সাবিনা হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে সমাজে নারীর জন্য ভয়ংকর ব্যক্তিরা লুকিয়ে আছে,সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বেথনাল গ্রীন অ্যান্ড বো আসনের এমপি রুশনারা আলী

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডনঃ কুল শিক্ষিকা সাবিনা নেসার হত্যাকারিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবীতে মারিয়াম সেন্টারের উদ্যোগে আয়োজিত “জাস্টিজ অ্যান্ড সলিডারিটি সাবিনা নেসা” শীর্ষক এক সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমানিত হয়েছে আমাদের সমাজে এমন সব মানুষ লুকিয়ে রয়েছে যারা নারীদের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক। আমাদের রাস্তাঘাট নারিদের জন্য নিরাপদ নয়। তাই নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও পুলিশকে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

২৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে ইস্ট লন্ডন মসজিদের মারিয়াম সেন্টারের তৃতীয় তলার হলরুমে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নিহত সাবিনা নেসার চাচা শাহীন মিয়া, বেথনাল গ্রীন এন্ড আসনের এমপি রুশনারা আলী, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলার মতিনুজ্জামান, টাওয়ার হ্যামলেটস ইন্টারফেইথ ফোরামের চেয়ারম্যান অ্যালেন গ্রীন, ইস্ট লন্ডন মসজিদ এন্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টারের ডাইরেক্টর দেলওয়ার খান ও টেলকো টাওয়ার হ্যামলেটসের অর্গানাইজার ফিল ওয়ারবার্টন। এতে ভার্চূয়ালি বক্তব্য রাখেন মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেনের সেক্রেটারি জেনারেল জারা মুহাম্মদ। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের সিনিয়র ইমাম মুহাম্মদ মাহমুদ। পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কুলসুমা বেগম । সাবিনাকে নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন আয়ান সাঈদ । সমাবেশ পরিচালনা করেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের হেড অব প্রোগ্রামস সুফিয়া আলম।

বক্তারা আরো বলেন, মুসলিম কমিউনিটি এমনিতেই ইসলাম-আতংকের মধ্য দিয়ে দিনযাপন করছে। এমতাবস্থায় সাবিনার মতো একজন উজ্জল নক্ষত্রের নৃশংস হত্যাকাণ্ড আমাদের কমিউনিটিকে ভাবিয়ে তুলেছে । মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য ভীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদেরকে কাজ করতে হবে।সাবিনার চাচা শাহীন মিয়া বলেন, এই দুঃসময়ে কথা বলার মতো কোনো ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা পারিবারিকভাবে বিধ্বস্ত এবং বিপন্ন । সাবিনা নেসার নৃশংস হত্যাকাণ্ডে তাঁর বাবা-মা ও বোনেরা এতটাই ভেঙ্গে পড়েছেন যে, আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলার মতো শক্তিও তারা হারিয়ে ফেলেছেন। তাই পরিবারের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। তিনি বলেন, ঘাতকের হাতে সাবিনার প্রাণহানীর ঘটনা আবার নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে পথেঘাটে নারীর নিরাপত্তার প্রশ্নটি । যুক্তরাজ্যের মতো একটি দেশে নারীদের এই নিরাপত্তাহীনতা আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে । আমরা চাই না, সাবিনার মতো আর কোনো নারীর জীবনে এমন ঘটনা ঘটুক। আমরা চাই না আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক। তিনি আরো বলেন, চাকরিতে দুই বছরের কম সময়েও সে নিজেকে প্রমাণ করেছিলো একজন দক্ষ, বিচক্ষণ ও মেধাবী শিক্ষক হিসেবে। তাঁর সহকর্মী এবং বন্ধুরা আজ এক বাক্যে বলছেন, সাবিনা ছিলেন এক অসাধারণ মানুষ। তার মৃত্যু কেবল পরিবারেই নয়, আশপাশের সর্বত্রই বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করবে।

রুশনারা আলী এমপি বলেন, নারীরা বিভিন্নভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। তারা নিরাপদ নয়। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় বর্তমান আইন যথেষ্ট নয়। তাই যথাযথ আইন প্রনয়নের মাধ্যমে নারিদের নিরাপত্ত নিশ্চিত করতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা কমিউনিটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একযোগে কাজ করবো। নিহত সাবিনার প্রতি আমাদের গভীর শোক-শ্রদ্ধা। তাঁর পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেনা। সাবিনার পরিবার একা নয়, আমরা তাদের সঙ্গে আছি।ডেপুটি মেয়র মতিনুজ্জামান বলেন, একজন কন্যার পিতা হিসেবে বলতে পারি এই কষ্ট ও বেদনা সাবিনার পরিবারের পক্ষে সহ্য করার মতো নয়। সাবিনার সামনে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছিলো। এই হত্যাকাণ্ড তার পরিবারের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, সাবিনা নেসার নৃশংস হত্যাকাণ্ডে পুরো টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলই শোক-স্তব্ধ।

দেলওয়ার খান বলেন, ইসলাম ধর্ম বলে কোনো মানুষ অন্যায়-অত্যাচারের শিকার হয়ে নিহত হলে পরকালে তাঁকে শহীদের মর্যাদা দেয়া হয়। আমরা আশাবাদী, সাবিনা নেসা যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন পরকালে তিনি শহীদ হিসেবেই পনরুজ্জীবিত হবেন।অ্যালান গ্রীন বলেন, সাবিনা নেসার নৃশংস হত্যাকাণ্ডে আমরা বাকরুদ্ধ। প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। পরিবারকে শান্তনা দেয়ার ভাষাও আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তবে আমরা নীরব থাকবো না । নারীদের জন্য নিরাপদ সমাজ গড়তে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবো।

You might also like