ন্যাপ নেতা পরিতোষ দেবনাথকে বহিস্কারের প্রতিবাদে ১৪জন কেন্দ্রীয় নেতার বিবৃতি

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ ন্যাপের কেন্দ্রীয় নেতা পরিতোষ দেবনাথের বহিস্কারের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন  পার্টির ১১জন কেন্দ্রীয় নেতা। এক যৌথ প্রতিবাদলিপীতে তাঁরা বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি,গতকাল ০৬ জুন’২১ সমকাল,কালের কণ্ঠ,দেশ রুপান্তর এবং দি এশিয়ান এজ পত্রিকায় সংগ্রামী প্রবীণ ন্যাপ নেতা পরিতোষ দেবনাথকে বহিস্কারের খবর প্রকাশিত হয়েছে। সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অনৈতিকভাবে স্বৈরাচারী কায়দায় বারিধারার একটি বাসার ড্রয়িং রুমে কয়েকজনের সভায় প্রয়াত অবিসংবাদিত নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের অত্যন্ত কাছের মানুষ ন্যাপের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পরিতোষ দেবনাথকে বহিস্কার করা হয়। যারা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন বলে পত্রিকায় নাম প্রকাশিত হয়েছে তাদের মধ্যে ৪ জন ব্যতীত অন্যরা এই সভায় উপস্থিত ছিলেন না। পরে তাদের অনেককে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানানো হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। আমাদের প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্যকে এই সভায় কেন আহবান করা হলো না? ঢাকার ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের ২য় তলায় পার্টি অফিসের পরিবর্তে বারিধারার ড্রয়িং রুমে পার্টির সভা কেন ?’

উল্লেখ্য গত ২০ মে অগণতান্ত্রিক পন্থায় আইভি আহমেদকে কার্যনির্বাহী সভাপতি ঘোষণা করা হয়। ন্যাপ নেতৃবৃন্দ এর তীব্র প্রতিবাদ জানান ।১৯৫৭ সনে প্রতিষ্ঠিত মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী,সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গফফার খান,অধ্যাপক মোজাফফর আহমদসহ লাখো সংগ্রামী নেতা-কর্মিদের সংগঠন ন্যাপ মুদি দোকানের মালিকের মতো যখন খুশি খুললাম,বন্ধ করলাম,কর্মচারী নিয়োগ ও ছাঁটাই করলাম এরকম অবস্থায় চলতে পারে না।ন্যাপ কারো ব্যক্তিগত,পারিবারিক বা উত্তরাধিকারের সম্পত্তি নয়। ন্যাপ গণমানুষের।গত ১০ মে’২১পার্টির কার্যকরী সভাপতি আমিনা আহমেদ রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে পরিতোষ দেবনাথকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ প্রদান করেন এবং যথারীতি ২৪ মে’২১ তিনি রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে নোটিশের জবাব পাঠিয়ে দেন। নোটিশে যেসব প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়েছে মূলত সে সবই পার্টির কাজ।

রাজপথে থেকে গণমানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দেলন ও সংগ্রাম করা ন্যাপের মধ্যে একটি স্বার্থবাদী ও কর্তৃত্ববাদী মহল পছন্দ করেন না । প্রয়াত নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ অসুস্থ হবার পর থেকেই এই মহল পার্টিকে ড্র্যয়িং রুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য ও পার্টির সাইনবোর্ড ব্যবহার করে স্বার্থসিদ্ধি হাসিলের পাঁয়তারা করছেন। পার্টির কোনো সভার সিদ্ধান্ত ছাড়াই এদের মধ্যে একজন নিজেকে কখনো ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কখনো সাধারণ সম্পাদক বলে জাহির করছেন।

পরিতোষ দেবনাথ পিরোজপুর জেলার মঠবাড়ীয়া থানার তুষখালীতে মুক্তিযুদ্ধের কনিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন । স্থানীয় ন্যাপ নেতা সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা সোয়েবুর রহমান গোলদারের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল। পরিতোষ দেবনাথ একাত্তরের উত্তাল মার্চের গণ আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের নবম সাবসেক্টর সুন্দরবনে তিনি তার সিনিয়র বন্ধু ছাত্র ইউনিয়ন নেতা শহিদুল আলম বাদল, মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন আলতাফ, ভাসানী ন্যাপের নেতা শামসুল আলম তালুকদারের সাথে সুন্দরবনে অবস্থান করেন এবং পরে ভারতে চলে যান। কলকাতায় পার্ক সার্কাসের কাছে ৯/সি নাসিরুদ্দিন শাহ রোডে অবস্থিত ন্যাপ অফিসে সম্পৃক্ত থাকেন। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পান। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের উদ্যোগে ন্যাপ নেতৃবৃন্দ এবং সন্তোষ গুপ্তের প্রচেষ্টায় প্রকাশিত ‘নতুন বাংলা’ বিভিন্ন ক্যাম্পে বিতরণ করে জনমত সংগ্রহ করেন। উল্লেখ্য, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ২০১৪ সালের পরিতোষ দেবনাথের প্রতি ‘নতুন বাংলা’ সম্পাদনার দায়িত্ব অর্পণ করেন ।

১৯৬৫ সালে ছাত্রাবস্থায় তৎকালীন ন্যাপ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদর কাছে পরিতোষ দেবনাথের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। সেই সময় থেকেই বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে থেকে জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন । ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পরে তিনি দেড় বছর কারাগারে কাটিয়েছেন । ৬৭ বছর বয়সেও আন্দোলন-সংগ্রামের প্রথম সারিতে থেকে নির্মোহভাবে, সততার সাথে ন্যাপের আদর্শিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত আছেন।

অনেকের অনুরোধ সত্বেও পরিতোষ দেবনাথ ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি- ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর খাতায় নাম লিখিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। সারাদেশে এখনো ন্যাপের অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মী রয়েছেন যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও আমাদের প্রয়াত নেতা আবুল হোসেনের মতো মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট প্রাপ্তির আবেদন করেননি। বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের সে সময়ের কথা, তৎকালীন সমাজ ও চলমান রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর’২০ একটি বেসরকারি চ্যানেলে অতিথি হিসাবে দীর্ঘ ৫১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের কথোপকথনে পরিতোষ দেবনাথ এ কথাগুলোই বলেছেন। চধৎরঃড়ংয উবনহধঃয নামে ইউটিউবে এ অনুষ্ঠানটি দেখা যাবে।

ফলে যারা রাস্তায় মিছিল করতে চান না, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যোগ্য ভূমিকা রাখতে চান না তাদের গাত্রদাহ সৃষ্টি হয়েছে।আমরা দেশের সকল নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি ড্রয়িং রুমে নয় রাজপথে থেকে, মানুষের পাশে থেকে, আন্দোলন-সংগ্রামে থেকে গণতান্ত্রিক ধারায় অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের অনুসৃত ধর্ম কর্ম গণতন্ত্রসহ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সামিল হোন এবং স্বার্থান্বেষী মহলের সকল অশুভ তৎপরতা রুখে দাঁড়ান।উল্লেখিত বিবৃতি প্রদান করেন ন্যাপের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট এনামুল হক, প্রিন্সিপাল রুহুল আমিন, অ্যাডভোকেট এমএ ওহাব, এডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন,উপদেষ্টাম-লীর সদস্য নুর জালাল,এডভোকট নুরুল কবির,এডভোকট মনিরুজ্জামান,কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান খান আলম,নিজামউদ্দিন আহমেদ,সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, হাসান কমরুন,মোস্তফা মাহমুদ,নাসিমা হক রুবী ও ইঞ্জিনিয়ার গোলাম ফারুক ।

You might also like