সমাবেশের টুকিটাকি

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, সংসদকে বিলুপ্ত করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি গণসমাবেশ করছে। ১৯ নভেম্বর শনিবার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপি’র সিলেটের বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের সাধারণ কার্যক্রম চলার পাশাপাশি নানা অঘটনও ঘটে। এর কিছুটা তুলে ধরা হলো।

নির্ধারিত সময়ের আগেই বিএনপির গণসমাবেশ শুরু
সিলেটে বিএনপি’র গণসমাবেশ নির্ধারিত সময়ের আগেই শুরু হয়ে যায়। কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জেলা ওলামা দলের সভাপতি নুরুল হক। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেনজেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী’র যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখছেন।এর আগে ভোর থেকে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীদের আগমনে ভিড় বাড়তে শুরু করে। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা মানুষ, যারা মাঠের বাইরে বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার ও স্বজনদের বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন, তারা ভোর থেকেই মাঠে আসতে শুরু করেন। সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীরা বিএনপি’র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন।সমাবেশের মঞ্চে দেখা যায়, সারাদেশের ধারাবাহিকতায় সিলেটের গণসমাবেশেও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জন্য একটি চেয়ার খালি রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে সারা দেশে ৬টি বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। এসব সমাবেশে দলীয় চেয়ারপার্সনের সম্মানে একটি চেয়ার খালি রাখা হয়।

ওবায়দুল কাদেরকে পুলিশ রেখে খেলার আমন্ত্রণ মিজানের
আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে পুলিশ ছাড়া খেলতে নামার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দ। বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবাদুল কাদেরের ‘খেলা হবে’ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপি নেতৃবৃন্দ এ আমন্ত্রণ জানান।সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ওবায়দুল কাদের কথায় কথায় বলেন খেলা হবে, খেলা হবে। আমরাও বলতে চাই খেলা হবে। তবে, ‘পুলিশ রেখে খেলতে আসেন। ২ ঘন্টাও টিকতে পারবেন না। বিএনপি খেলতে শুরু করলে দেশে মুজিব কোর্ট পরা কেউ থাকবে না।
যত গর্জে তত বর্ষে নাপ্রচলিত একটা কথা আছে, যত গর্জে তত বর্ষে না। বিএনপি’র সিলেট বিভাগীয় সমাবেশের ক্ষেত্রেও তাই বাস্তব রূপ পেলো। দুপুর পৌণে একটার দিকেও সমাবেশ স্থলে খুব বেশি মানুষ জমায়েত হননি। অথচ সেখানে লাখ লাখ লোকের সমাগম হবে বলে প্রচারণা চালিয়েছিলেন দলটির নেতা-কর্মীরা।সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২ ঘন্টা আগে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে শুরু হয় বিএনপির সিলেট বিভাগীয় মহাসমাবেশ। গত কয়েকদিনের প্রচারণা ধরে নিলে সেখা অন্তত লাখখানেক মানুষ সমবেত হওয়ার কথা। কিন্তু দুপুর একটার দিকেও মাঠের প্রায় অর্ধেক ফাঁকা দেখা যাচ্ছে। আমাদের আলোকচিত্রীদের পাঠানো ছবিতেই মাঠের প্রকৃত চিত্র ওঠে এসেছে।
সিলেটে বিএনপি কর্মীদের হাতের লাঠি দেখে জনমনে আতঙ্ক বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশে অংশ নিতে শুক্রবার বিকেল থেকে নগরিতে লাঠি হাতে শো-ডাউন করতে দেখা গেছে কর্মীদের। শো-ডাউনে অংশ নেয়া প্রায় প্রত্যেকের হাতেই লাঠি দেখা গেছে। এতে সাধারণ নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কারো কারো হাতের লাঠিতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং ধানের শিষও ছিল। ‘প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিয়ে’ লাঠি হাতে সমাবেশে এসেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির একটি মিছিল আসে সমাবেশ স্থলের উদ্দেশ্যে। জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে আসা মিছিলটি নগরির বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ওই মিছিলে প্রায় প্রত্যেকের হাতে বড় বড় লাঠি দেখা গেছে। কারো কারো হাতের লাঠিতে অবশ্য পতাকা ও ধানের শিষের ছিল। এ সময় তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও খালেদ জিয়ার নামে শ্লোগান দেন।

