সিলেটের চেহারা অন্যরকমঃ ঈদের আমেজ নেই নগরির রাজপথে

সিলেট অফিস 
সত্যবাণী
এ এক অন্যরকম সিলেট! ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন আগে এমন নগরি একসময় ছিলো অকল্পনীয়। কিন্তু এখন তাই প্রমাণিত বাস্তব। কিনব্রিজের উত্তরপ্রান্ত থেকে শুরু করে আম্বরখানা পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশ একেবারে ফাঁকা। হকার বা ভাসমান ব্যবসায়ীদের কোনো অস্তিত্বই নেই। ব্যবসায়ী ও কাস্টমারদের নেই কোনো হই-হুল্লোড়। চিৎকার-চেঁচামেচিমুক্ত সিলেটের রাজপথ। আর তা সম্ভব হয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)-এর মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সুবাদে।
অথচ ক’’দিন আগেও নগরির চেহারা ছিলো রীতিমতো হতশাজনক। ফুটপাততো বটে, রাস্তার প্রায় অর্ধেকই ছিলো ভাসমান ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং তাদের ক্রেতাদের দখলে। অবস্থা ছিলো এমন, অনেকটা ‘পা ফেলাই দায়’’র মতো। গত প্রায় মাসখানেক থেকে সিসিকের উদ্যোগে তাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে নগরির লালদিঘিরপাড় হকার্স মার্কেটে। প্রায় ৩ হাজার ভাসমান ব্যবসায়ীকে ব্যবসার সুযোগ দেয়া হয়েছে সেখানে।
পবিত্র ঈদ-উল ফিতর মুসলিম উম্মাহর সবচে’ বড় ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে সিলেটসহ সারাদেশে কেনাকাটার ধুম পড়ে গেছে। এই গেলো ঈদ-উল ফিতরের ১০/১২ দিন আগেও দেখা গেছে, সিলেটের রাজপথ বলতে কিছু অবশিষ্ট ছিলো না। সবটাই ছিলো ব্যবসায়ীদের দখলে। এবার চিত্রটা এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিপরীত।
তবে হকার্স সমিতির কিছু নেতা এবং তাদের ঘনিষ্ট কিছু সাধারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এতদিন অপেক্ষায় ছিলেন ঈদের সময়টা এগিয়ে আসার। তাদের ধারণা ছিলো, ঈদের অন্তত ১০/১২ দিন আগে তাদের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কিছুটা নমনীয় হতে পারে। তখন আবার কয়েকদিনের জন্য হলেও রাজপথে তারা ফিরতে পারবেন এবং বাণিজ্যও করতে পারবেন।
তবে তাদের সে আশা পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অন্তত সিসিকের জনসংযোগ শাখার নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, এ ব্যাপারে মেয়র অত্যন্ত কঠোর। কোনো অবস্থাতেই হকার বা ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর রাজপথে বসার সুযোগ দেয়া হবেনা।
সিলেট শহরকে হকার ও যানজট থেকে মুক্ত রাখতে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর অন্যতম প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিলো। সাথে হকারদের পুণর্বাসন। তিনি তা করেছেনও। অবশ্য এ কাজে তিনি সফল, এখনই এমন মন্তব্য করা যাচ্ছেনা। তাদের সেখানে কতদিন ধরে রাখতে পারবেন-এ প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে প্রায় সব মহলে।
সচেতন সিলেটবাসী অবশ্য মনে করেন, এ ব্যাপারে দায়িত্ব আছে নগরবাসীরও। তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে লালদিঘিরপাড়ে যেতে হবে। ওখানে ব্যবসা জমে উঠলে হকার বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আর রাস্তায় নামার চিন্তা করবেনা।
সিসিকের জনসংযোগ শাখার নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রচারণার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে সিসিক।
জনৈক ফল ব্যবসায়ী ও জনৈক কাপড়ের ব্যবসায়ী সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানিয়েছেন, ব্যবসা এখন অর্ধেকেরও কম। কোনো কোনোদিন তারা ‘বউনী’ও করতে পারছেন না। এজন্য তারা হকার্স নেতৃবৃন্দ এবং সিসিক-উভয়কেই দায়ী করছেন।
তাদের মতে, লালদিঘিরপাড় হকার্স মার্কেট অনেকেই চিনেনা। এ ব্যাপারে প্রতিদিন নগরিতে মাইকিং করা দরকার। পাশাপাশি কুদরত উল্লাহ মার্কেট ও কালিঘাটের দিকে রাস্তা করে দিতে হবে। অন্যথায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের না খেয়ে মরতে হবে।

You might also like