সন্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভা ও গানের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের উদ্যোগে আজ ১৬ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার বিকাল চারটায় শাহবাগে যাদুঘরের সামনের রাস্তায় সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর দাবিতে আলোচনা সভা ও ভাষার গানের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট এস এম এ সবুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য , ডক্টর সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, অধ্যাপক জোবায়দা নাসরিন, সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ,সামছুল আলম জুলফিকার, আবদুল ওয়াহেদ, ও ঐক্য ন্যাপের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট আসাদউল্যা তারেক প্রমুখ।
সভায় ঘোষণা পত্র উপস্থাপন করেন সংগঠনের অন্যতম যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এডভোকেট পারভেজ হাসেম।সভাপতির বক্তব্যে এস এম এ সবুর বলেন, ভাষা ও সংস্কৃতির লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করা হয়েছে, সেই পথে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের হটিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। আজকে জাতীয়ভাবে ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদের তালিকা প্রনয়ন করতে হবে, দেশের সকল অফিস আদালতে বাংলা ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মান্ধ জঙ্গিবাদের রাজনীতি ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে। শিক্ষাকে সার্বজনীন ও বিজ্ঞানমূখী করতে হবে, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক লড়াইয়ে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বৈষম্য মুক্ত স্থিতিশীল চিন্তা ও কৌশল ঠিক করে, ভাষা আন্দোলনের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। ড, সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সর্বস্তের বাংলা ভাষা চালুর দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলন স্ব স্ব ক্ষেত্র থেকে পরিচর্যা করে এগুনো সম্ভব হলে বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে, আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে শক্তিশালী হবো, বাংলাদেশ ও বাংলাভাষা আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা লাভ করবে।
সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ বলেন, আমাদের মাতৃভাষা আন্দোলনের সফলতা হলো বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। আমরা এখন গর্বিত বোধ করি বটে তবে দেশে সকল মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলেই ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদের সম্মানিত করা হবে।সবার শুরুতে ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়, সভা শেষে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে মোমবাতি জ্বালিয়ে ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদের ও স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়, সমাবেশে ভাষার গান পরিবেশন করেন আনন্দন সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সমাবেসের ঘোষনায় বলা হয়, দুই হাজার কিলোমিটার দুরত্বের দুটি ভুখন্ডের দুটি ভিন্ন ভাষার জাতিসত্তাকে ধর্মের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র জন্মের কিছুদিন পর রাষ্ট্রভাষাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। এই ভাষা আন্দোলন ও একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালের রক্তে রঞ্জিত রাজপথ স্বাধীন বাংলাদেশ জন্মের বীজ বপন করেছিল। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র জন্মের কিছু দিনের মধ্যেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রথম মুদ্রা,ডাক টিকিট, পোস্টকার্ড সহ অন্যান্য দাপ্তরিক কাজে ব্যবহৃত কাগজপত্রে উর্দু ও ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করা হয়। পাকিস্তানের বৃহৎ এক জনগোষ্ঠির মাতৃভাষা বাঙলাকে বাদ দেওয়া হয় সর্বত্র। বাঙালী অধ্যুসিত ভুখন্ডে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়া এবং উর্দু ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাঙলা ভাষা রক্ষা ও এর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভাষা আন্দোলনের সূচনা। মূলতঃ ভাষা আন্দোলনই এই ভূখন্ডকে ধর্ম নিরপেক্ষ বাঙালী সংস্কৃতি ভিত্তিক প্রগতিশীল গণমুখী রাজনৈতিক ধারার উত্থান ও বিকাশ ঘটায়। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাঙলা ভাষার নামে একটি নতুন দেশ ‘বাংলাদেশ’ এর অভ্যুদয় ঘটে।
বাঙলা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাষা। এই দেশের কৃষক, শ্রমিক, মুটে মজুর, জেলে, তাঁতীসহ গ্রাম-শহরের অধিকাংশ মানুষ বাঙলা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় কথা বলতে ও লিখতে পারে না। এই দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশে শিক্ষা, অফিস আদালতসহ সর্বত্র বাঙলা ভাষার প্রচলন হবে, কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। বাংলাদেশে অন্ততঃ তিন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে – মূলধারার শিক্ষা, কয়েক ধরনের মাদরাসা বা ধর্মীয় শিক্ষা ও ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষা। বাংলাদেশের মূলধারার শিক্ষায় বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি ইংরেজী ভার্সনের শিক্ষা চালু আছে। মাতৃভাষা বাংলাকে প্রান্তিক করে আরবী, ইংরেজী, ফার্সি, উর্দু নির্ভর বিভিন্ন ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা সমাজে যেমন বৈষম্য সৃষ্টি করছে, তেমনি বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে পারছে না। মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার এবং মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য যে জাতি রক্ত দিয়েছে, লড়াই করে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে, সেই জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষার আগ্রাসনে আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাতৃভাষার অস্তিত্ত হুমকির সম্মুখীন। বাংলাদেশের আদিবাসীদের মাতৃভাষার মধ্যে অন্ততঃ ১৪টি ভাষা বিলুপ্তির মুখোমুখী। বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিশু তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা পায়না। ‘রেংমিটচ্য’ ভাষীর সংখ্যা এখন মাত্র ছয়জন, ‘খাড়িয়া’ ভাষা জানেন মাত্র দুই জন। এই রকম বিলুপ্ত প্রায় ভাষা রক্ষার কোন কার্যকর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেই।
ফেব্রুয়ারি কিংবা একুশ এলেই বাংলাদেশে ভাষা প্রেম শুরু হয়। শিক্ষা, অফিস, ব্যবসা-বানিজ্য, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড সর্বত্রই বাংলা ভাষা প্রান্তিক। আলোচনা, সভা, সমাবেশে সর্বত্র বাংলা চালুর দাবিতে মুখরিত থাকে সারা দেশ। ফেব্রুয়ারি মাস চলে গেলে সবই চলতে থাকে আগের মতো।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন আজকের এই ভাষার মাসের সমাবেশে থেকে দাবি জানান:
১। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করতে হবে
২। স্কুল পর্যায়ে সব শিশুকে মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদান করতে হবে
৩। সব ধরণের সাইনবোর্ড ও পণ্যের মোড়কে বাংলা ব্যবহার করতে হবে
৪। আদিবাসীদের ভাষা রক্ষার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।