সাংবাদিকতায় কারী ইন্ড্রাস্ট্রি ও কভিড’১৯ ইস্যুতে বৃটিশ কারী এওয়ার্ড পেলেন মুহাম্মদ জুবায়ের
নিউজ ডেস্ক সত্যবাণী
লন্ডন: চ্যানেল এস-এর চীফ রিপোর্টার ও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারী মুহাম্মদ জুবায়ের বৃটিশ কারী এওয়ার্ড লাভ করেছেন। ১৬তম এই আয়োজনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কোনো সাংবাদিককে কারী ইন্ড্রাস্ট্রির স্বার্থে মিডিয়ায় অনন্য ভ‚মিকার জন্য এই স্বীকৃতি প্রদান। একই সাথে এই ইন্ড্রাস্ট্রির পাশাপাশি বৃটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটির কভিড নাইনটিন বাস্তবতায় বিশেষ রিপোটিং-এর কথাও উল্লেখ করা হয় অনুষ্ঠানে। বিবিসিখ্যাত সাংবাদিক ও ডকুম্যান্টারী ম্যাকার রাগি ওমর এওয়ার্ড বিজয়ী হিসেবে মুহাম্মদ জুবায়েরের নাম ঘোষনা করেন। এর সঞ্চালক ছিলেন খ্যাতিমান বৃটিশ কমিডিয়ান রোরি ব্রেমনার।
এওয়ার্ডস-এর প্রেজেন্টেশনে বলা হয়, মুহাম্মদ জুবায়ের একজন পরিশ্রমি ও মানবিক বোধ সম্পন্ন সাংবাদিক। তিনি নি:স্বার্থ ভাবে কমিউনিটির কল্যানে সাংবাদিকতার মাধ্যমে অনন্য ভ‚মিকা রাখছেন। তার অনুসন্ধানি ও তথ্য ভিত্তিক রিপোটিং-এর মাধ্যমে বহু বিষয়ে কমিউনিটি আলোকিত হয়। জুবায়েরের রিপোটিং-এ প্রাধান্য পায় এথনিক ও মুসলিম কমিউনিটি। লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের মাধ্যমে ভলেন্টারী কাজেও তার সক্রিয়তা রয়েছে। তিনি ১৭ বছর যাবত ক্লাবের সাথে যুক্ত, বর্তমানে ২য় টার্মের জেনারেল সেক্রেটারী।
এওয়ার্ড-এর নোমিনেশন প্রদাকারী হিসেবে চ্যানেল এস হেড অব প্রোগ্রামস ফারহান মাসুদ খান তার বক্তৃতায় বলেন, সহকর্মী হিসেবে মুহাম্মদ জুবায়েরের নাম প্রস্তাব করে আমি নিজেই গর্বিত। সাংবাদিকতা মানেই শুধু নেতিবাচক চিত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকা নয়,কমিউনিটিকে ধারন করে, ইতিবাচক সাংবাদিকায় আলাদা মেধার পরিচয় দিচ্ছেন তিনি। তার কাছ থেকে আমি নিজেও প্রতিদিন কিছু না কিছু শিখি।
মুহাম্মদ জুবায়ের তার বক্তৃতায় বলেন, আমি ১৫ বছর যাবত বৃটিশ কারী এওয়ার্ডেও প্রায় সবগুলোর ইভেন্ট কভার করেছি। সব সময় আমার অবস্থান ছিলো স্টেজের উল্টো দিকে। বহু এওয়ার্ড বিজয়ীকে নিয়ে বিশেষ রিপোর্ট করেছি। কখোনো ভাবিনা আমিও স্টেজে যাবো, এই এওয়ার্ড পাবো। কিন্তু করোনা বাস্তবতায় আমাকেও মূল্যায়ন করা হলো। আমি অবশ্যই আনন্দিত, তবে কিছুটা অবাকও। ধণ্যবাদ কমিউনিটিতে উচ্চমানের এওয়ার্ড কালচারের প্রবর্তক এনাম আলী এমবিইকে।
কভিড নাইনটিন বাস্তবতায় ১ম বারের মতো ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হলো বৃটিশ কারি এওয়ার্ডস। বিশ্ব কারী ইন্ড্রাস্ট্রির অস্কার পুরস্কার হিসেবে খ্যাত ব্রিটিশ এই অ্যাওয়াডের ১৬-তম ব্যতিক্রমী আয়োজনটি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয় গত ১৭ ডিসেম্বর। জাস্ট ইটের সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো এই অনুষ্ঠানে কোনো একটি রেস্টুরেন্টের খাদ্যমানের স্বাদ ও গুণাগুণ বিচার করে দেয়ার পরিবর্তে ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে এওয়ার্ড তুলে দেয়া হয় বিজয়ীদের হাতে। বিশেষ এওয়ার্ড লাভ করেন শতবর্ষি দবিরুল ইসলাম চৌধুরী ওবিই।
