সমাবেশে সিপিবির নেতারা প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দিন

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারা। শুক্রবার (০৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ঢাকা সমাবেশ’ থেকে এ আহ্বান নেতারা।জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা ও নিহত-আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা, বাজার ব্যবস্থার সংস্কারসহ বেশ কয়েকটি লক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম।সভাপতির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম বলেন, সরকারের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে এরইমধ্যে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। সংস্কার আগে, না নির্বাচন আগে, এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। সংস্কার ও নির্বাচন সাংঘর্ষিক নয়, এটি পরস্পরের পরিপূরক। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।

তিনি বলেন, আগেও স্বৈরাচারী সরকার বলতো ‘গণতন্ত্র চান, না উন্নয়ন চান?’ কিন্তু দুটো পরস্পরবিরোধী ছিল না। একই গোলকধাঁধায় ঘুরতে থাকলে গণতন্ত্র অভিযাত্রায় যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দেশ সংকটের মধ্যে পড়বে।এই নেতা বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধান ও জাতীয় চার মূলনীতি বাতিলের দাবি এবং জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্ক সামনে এনে জাতীয় ঐক্যের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ভিন্নমত পোষণ করলেই আগের মতো স্বৈরাচারের দোসর বলে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচার, জঙ্গি ও নৈরাজ্যবাদী শক্তির পথকে প্রশস্ত করা হচ্ছে।নয়া যুক্তফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানিয়ে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, শুধু স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের পতন ঘটালে চলবে না, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণঅভ্যুত্থানের জন-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা বদল করতে হবে। সেই লক্ষ্য অর্জনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির বাইরে থাকা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব শক্তি মিলে একটি ‘নয়া যুক্তফ্রন্ট’ গঠন করতে হবে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বলতো উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার। এজন্য ‘শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার’। আর এখন অনেকে বলার চেষ্টা করছেন, ‘বারবার দরকার, সংস্কার পার্টির সরকার’। এটি জনগণ সহ্য করবে না। তাই দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে হবে।তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগের বয়ানের কবর দিতে চাই। কিন্তু যদি কেউ আওয়ামী লীগের কারণে মুক্তিযুদ্ধকে কবর দিতে আসে, তাহলে আমরা আরেকবার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছি।সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তরের কথা কেউ বুঝতে পারছে না। তবে, নানা ধরনের ছলে-বলে-কৌশলে দীর্ঘ দিনদিন ক্ষমতায় থাকার অপচেষ্টা চলছে। এই অপচেষ্টা বাদ দিয়ে জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

তিনি বলেন, এই সরকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে পারেনি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় জনজীবনে সংকট বেড়েছে। পতিত আওয়ামী সরকারের সিন্ডিকেট বহাল রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ হবে না। তাই রাজপথে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পাশাপাশি ক্ষমতা দখলের লড়াই এগিয়ে নিতে হবে।মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে প্রিন্স বলেন, একাত্তরের পরাজিত সাম্প্রদায়িক শক্তি ও ঘাতক চক্র বাহাত্তরের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলতে চায়। কিন্তু একাত্তরকে বাদ দিয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের কথা ভাবার সুযোগ নেই। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের সংগ্রামের পথ ধরে অর্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখতে আমরা আর স্বৈরাচারকে ক্ষমতায় আসতে দেব না, সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিহত করব এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলব। এ জন্য বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।

সিপিবির কেন্দ্রীয় সহকারী সম্পাদক মিহির ঘোষের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তৃতা দেন চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ক্ষেতমুজর নেতা প্রদীপ ভৌমিকের ছেলে সুজন ভৌমিক, পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষক নেতা কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি লাল পতাকা মিছিল রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সমাবেশের শুরুতে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী গণসংগীত পরিবেশন করে।সমাবেশ থেকে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময়, ২০ জানুয়ারি পল্টন হত্যা দিবসে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া শপথ গ্রহণ এবং ২১ থেকে ২৭ জানুয়ারি গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচি ও হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা।

You might also like