শ্রীমঙ্গলে অবৈধভাবে কৃষিজমি থেকে সিলিকা বালু উত্তোলন

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় চলছে কোটি টাকার অবৈধ সিলিকা বালুর ব্যবসা। কৃষি জমিতে শ্যালো মেশিন বসিয়ে সিলিকা বালু উত্তোলন করছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের বিরুদ্ধে এ নিয়ে মামলাও রয়েছে। তবুও মামলা অবস্থায় সিলিকা বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। এলাকার ফসলি জমি নষ্ট করে এভাবে বালু তোলায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। একেকটি গর্ত ৫০ থেকে ১৫০ ফুট গভীর হয়। অপকর্মের সাথে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ বাঁধা দিতে সাহস পায় না। বাঁধা দিতে গেলে উল্টো হয়রানি শিকার হতে হয়। এসব চক্র খুবই শক্তিশালী। ৩ ইউনিয়নের ১৪/১৫টি গ্রামের কয়েক শ’ পরিবার ও এলাকাবাসী এদের অপতৎপরতায় ক্ষতির সম্মুখীন। শুধু তাই নয়, একই কারণে তেল-গ্যাস পাইপের জাতীয় গ্রিড লাইনও পড়েছে হুমকির মুখে। যে কোনো সময় বা ভূমিকম্পে এসব এলাকা ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে শ্রীমঙ্গল থেকে সংবাদদাতা জানান, এভাবে সিলিকা বালু তোলায় মাটি নিচের দিকে নামে, তাছাড়া ফসল ভালো হয় না, সবদিকেই ক্ষতি। দিন-রাতে প্রচুর বালুর গাড়ি আসতেছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে, এগুলোর সরকারি কোনো অনুমতি নেই, কোনো লিজ নেই, রাজস্ব নেই। অথচ প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে দিব্যি সিলিকা বালু সরবরাহ হচ্ছে। অবৈধ সিলিকা বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত ফেরদৌস, নানু, কাউছার, ফয়েজ, কবির মোল্লা, দুদু, কদর আলী, আসলামসহ বালু ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন থেকে ভূনবীর ও মির্জাপুর ইউনিয়নে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। পরিবেশের ক্ষয়-ক্ষতি আর নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ায় ওরা এখন আঙুল ফুলে কলা গাছ।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলাতে ২৯টি সিলিকা বালুছড়া ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক হাইকোর্টে এক রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে ইজারা বন্দোবস্ত দিতে স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। পরে ২০১৮ সালে আদালত এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট (ইআইএ) প্রাপ্তিসাপেক্ষে ছড়ার ইজারার অনুমোদন দিতে বলা হয়। ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ২ বছরের জন্য ইজারা সংক্রান্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে শ্রীমঙ্গল উপজেলাতে ২৯টি ছড়ার ইজারা বন্দোবস্ত পান ইজারাদাররা। ওই ২৯টি ছড়ার ইজারাদাররা শুধু ২৫ শতাংশ সিকিউরিটির টাকা জমা দিয়ে পরিবেশ ছাড়পত্র ‘ইআইএ’ সংগ্রহের জটিলতার অজুহাতে দেখিয়ে বিগত ২ বছর রাজস্বের বাকি টাকা জমা না দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। এতে শুধু বিগত ২ বছরে ভ্যাট, ট্যাক্স ও ইজারা মূল্যসহ এই বালুমহাল থেকে ইজারাদাররা ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৪ হাজার ৫৬২ টাকা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। বিগত ২০১৬ সাল থেকে হিসাব করলে সরকার এ খাত থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ অক্টোবর দুপুরে বাংলাদেশ পোস্টের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি তানভীর ইসলাম কাওছারের ওপর হামলা করে তাকে বেদম মারপিট করে। এ সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি হামলার শিকার হন। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে এবং মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন সমরু এভাবে সিলিকা বালু তুলে পরিবেশ, কৃষি ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়কারী আসম সালেহ সোহেল আত্মবিধ্বংসী সিলিকা বালু আহরণে উদ্বেগ প্রকাশ করে তা বন্ধে সরকারের উর্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সন্দ্বীপ তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবো। বিষয়টা আমাদের নজরে এসেছে।
প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কৃষিজমিতে শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে- এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন।
শ্রীমঙ্গলের ইউএনও আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, আমাদের কাছে যে নিউজ ছিল রেগুলার মোবাইল কোর্টে জরিমানা করা হচ্ছে। দরকার হলে আজও মোবাইল কোর্ট পাঠাবো, আইনগত ব্যবস্থা নেব।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে, বিষয়টি দেখছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

You might also like