একইভাবে ছাতক-দোয়ারাবাজার আসনের সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী সদস্য কলিম উদ্দিন মিলনের নেতৃত্বে মিছিলেও প্রচুর লাঠি দেখা গেছে। সমাবেশে আসা প্রায় প্রতিটি মিছিলে এমন দৃশ্য দেখা যায়।মিছিলে হরিপুর থেকে আসা শাহাবুদ্দিন বলেন, জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য কষ্ট করতে হলে করবো। প্রয়োজনে একদিন কেন, তিন মাস না খেয়েও আন্দোলন করবো। তবুও এই সরকারের পতন চাই। আমরা খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চাই। তিনি আরও বলেন, আমাদের কেউ বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলে প্রতিহত করতে লাঠি নিয়ে এসেছি। গোয়াইনঘাট থেকে আসা যুবদল কর্মী জয়নাল আহমদ বলেন, চাল-ডালের দাম যে হারে বাড়ছে আমাদের খেয়ে বাঁচা দায়। তাই এই সরকারের পতন ছাড়া কোনো আপোষ হবে না।এদিকে, বিএনপি কর্মীদের লাঠি হাতে মিছিল করতে দেখে নগরির বিভিন্ন এলাকায় কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। চৌহাট্টা এলাকার অধিবাসী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস আতঙ্ক মিশ্রিত কৌতুহলী কন্ঠে জানতে চাইলেন, কিতা ভাই? লাঠিসটা লইয়া মিছিল কিতার? ডান্ডাডান্ডি অইবো না কিতা?দরগা গেইট এলাকার স্কুল শিক্ষক শিহাব শাহেদ বলেন, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি অশান্তিতে রূপ নিক আমরা তা চাইনা। তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব পক্ষকে সিলেটের রাজনৈতিক সম্প্রীতির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আমাদের ঐতিহ্য যাতে বিনষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে সবার সচেতনতা কাম্য। তিনি আরও বলেন, কেউ যদি আমাদের আঘাত করতে আসে তার প্রতিবাদ জানানোর অধিকার আমার আছে।
মাঠে বিএনপি’র হাতাহাতি সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যেই হাতা-হাতিতে লিপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অবশ্য সাময়িক বিশৃঙ্খলা হলেও পরে শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে তা সমাধানও হয়েছে। সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে মাদ্রাসা মাঠে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকাল থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা মাদ্রাসা মাঠে যাচ্ছিলেন।এ সময় পৃথক দু’টি মিছিলকে কেন্দ্র করে দু’গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। শুরু হয় দৌড়াদৌড়ি। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ সময় বিএনপির শীর্ষ নেতারা দুই পক্ষকে শান্ত করেন।

সমাবেশে রেখেই বাড়ি ফিরে যান বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা তখনো চলছিল সিলেটে বিএনপির মহাসমাবেশ। তবে ত্যাগ স্বীকার করে সমাবেশে যোগ দিতে আসা প্রচুর নেতাকর্মী দূপরের পর থেকে সমাবেশস্থল ত্যাগ করতে শুরু করেন। দুপুর দু’টার আগেই তারা যেভাবে দলে দলে সিলেট এসেছিলেন, সেই একভাবে দলে দলে সিলেট ছেড়ে যান। অথচ এ সময় পর্যন্ত দলের প্রধান অতিথিসহ মূল অতিথি বা বক্তারা তাদের বক্তব্য রাখেননি।বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার প্রচুর বিএনপি নেতাকর্মীকে দেখা গেছে। তারা পারাবতে ফিরে যাচ্ছেন নিজের এলাকায়।উল্লেখ্য, বিএনপি যত মানুষের সমাগম ঘটাতে পারবে বলে প্রচারণা চালিয়েছিল, তার সিকিভাগ লোকও মাদ্রাসা সাফেে সমাবেশে উপস্থিত নেই।এদিকে, বিএনপি নেতারা নিজেদের হতাশা ঢাকতে সমাবেশে ৪ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে বলে তখনো প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

