সাংবাদিক মঞ্জু আহতঃ হামলাকারী চিহ্নিত প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা ছাত্রলীগ-ছাত্রদল ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় চৌহাট্টায় আতংক
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ নগরীতে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।গত সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় চৌহাট্টা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দিগি¦দিক ছুটতে থাকেন সাধারণ মানুষ। ঘটনার সূত্রপাত নিয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে। অন্যদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মঈন উদ্দিন মঞ্জুর উপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওসমানী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি বর্তমানে বাসায় বিশ্রামে আছেন।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদ ও ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ছিল জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের। বিকেল ৫টার দিকে নগরীর চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়। মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কোর্ট পয়েন্ট হয়ে আবার চৌহাট্টায় ফিরে আসে।
অপরদিকে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আলিয়া মাদ্রাসার মাঠ সংলগ্ন শাজালাল (রহ:) এর পিছনের গেইট থেকে একটি মিছিল বের করে জেলা ছাত্রদল। তখন সড়কের দু’দিকে দু’দলের মিছিল দু’দিকে যাচ্ছিলো। এ সময় উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে তা ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ায় রূপ নেয়। এ সময় একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর ছাত্রদল কর্মীরা আলিয়া মাদরাসা হোস্টেলের দিকে চলে যায়। পরে ছাত্রলীগ শক্তি সঞ্চয় করে ছাত্রদল নেতাদের ধাওয়া করে। আলিয়া মাদ্রাসার হোস্টেলে প্রবেশ করে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের খুঁজতে থাকে।অন্যদিকে, পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন লন্ডনভিত্তিক চ্যানেল এস এর সিলেটের প্রধান প্রতিবেদক মঈন উদ্দিন মঞ্জু। এ সময় তার উপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরে সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। মঞ্জু হাতে মারাত্মক আঘাত পান। তার উপর হামলা নিয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল পাল্টা পাল্টি একে অন্যের উপর দোষ চাপাচ্ছে।ছাত্রদলের জেলা সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন দাবি করেন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জেলা ছাত্রদলের প্রতিবাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে একটি মিছিল নিয়ে তারা চৌহাট্টার দিকে আসছিলেন। একই সময়ে সড়কের ডিভাইডারের অপর প্রান্ত দিয়ে মোটরসাইকলে নিয়ে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী মিছিল দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন ছাত্রলীগের মিছিল থেকে ঢিল ছুঁড়লে ঘটনার সূত্রপাত হয়। ছাত্রলীগ হামলা চালালে তারা কেবল প্রতিরোধ করেছেন।ছাত্রদল সভাপতি সুমন সাংবাদিক মঞ্জুর উপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদলের সম্পৃক্ত থাকার কথা অস্বীকার করে ছাত্রলীগ কর্মীদের দিকে অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখলেই হামলাকারীর পরিচয় বেরিয়ে আসবে। আমরা সাংবাদিকের উপর হামলার নিন্দা জানাই।
অপরদিকে, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদ ও ছাত্রদল সাধারণ সাইফ মাহমুদ জুয়েলের শাস্তির দাবিতে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ নগরীতে মিছিল বের করে। মিছিল নিয়ে তারা চৌহাট্টায় যাওয়ার পর সেখানে ছাত্রদল নামধারী কয়েকজন সন্ত্রাসী আলিয়া মাদ্রাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ছাত্রলীগ কর্মীরা ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে তারা পালিয়ে যায়।
সাংবাদিক মঈন উদ্দিন মঞ্জুর উপর হামলরা ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে নাঈম আহমদ বলেন, ‘শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক মঞ্জু ভাই আলিয়া মাদ্রাসার ভিতরে হামলার শিকার হন। মাদ্রাসার ভিতর দিয়ে মুলত ছাত্রদল সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গিয়েছিলো। তারাই এই হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেন নাঈম। কোতয়ালী থানার ওসি আলী মাহমুদ জানান, পুলিশ আগ থেকেই ঘটনাস্থলে ছিল। ফলে বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, সাংবাদিক মঈন উদ্দিন মঞ্জুর ওপর ছাত্রলীগ কর্মী হাবিবুর রহমান হাবিব (২৫) হামলা চালিয়েছে মর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। হাবিব এমসি কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী এবং দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কাইমা গ্রামের বাসিন্দা। তার বাড়ির বেশীরভাগ মাদ্রাসা পড়ুয়া বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
এদিকে, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (ইমজা)ও মঞ্জুর ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগের কর্মী বলে দাবি করেছে।সিলেট প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনে নিন্দা সিলেট প্রেসক্লাবঃ ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি, চ্যানেল এস সিলেটের প্রধান প্রতিবেদক মো. মঈন উদ্দিন মনজু’র ওপর হামলার ঘটনায় সিলেট প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ মো. রেনু এক বিবৃতিতে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে একজন সাংবাদিকের ওপর হামলা কোনো অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না। নেতৃবৃন্দ, অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
ইমজাঃ চ্যানেল এস ইউকে সিলেট অফিসের চিফ রিপোর্টার ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েসন (ইমজা) সিলেটের সভাপতি মঈন উদ্দিন মনজুর ক্যামেরা ভাংচুর ও তাকে মারধর করে গুরুতর আহত করার নিন্দা জানিয়েছে ইমজা।সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে বসে ইমজা সদস্যরা এর নিন্দা জানান। সিনিয়র সহ-সভাপতি দিগেন সিংহের সভাপতিত্বে সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এহেন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।ইমজা নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করতে একটি চক্র ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়ে তারা আবারো সেটি প্রমাণ করেছে। এই সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা না হলে সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।ইমজার সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতির ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং দলের মধ্যে লালন করা সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানানো হয়