সিটি স্ক্যান শেষে বাসায় খালেদা জিয়া

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান শেষে গুলশানের বাসা ফিরোজার ফিরেছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) রাত পৌনে ১১টার দিকে খালেদা জিয়াকে বহন করা গাড়িটি বাসায় পৌঁছে।

এর আগে, রাত ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে হাসপাতাল থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা হন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪০মিনিটের দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান খালেদা জিয়া। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গেট বন্ধ করে দেয়। তখন জানতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী জাহিদ আকবর বলেন, ‘অর্ডার আছে, ঢুকতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কেউ ঢুকতে পারবে না।হাসপাতালে বেগম জিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডা. আল মামুন ও গৃহপরিচারিকা ফাতেমা।রাত সোয়া ৯টার দিকে ‘ফিরোজা’ থেকে বের হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী গোল্ডেন কালারের একটি প্রাইভেটকার। গাড়ির পেছনের আসনে বেগুনী রঙের পোশাক পরা খালেদার সঙ্গে আরো এক নারীকে দেখা যায়। গাড়ির সামনের আসনে দেখা যায় তার গৃহকর্মী ফাতেমাকে। সবারই মুখে মাস্ক ছিল।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসা শেষে অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত দুদিনে ম্যাডামের অবস্থা আর বর্তমান অবস্থার রিপোর্ট করেছি। তাতে আমরা দেখেছি, উনার শারীরিক অবস্থা আলহামদুলিল্লাহ ভালো। উনার অক্সিজেন সেচুরেশন ভালো আছে। ব্লাডের রিপোর্টও ভালো আছে। তবে গতকাল রাতে উনার জ্বর ছিল, আজ সকালেও জ্বর ছিল একশর মতো। তবে উনি ভালো আছেন, স্টেবল আছেন।’

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত রোববার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তখন থেকে গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন। তার বাসার আরও কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুরু থেকেই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের দেখভাল করছেন এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক।

এই চিকিৎসক বলেন, ‘কোভিডের পরিভাষায় ম্যাডাম এখন দ্বিতীয় সপ্তাহে আছেন। আর কোভিডের সব বড় সমস্যা হয় দ্বিতীয় সপ্তাহেই। তাই সে বিষয়েও আমরা সতর্ক আছি। আমরা এখন উনার সিটি স্ক্যান করাব।কোথায় রেখে চিকিৎসা করা হবে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক বলেন, ‘কোভিডে বলা যায় না কখন কী অবস্থা হয়। তাই আমরা সিটি স্ক্যান করার পর বলতে পারব উনাকে বাসায় রাখব নাকি কয়েকদিনের জন্য হাসপাতালে নেব। সেটা পরে সিদ্ধান্ত নেব। তবে আমাদের সব প্রস্তুতি আছে। খালেদা জিয়ার মানসিক অবস্থা ভালো আছে। আর উনি নিজেই বলেছেন যে, উনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সেটা ফিল করছেন না। তিনি বলেছেন, টেস্ট না হলে তো কিছু বুঝতামই না। তাতে বলা যায়, উনার মানসিক অবস্থা ভালো আছে।’

কোথায় সিটি স্ক্যান করা হবে জানতে চাইলে ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘কোথায় করব তা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি। সময়মতো আপনাদের জানিয়ে দিব। তবে দ্রুত সময়ের মাঝে করব।২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। তারপর নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় তার কারাজীবন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের আদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ।

অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বছরের বেশি সময় বন্দিজীবন কাটানোর পর চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকের প্রিজন সেলে।গত বছর সারা বিশ্বে মহামারি করোনা ছড়িয়ে পড়লে শর্তসাপেক্ষে সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে জামিন পান খালেদা জিয়া। প্রায় ২৫ মাস (কারাগার ও বিএসএমএমইউ’র প্রিজন সেল) কারাভোগের পর তিনি ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্ত হন। বিএসএমএমইউ প্রিজন সেল থেকে মুক্তির পর গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় অবস্থান করছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।

You might also like