মঞ্চে গুণকীর্তনঃ ‘পায়ের নিচে’ জিয়া-তারেক রহমান
বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে মঞ্চে বক্তব্য রাখছেন স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা। সমাবেশে বক্তারা মঞ্চে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে গুণকীর্তন করলেও মাঠে তাঁদের প্ল্যাকার্ড পড়ে আছে কর্মী-সমর্থকদের পায়ের নিচে! বেলা আড়াইটার দিকে সমাবেশ মঞ্চের সামনে এমনটি পরিলক্ষিত হয়েছে। এক সমর্থক তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডে পা দিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন। এছাড়া আরো বিপুল সংখ্যক প্ল্যাকার্ড ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল মিডিয়া মঞ্চের পাশেই। মাঠে স্বেচ্ছাসেবক দল শৃঙ্খলার ভূমিকায় থাকলেও এ বিষয়ে কাউকে যতœশীল হতে দেখা যায়নি। তখন মঞ্চে বক্তৃতা করছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম।সরেজমিন দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন স্থানে এভাবে দলের কর্ণধারদের পোস্টার প্ল্যাকার্ড ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে, যেগুলোতে পা মাড়িয়ে যাচ্ছেন কর্মীরা। কনসার্টের অনুমতি নেয়নি বিএনপিমাদ্রাসার মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২ টায়। সেই গণ সমাবেশের আগের রাতেই হয়ে গেলো কনসার্ট। কিন্তু সমাবেশের আগের রাতে যে কনসার্ট হবে তার জন্য কোনো অনুমতি নেয়নি বিএনপি এমনটাই জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উধ্বর্তন কর্মকর্তা।গণসমাবেশের জন্য কোনো অনুমতি বিএনপি থেকে নেয়া হয়নি। তাঁরা শুধু সমাবেশের বিষয়টি অবগত করেছেন বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সুদীপ দে।
জানা যায়, সিলেটের আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিএনপির মহাসমাবেশ শনিবার দুপুর ১২টায় শুরু হওয়ার কথা। তবে এ সমাবেশ ঘিরে লোকসমাবেশ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে। শুক্রবার সারাদিনে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা- উপজেলা থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা এসেছেন।

