সিলেটে বিএনপি’র সমাবেশের চিত্র কি ছিল?

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ প্রায় ৫০/৬০ হাজার ধারণ ক্ষমতার সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের বড় একটা অংশই ফাঁকা ছিল। মানুষের স্রোত ছিল তখন মাদ্রাসা মাঠের উল্টো। এ অবস্থায় মঞ্চ থেকে তখন বার বার ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল-‘আপনারা মাঠে আসেন।’ কিন্তু কর্মী-সমর্থকরা তখন উল্টো হাঁটছিলেন। অনেকে বাড়ি ফেরার তাড়ায় মাঠ ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন। তাছাড়া গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত স্থানীয় নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সেলফি তুলতে মঞ্চে ব্যস্ত ছিলেন। অনেকটা ছন্নছাড়া হয়েই বিএনপি’র কর্মী সমর্থকরা মাঠ ছাড়তে থাকেন ।ক’দিন আগেও বিএনপি নেতৃবৃন্দ আশা জাগানিয়া বক্তব্য দিয়েছিলেন, সিলেটের সমাবেশ হবে লোকে-লোকারণ্য। ৪/৫ লাখ লোক সমাগমের কথা বলেছিলেন তারা। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী সিলেটের গণসমাবেশে মানুষের ঢল নামার কথা। কিন্তু গণসমাবেশের দিন তাদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। মাদ্রাসা মাঠে যারা উপস্থিত ছিলেন কেবল তারাই বলতে পারবেন সমাবেশের চিত্রটি কি ছিল। সমাবেশে আশানুরূপ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের না দেখে হতাশ হয়েছেন অনেকেই।সমাবেশটি দুপুর ১২টায় শুরুর কথা থাকলেও মাঠে নেতা-কর্মী টানতে শুরু করা হয় ১ ঘন্টা আগেই। বেলা দেড়টায় যখন সমাবেশ মঞ্চে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অতিথিবৃন্দ। তখনও মাঠের অনেক জায়গাই ফাঁকা ছিল। বেলা বাড়ার সাথে সাথে জনসমাগম বাড়াতো দূরের কথা, আস্তে আস্তে কর্মী-সমর্থকরা মাঠ ছাড়তে শুরু করেন।
উপস্থিত অনেকে মন্তব্য করেন, টাকা দিয়ে সমর্থক আনলে যা হয়, তারা মিছিল নিয়ে এসেছে ঠিকই। এখন ক্ষিধে লেগেছে, তাই সমাবেশস্থল ত্যাগ করে চলে যাচ্ছে।

বিএনপি নেতাদের দাবি ছিল, বিভাগের মধ্যে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এক একজন ১০/১২ হাজার করে নেতা-কর্মী-সমর্থক নিয়ে এসেছেন সমাবেশে।যদিও আগের রাতে সমাবেশস্থলে গণজোয়ার ছিল। রাতে লোকজন ধরে রাখতে মঞ্চে ছিলো গান-বাজনা। তা দেখে অনেকে রাত কাটিয়ে দেন মাঠে। সেসব কর্মী সমর্থকদের বেশিরভাগ ছিলেন বিভিন্ন অঞ্চলের। কিন্তু দিনে সেসব নেতাকর্মীরা ছিলেন অনুপস্থিত। দূর-দূরান্ত থেকে আসা কর্মী-সমর্থকরা রাতে মাঠে সময় কাটালেও ছিলেন ঘুমহীন। তারা রাতে ঘুমাতে পারেন নি মাঠের পাশের তাবুগুলোতে। সেগুলো ছিল দলের এলাকাভিত্তিক প্রভাবশালীদের দখলে। যে কারণে তাবুতে তাদের স্থান হয়নি। আর দিনের অর্ধেকভাগ হতেই ক্লান্ত সেসব নেতা-কর্মী সমাবেশস্থল ত্যাগ করে দলে দলে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা ও নগর বিএনপি নেতৃবৃন্দ ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ব্যস্ত। কর্মী-সমর্থকরা রাতে সমাবেশ মাঠে গানবাজনা দেখে স্থান ত্যাগ করেন। ফলে সেসব নেতা-কর্মীদের মাঠে ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছেন দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। যারা বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগে মাঠে এসেছিলেন, শেষপর্যন্ত তাদের অনেকও মাঠে থাকেননি। এরপরও বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে আসা কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতির কারণে মাঠ অনেকটা সরব ছিল। তবে বিকেল সাড়ে ৪ টায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন মঞ্চে বক্তৃতা দিতে আসেন, তখন মাঠে কিছুটা লোক সমাগম ঘটে। উপস্থিত অনেকে তখন বলাবলি করছিলেন, ‘যেভাবে গর্জে, সেভাবে বর্ষে না।’ বিএনপি’র সমাবেশ ফ্লপ করেছে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা ৪/৫ লাখ মানুষের উপস্থিতির আশা করলেও সেখানে লোক সমাগম ৫০ হাজারও হল না। এদিকে, নগরির মোড়ে মোড়ে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকলেও নেতা-কর্মী সমর্থকদের আসা-যাওয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে দেখা যায়নি। অনেকটা নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া বিএনপি’র সমাবেশ থেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় সতর্ক ছিল ক্ষমতাসীন আ’লীগ পরিবারও। জেলা ও নগর আ’লীগ ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা দুপুর থেকেই নগরির তালতলাস্থ গুলশান সেন্টারে অবস্থান করছিলেন।

You might also like