ব্রিটিশ রানী, দেশের প্রধানমন্ত্রী ও লন্ডন মেয়র সাদিক খানসহ বিরোধী দল লেবার পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের প্রশংসায় কুড়ায় কোভিডকালের এই আয়োজন। এতে এমপি- মন্ত্রীর ভাচুয়াল উপন্থিতি ছাড়াও সোসাল ডিসটেনসিং রক্ষা করে অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হন সুপার মডেল কাপরিচ ও লাভ আইল্যান্ড স্টার এমি হার্ট। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার অনেকে সিনিয়র সাংবাদিক অনলাইনে অতিথি হিসেবে যোগদেন।
ওনলাইন এই আয়োজনে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, আমরা সবাই এক কঠিন সময় পার করছি। রেস্টুরেন্ট ইন্ড্রাস্ট্রির জন্য এই সময়টি আরো বেশী চ্যালেনজের। আর ইন্ড্রাস্ট্রির সেইসব কভিড হিরোদের স্বীকৃতি দিচ্ছে বৃটিশ কারী এওয়ার্ড।
এওয়ার্ড ফাউন্ডার এনাম আলি এমবিই বলেন, কোভিডকালের এমন বড় একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সহমর্মিতা ও মানবতার অনন্য নজির তৈরি করা মানুষগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে আমি সত্যিই সম্মানিত বোধ করছি। বয়সে তরুন হলেও আমি সাংবাদিক হিসেবে বৃটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটিতে আলাদা উচ্চতায় দেখি নির্লোভ ও নিরঅহংকারী মুহাম্মদ জুবায়েরকে। কারী ইন্ড্রাস্ট্রিসহ নানা বিষয়ে তার বহু রিপোর্টিং দেখে আমি নিজে সব সময় ভাবতাম এই মানুষটাকে যদি একটু মূল্যায়ন করতে পারি। আজ সেই সুযোগ পেলাম।
উল্লেখ্য মুহাম্মদ জুবায়ের করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং আইসিইউ থেকে কয়েক মাস পর ফিরে আসা মানুষজনের কাহিনী নিয়ে নিউজ রিপোটিং-এর পাশাপাশি চ্যানেল এস-এর মাধ্যমে মিডিয়া প্রডাকশন ভিত্তিক মানবিক কাজেও অনন্যতার পরিচয় দিয়েছেন। কভিড নাইনটিনে ‘ফিড ফাইভ থাউজেন’ নামের প্রজেক্টে কোঅডিনেটর ছিলেন তিনি। যার মাধ্যমে বাংলাদেশে ১৩ হাজার মানুষকে প্রায় ১২৬ হাজার পাউন্ড বাজেটে ফোডপ্যাক প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ‘লাভ ফর এনএইচএস’-প্রজেক্টের মাধ্যমে বৃটিশ হেলথ ওয়ার্কারদের প্রদান করা হয় ১১৫ হাজার পাউন্ড,এই প্রজেক্টেও ফান্ডরেইজিং পার্টনারদের সমন্বয় করেন তিনি। ২০১৯ সালে বহুল প্রশংসিত ‘সেইভ তাফিদা’ ক্যাম্পেইনে কালেকশন ছিলো ১৬০ হাজার পাউন্ড। কমিউনিটি নেতৃবৃন্দকে চ্যানেল এসের মাধ্যমে এক কাতারে এনে এই ক্যাম্পেইন সফলতার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভ‚মিকা ছিলো তার। বৃটেনে চিকিতসা না পাওয়া এবং মেইনস্ট্রিমে বহুল আলোচিত শিশু তাফিদা এখোনো ইটালিতে চিকিৎসা নিচ্ছে।
ইতিমধ্যে প্রেস ক্লাবে নেতৃত্বপূর্ন ভূমিকার জন্য কেনারিওয়ার্ফ-এর এওয়ার্ড লাভ করেছেন জুবায়ের। এছাড়া সানরাইজ টুডে এবং ইস্টউড এওয়ার্ড পেয়েছেন বৃটিশ বাংলাদেশী টিভি নিউজে ‘বেস্ট রিপোর্টিং’-ক্যাটাগরিতে । তালিকাভ‚ক্ত হয়েছেন বৃটিশ বাংলাদেশী পাওয়ার হান্ড্রেডস-এ ২০১৮ সালের নেক্স জেনারেশন পাবলিক্যাশন্স-এ।