সিলেটে দূর্ভোগে লাখ লাখ মানুষ

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ উজানের ঢলে রাতারাতি তলিয়ে গিয়েছিল সিলেট। টানা এক সপ্তাহ পর পানি নামতে শুরু করেছে। নগরেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। নগরে ২৩টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে এখনো ১১টিতে মানুষ রয়েছে। নগরের নিচু এলাকায় এখনো পানি। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ধীরে ধীরে কমছে। তবে কুশিয়ারা অববাহিকার ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের কয়েকটি এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার পানিবন্দী মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যার্তদের। বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থাও নাজুক। বেশি বন্যাপ্রবণ এলাকায় কয়েক হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।গত ১৪ই মে রাত থেকে সিলেটে উজানের পাহাড়ি ঢল নামা শুরু করেছিল। একই সঙ্গে বৃষ্টিপাতও শুরু হয়। ফলে ১৫ই মে সকাল থেকে সিলেটে প্রবল বন্যা দেখা দেয়। প্রথমেই আক্রান্ত হয় সিলেটের জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। এরপর এক রাতেই তলিয়ে যায় সিলেট নগরের সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, কানাইঘাট, আমলসীদ, বিয়ানীবাজারের শেওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি কমলেও এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বিপদসীমার নিচে নেমে এসেছে সিলেটে সুরমার পানি। নগরীর উপশহর ডি ব্লক, সি ব্লক, যতরপুর, কুশিঘাটসহ কয়েকটি এলাকায় পানি রয়েছে। এসব এলাকায় মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, নগরে ১১টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো শতাধিক পরিবার রয়েছে। পানি যেভাবে কমছে সেভাবে কমতে থাকলে আজ-কালের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষ বাড়ি ফিরতে পারবেন। সিলেট নগরে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ স্বাভাবিক করতে কাজ করা হচ্ছে। বন্যাকবলিত ৮০ ভাগ এলাকায় এসব সেবা স্বাভাবিক করা হয়েছে। পানি নেমে গেলে সব এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। কুশিঘাটসহ কয়েকটি এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজন জানিয়েছেন, পানি নামতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। ত্রাণ পাচ্ছেন অপপ্রতুল। এর বাইরে বন্যার পানিতে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সংকট থাকায় মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

নগরীর কুশিঘাট এলাকায় ত্রাণ বিতরণকালে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন জানিয়েছেন, পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে যাতে পানিবাহিত রোগে মানুষ কষ্ট না পায় সে কারণে মহানগর আওয়ামী লীগের তরফ থেকে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর বাইরে স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টিমও কাজ করছে। তিনি জানান, এখনো যারা পানিবন্দী রয়েছে তাদের কাছে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। সিলেট নগরের বাণিজ্যিক এলাকা কাজিরবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নদী তীরবর্তী দোকানগুলো এখনো খোলা সম্ভব হয়নি। তীরের কাছাকাছি দোকানে কোমর পরিমাণ পানি ছিল। এতে তাদের কয়েক কোটি টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে। পানি নামার পর তারা নষ্ট হওয়া মালামাল সরিয়ে নতুন করে দোকান খুলবেন। কাজিরবাজার থেকে পিচেরমুখ পর্যন্ত এলাকায় অর্ধশতাধিক চাল কল রয়েছে। এসব চালকলে পানি উঠে চাল ও ধানের ক্ষতি হয়েছে। চাল কলের মালিকরা জানিয়েছেন, এক রাতে চাল কলগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে মালামাল সরানো সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া বৃষ্টি থাকায় তারা অন্যত্র স্থানান্তর করতে পারেন নি।

এদিকে কানাইঘাট সদরে এখনো পানি রয়েছে। কোমরসমান পানিতে নিমজ্জিত ছিল সদর এলাকা। সুরমার পানি ধীরে ধীরে কমার কারণে পানিও কমছে ধীরে। কানাইঘাটে সুরমা নদীর অন্তত ৮টি স্থানে পানি উপচে ও বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছিল। বিশেষ করে গৌরীপুর, লোভার মুখ, ছড়িপাড়া, দক্ষিণ বাণীগ্রামের তিনটি এলাকায় বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে। এসব এলাকার অন্তত ৫০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। এছাড়া, কুশিয়ারা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে নতুন করে দীঘিরপাড় পূর্ব ও সাতবাঁক এলাকার কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কানাইঘাটে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও রেড ক্রিসেন্টের উদ্যোগে মেডিকেল টিম গতকাল বড়চতুল এলাকার বন্যাকবলিত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে।
জকিগঞ্জেও নামছে বন্যার পানি। তবে কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো এখনো প্লাবিত হয়েছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে বন্যাকবলিত এলাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে। কয়েকশ’ কাঁচা ঘরবাড়ি পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলার আমলসীদ, বেড়ারাই, চিল্লাকান্দি, সুপারকান্দি, বারহাল ইউনিয়নের তিনটি স্থান, বড়বন্দ, মৌলভীরচক, মানিকপুরসহ অন্তত ১০টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ও উপচে পানি ঢুকে। এতে করে বেশিরভাগ এলাকা তলিয়ে যায়। এখন পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগ বেড়েছে। অন্তত ৫ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে।

বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জের নদী তীরবর্তী এলাকায় পানি থাকলেও অনেক স্থানে বন্যার উন্নতি হয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের কয়েকটি এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে কুশিয়ারা নদীর ৫টি স্থানে ডাইক হুমকির মুখে রয়েছে।স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গতকাল দুপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুরে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচে নামলেও এখনো প্লাবিত রয়েছে অনেক এলাকা। উজানের এলাকাগুলোতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগ বেড়েছে।এদিকে বন্যায় আক্রান্ত মানুষের মধ্যে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও ত্রাণ তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সিলেটের সব রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলার সবখানেই ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

You might also like