সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে নেওয়ারুন জানলেন ‘তিনি মৃত’!
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ নেওয়ারুন বেগম (৯০। বয়োবৃদ্ধ এই নারী এখনও জীবিত। চলতে-ফিরতে পারেন। অথচ তাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে তার স্থলে অন্য একজনকে বয়স্ক ভাতা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর অভিযোগের ঘটনাটি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায়।
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার দাসেরবাজার ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন কুমার চক্রবর্তী ও ৩নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুর রহমান বয়োবৃদ্ধ নেওয়ারুনকে মৃত দেখিয়ে তার স্থলে বয়স্ক ভাতার কার্ড সমাজসেবা কার্যালয় থেকে অন্য একজনের নামে প্রতিস্থাপন করিয়েছেন। এই অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে ভাতাবঞ্চিত নেওয়ারুন অনাহারে দিনযাপন করছেন। এই ঘটনায় নেওয়ারুন বেগম দাসেরবাজার ইউপি চেয়ারম্যান ও ৩নং ওয়ার্ড সদস্যের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউএনওর বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন।
বড়লেখা থেকে সংবাদদাতা জানান, হতদরিদ্র নেওয়ারুন বেগম উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের পশ্চিম শংকরপুর গ্রামের মৃত রজব আলীর স্ত্রী। ৩ ছেলে-মেয়ে থাকলেও নেওয়ারুন প্রতিবন্ধী ছেলের সংসারে থাকেন। তিনি কয়েক বছর থেকে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে বয়স্ক ভাতা পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু গত একবছর থেকে তিনি কোনো ভাতা পাচ্ছেন না। ভাতা না পাওয়ার কারণ জানতে তিনি সম্প্রতি স্বশরীরে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে হাজির হন। তখন জানতে পারেন তিনি ‘মৃত’। তার স্থলে অন্য একজন ভাতা পাচ্ছেন। দাসেরবাজর ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান তার মৃত্যুর সনদ জমা দিয়ে তার স্থলে অন্য একজনের নাম প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করেন। যার কারণে সংশ্লিষ্টরা নেওয়ারুনের স্থলে অন্য একজনের নাম প্রতিস্থাপন করে তাকে ভাতা দিচ্ছেন। এই ঘটনায় ভাতাবঞ্চিত নেওয়ারুন বেগম দাসেরবাজার ইউপি চেয়ারম্যান ও ৩নং ওয়ার্ড সদস্যের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউএনওর নিকট লিখিত আবেদন করেছেন।
নেওয়ারুন বেগমের ছেলে তাজ উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, আমার আম্মা দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে বয়স্ক ভাতা পেয়ে আসছিলেন। কিন্ত গত একবছর ধরে ভাতা পাচ্ছিলেন না। কারণ জানতে সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারি তাকে মৃত দেখিয়ে তার পরিবর্তে দাসেরবাজার ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন কুমার চক্রবর্তী ও ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রহমান অন্য একজনকে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন। যার কারণে আমার আম্মার ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আমার আম্মা এখনও জীবিত। তিনি এখনও চলতে-ফিরতে পারেন। আমরা এই ঘটনার ন্যায় বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে দাসেরবাজার ইউপির ৩নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুর রহমানের মুঠোফানে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
আর দাসেরবাজার ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন কুমার চক্রবর্তী কল রিসিভ করলেও ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, নেওয়ারুন বেগমের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে ইউএনও মহোদয় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
ইউএনও সুনজিত কুমার চন্দ গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।