সংস্কারের জন্য ২ মাস বন্ধ থাকবে কিন ব্রিজ

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ক্বিনব্রিজটির সংস্কার কাজ অবশেষে শুরু করতে যাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। সংস্কার কাজের জন্য আগামী ২ মাস ব্রিজটি পুরোপুরি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে তারা। আগামী ২৫ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্বিনব্রিজ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। বিধায় এই সময়ে বিকল্প রাস্তা/ব্রিজ ব্যবহারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে রেলওয়ে। ২৩ জুলাই রোববার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগের রেলওয়ে প্রকৌশলী জীসান দত্ত।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন এই সেতুর সংস্কার কাজ করছে রেলওয়ে। ক্বিনব্রিজটির মূল কর্তৃপক্ষ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দেখভাল করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। ৩ দপ্তরে কাজ ভাগাভাগি হওয়ায় কিনব্রিজ সংস্কার নিয়ে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ পুরনো। ৩ কর্তৃপক্ষের দায়সারা আচরণে ঝুঁকির মুখে পড়ে ব্রিজটি। শেষ পর্যন্ত সওজের দেয়া বরাদ্দে সংস্কার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজ সংস্কারের জন্য ২ বছরের বেশি সময় আগে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। রেলওয়ে বিভাগের গাফিলতির কারণে কাজ শুরু করতে এতদিন বিলম্ব হয়। কয়েক মাস আগে সংস্কার কাজের জন্য প্রকৌশলী নিয়োগ দিয়েছে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, ২০২০ সালে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় সভায় জরাজীর্ণ কিনব্রিজ সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সেতু সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ৩ সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সওজের পক্ষ থেকে সেতুটি সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সওজ সিলেট অফিস। ওই বছরে জুনে বরাদ্দের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। তবে ২ বছরেও শুরু হয়নি সংস্কার কাজ।সওজের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, কিনব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ে বিভাগের মাধ্যমে। লোহার কাঠামোর কাজে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ বেশি পারদর্শী। তাই কিনব্রিজ সংস্কার ও কিছু মেরামত কাজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে সওজের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে সেতুর সংস্কারকাজ করা উচিত ছিল। কারণ বর্ষাকালে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সংস্কারকাজ ব্যাহত হতে পারে।জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে লোহার কাঠামোর দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি নির্মাণ করেছিল রেলওয়ে বিভাগ। টানা ২ বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল। তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় ‘কিনব্রিজ’। প্রায় ৯ দশক ধরে সচল সেতুটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর ওপর প্রথম সেতু। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট। মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেতুটি ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রথম দফা সংস্কার করেছিল। এরপর আর বড় ধরণের সংস্কার হয়নি।

You might also like