সিটি কর্পোরেশন সহ সিলেটের ৫ উপজেলার সব আশ্রয়কেন্দ্রে ছেড়েছে আশ্রিতরা

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সিলেটের ৫ উপজেলার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো এখন ফাঁকা। একজন বানভাসিও নেই এসব কেন্দ্রে। অথচ ক’দিন আগেও উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আর রাজ্যের হতাশা নিয়ে এসব কেন্দ্রে বাস করেছেন শ’ শ’ মানুষ। ফাঁকা সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও।এবার মধ্য জুনে সর্বনাশা বন্যা আঘাত হানে সিলেট ও সুনামগঞ্জে। স্থানীয়ভাবে অবিরাম বৃষ্টির সাথে ভারতের আসাম আর মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল আস্তে আস্তে তা বিভাগের অপর ২ জেলাকেও ভাসিয়ে দেয়। গ্রামের পর গ্রাম, জনপদের পর জনপদ ভেসে যায়।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছুটে এসেছিলেন বানভাসিদের দুর্দশা দেখতে। হেলিকপ্টারে তিনি ঘুরে ঘুরে দেখেছেন সিলেট আর সুনামগঞ্জের বানভাসিদের কঠিন সংগ্রাম।

বন্যার শুরু থেকেই দ্রুত লোকজন ছুটে এসেছেন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। সাড়ে ৬ শ’ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছিলেন প্রায় আড়াই লাখ বানভাসি। নারী-শিশুসহ সব বয়সের মানুষের হাহাকার আর দীর্ঘশ্বাসে ভারি হচ্ছিল বাতাস। আর আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর দেয়ালে দেয়ালে ধাক্কা খেয়েছে আবেগ-অনুভূতি উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে প্রচুর গবাদি পশুকেও রাখতে হয়েছিল।সিলেট সিটি কর্পোরেশন, ৫টি পৌরসভা ও ১৩টি উপজেলা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৬শ’ আশ্রয়কেন্দ্রই একসময় বানভাাসিদের ঘরবাড়িতে পরিণত হয়েছিল। সরকারি ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও প্রচুর চিত্তশীল বিত্তবান তাদের জন্য খাবার নিয়ে ছুটে গেছেন। ছুটে গেছেন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও। সবার চেষ্টায় বানভাসিরা এই দুর্যোগ মোকাবেলার কঠিন যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন।জুনের শেষের দিকে এসে পানি কমতে শুরু করে। বিশেষ করে সুরমা অববাহিকার বিভিন্ন উপজেলা বন্যার পানি থেকে আস্তে আস্তে মুক্ত হওয়া শুরু হয়। সেই সাথে শুরু হয় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়ার পালাও। তারই ধারবাহিকতায় গত দু’দিনে সিলেটের ৫ উপজেলা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র শূণ্য হতে শুরু করে।

মঙ্গলবার বিশ্বনাথ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, সিলেট সদর এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্র শূণ্য হয়।তবে এখনো অপর ৮ উপজেলার অবস্থা কেবল খারাপ নয়, খুব খারাপ। সিলেট জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত বালাগঞ্জের ৬৯ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন ৪৬৩১, বিয়ানীবাজারের ৬৮ আশ্রয়কেন্দ্রে ৫৮৮৬, দক্ষিণ সুরমার ৫৬ আশ্রয়কেন্দ্রে ৪১১৬, ফেঞ্চুগঞ্জের ১৯ আশ্রয়কেন্দ্রে ২৪৬৯, গোলাপগঞ্জের ৩৭ আশ্রয়কেন্দ্রে ২২৮৮, জৈন্তাপুরের ৪ আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯৬, জকিগঞ্জের ৩৫ আশ্রয়কেন্দ্রে ২০২১ ও ওসমানীনগরের ২৯ আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৯৭২ জন বানভাসি অবস্থান করছিলেন। তারা অপেক্ষায়, বানের পানি নামলেই ছুটবেন নিজের ঘরবাড়ি।

You might also like