর্বপরিচিত।শ্রীমঙ্গল থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সর্দার গণমাধ্যমকে বলেন, পালিয়ে যাওয়ার সময় অভিযুক্তদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি ইতোমধ্যে ঢাকার গুলশান থেকে আটক করা হয়েছে। রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।