সন্ধ্যা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আলিয়া মাঠে জড়ো হন নেতাকর্মীরা। আর মধ্যরাতে সেই সব নেতাকর্মীদের জন্য আয়োজন করা হয় কনসার্টের। রাত পৌনে ১২টার দিকে সমাবেশের মঞ্চে শুরু হয়ে যায় কনসার্ট। বিএনপির শিল্পীরা দেশাত্ববোধক ও তাদের দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করতে থাকেন।তবে সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা, মাদ্রাসার হোস্টেল, পাশে আছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল ও ক্লিনিক। আছে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ফলে সচেতন মহল এ কনসার্টকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন। কেউ কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তার ফেসবুক আইডিতে লেখেন-সিলেটের আলীম সমাজ কি হাতে চুড়ি পরে বসে বিএনপিকে আপনাদের ঈমান লিজ দিয়ে দিচ্ছেন! সিলেটের প্রাচীনতম মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বেহায়াপনায় কি আপনাদের টনক নড়ছে না?বিএনপি কনসার্টের নামে ফাউলামি করছে বলে দাবি করেছেন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাবিন রাজা চৌধুরী। তিনি তার ফেসবুকে লাইভে এসে নিন্দা জানিয়ে বলেন, রাত্রে একটার সময় লাইভে আসা লাগলো বাধ্য হয়ে। জানি আমাকে আমাদের দল বিএনপির বেশিরভাগ মানুষ খারাপ পাবেন। কিন্তু কিছু করার নাই। নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখা লাগছে যে, এইটা কি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে করছেন। দলকে ক্লিন করার জন্য অপারেশন ক্লিন হার্ট করা হয়েছিল। কে বা কাদের বুদ্ধিতে? নাম প্রকাশ না করলাম। বিএনপির সাথে আলাদা একটি সংগঠন ঐক্যজোটে আছে। নাম বলছি না সবাই বুঝে নেবেন। আলিয়া মাদারসার মাঠ। সাইডে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার, পবিত্র মাটি। পবিত্র মাটিতে আমার জন্মের পর থেকে কোনো দিন এখানে কনসার্ট হয়নি। জানি না তার আগে হয়েছিল কি না।
কনসার্টের ব্যাপারে এসএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সুদীপ দে গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি সমাবেশ বা কনসার্টের অনুমতি চায়নি। শুধু আমাদের সমাবেশের বিষয় অবগত করেছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে।
সমাবেশে আসামিদের আনাগোনা
বিএনপির সিলেট বিভাগীয় মহাসমাবেশে বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে সমাবেশ স্থলে আসছেন নেতাকর্মীরা। তবে তাদের মধ্যে বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামিরাও আছেন। এমনকি হত্যা মামলার আসামিও।
সিলেটের প্রায় সবগুলো জেলায় শনিবার ধর্মঘট ডেকেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন। এমনকি সিলেট ছাড়া বিভাগের অপর তিন জেলায় শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে অনিদিষ্টকালের ধর্মঘট। কোন কোন জেলায় আবার দু’দিনের ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে।
আর তাই মঙ্গলবার রাত থেকেই সিলেটমুখী বিএনপি নেতাকর্মীরা। বুধবার রাতে সংখ্যাটা বেড়েছে। তারা নগরিতে তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাসাবাড়ি এবং দলীয় উদ্যোগে ভাড়া করা হোটেল রিসোর্টে উঠেছেন। কেউ কেউ আবার সমাবেশস্থলে তাবু খাটিয়ে অবস্থান করেছেন। মাদ্রাসা মাঠেই তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।এদের মধ্যে বেশ কিছু আলোচিত মামলার আসামিকেও দেখা গেছে সমাবেশ স্থলে। শুক্রবার বিকেলে সিলেটের আলোচিত ছাত্রদল নেতা জিল্লুর হত্যা মামলার আসামি ছাত্রদল সন্ত্রাসী সাহেদ আহমদ চমনসহ অন্য আসামিদের সমাবেশস্থলে প্রবেশ এবং ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।এছাড়াও সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জ থেকে যেসব বিএনপি নেতাকর্মী এসেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি। সমাবেশকে কেন্দ্র করে তারা এখন আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আস্তানা গেড়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র এবং একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী।
সমাবেশস্থলে পকেটমার
সিলেট বিএনপির সমাবেশস্থলের পাশে এক পকেটমারকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে উপস্থিত কর্মী-সমর্থকরা পকেটমারকে পাকড়াও করে গণধোলাই দেন।
শনিবার বেলা পৌনে একটার দিকে সমাবেশস্থলের উত্তর প্রান্তে সিলেট নগরের রিকাবীবাজার চোহাট্টা ভিআইপি রোডে এক কর্মীর পকেট কাটতে গিয়ে ওই পকেটমার ধরা পড়ে। এরআগেও সমাবেশস্থলে কয়েক কর্মী-সমর্থকের মোবাইল চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত উত্তম-মধ্যম দিয়ে চোরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
গণসমাবেশঃ আলিয়ার মাঠে মিলছেনা ইন্টারনেট সংযোগ
সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে। সকাল ১০টা থেকে এই মাঠে কোন মোবাইল অপারেটরের উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা মিলছেনা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নেতাকর্মীসহ সমাবেশে সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা গণমাধ্যম কর্মীরা
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরির জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, লামাবাজারসহ বেশ কিছু এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা আলিয়া মাঠে প্রবেশ করেছেন।
সমাবেশে আসা জনৈক ছাত্রদল নেতা বলেন, ইন্টারনেট সংযোগ না পাওয়ায় অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। পাশাপাশি মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ। তিনি বলেন, এতকিছু বন্ধ করেও জনসাগম ঠেকানো যায়নি।সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা জনৈক সংবাদ কর্মী জানান, সকাল থেকে সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত জায়গায় বসে আছি। হঠাৎ করেই ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সংবাদ পাঠাতে পারছি না।

শাহজালালের (রহ.) মাজার জিয়ারত করলেন মির্জা ফখরুল সিলেট বিভাগীয় মহাসমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেছেন। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মাজারে পৌঁছান এবং জিয়ারত করেন। এর আগে রাত ১০টার দিকে তিনি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান।এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন, নির্বাহী সদস্য ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের সময় ছাত্রলীগের শো-ডাউনসিলেট মহানগরের চৌহাট্টা এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত গণসমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তার বক্তব্য শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ছাত্রলীগের এক মোটর সাইকেল শো-ডাউন অতিক্রম করে চৌহাট্টা এলাকা। ২০ থেকে ২৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে ছাত্রলীগ নেতারা এতে অংশ নেন। ছাত্রলীগ নেতা রাহেল সিরাজের নেতৃত্বে এ শো-ডাউনটি বন্দরবাজার থেকে চৌহাট্টা হয়ে খাসদবীর গিয়ে শেষ হয়।এ সময় পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

You might also like